Ameen Qudir

Published:
2016-11-16 18:10:04 BdST

শার্প পেইন , ডাল পেইন


 

 

 

ডা. প্রভাতী দাস রীতু
__________________________

 

জানার কোন শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই-কথাটা একসময় পুরোপুরি বিশ্বাস করতাম। কিন্তু ব্যাপার হলো যে দেশে যে পেশা বেছে নিয়েছি, তাতে না জানার চেষ্টা করারও কোন উপায় নেই। এখানে কয়েকবছর পর পর বিশাল লম্বা-চওড়া পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে নিজের পেশাগত সার্টিফিকেট তো ধরে রাখতে হয়-ই; সাথে প্রাকটিস করার জন্য দুই বছর পর পর স্টেট লাইসেন্স রিনিউ করতে হয়। সেখানেও বেশ অনেক ঘণ্টা সিএমই(CME-Continued Medical Education) করার প্রুফ দিতে হয়। এই সিএমই'র প্রুফ হাসপাতালের এফিলিয়েশন নিতে গেলে না রিনিউ করতে গেলেও লাগে ।

যাই হোক, আজ কে সেসব নিয়ে লিখতে বসিনি। যে বিষয়টি জানতে জানতে খেই হারিয়ে ফেলে এই প্রায় বিশ বছরেও আজো ঠিক জানা হলো না, সেটি হলো কথ্য (বা বলতে পারেন, স্ল্যাং) ভাষায় রোগের বিবরণ। মনে আছে, দেশে অনেক রুগীরাই এসে বলতে শুরু করতেন, এই খানে চিনচিন করে, ওইখানে শিন-শিন করে, রগে টনটন করে, বা মাথা ভনভন করে, বুক ধরফর করে অথবা বুকের মধ্যে খালিখালি লাগে। (আর আমি তো চট্টগ্রামে পড়েছি, সেখানের আঞ্চলিক ভাষার; কোয়াদ্দে, ফোড়াদ্দে...না থাক এ প্রসঙ্গ, জনরোষে পড়বার সম্ভাবনা প্রবল। ) মেডিক্যালে ছাত্রী অবস্থায় হিস্ট্রি লিখতে গিয়ে এগুলোর মেডিকেল পরিভাষা খুঁজে বের করতে গিয়ে হাতপা ছুড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করতো। ক্লাসে শিখেছিলাম, শার্প পেইন, ডাল পেইন, বার্নিং পেইন; চিনচিন-পিনপিন-শিনশিন-খালিখালি, এসবের কোনটিও যে সেগুলো না সেটা স্পষ্ট বুঝতাম, কিন্তু এগুলোকে কী করে বর্ণনা করা!

আমেরিকায় ডাক্তার হবার পর ভাবলাম, বাঁচা গেল! রুগীরা সব ইংরেজিতে কথা বলে, আমার আর ভাবনা চিন্তা করার দরকার হবে না। আমার আশা ছিল, ওরা এসে শার্প পেইন বা ডাল পেইন বলে দেবে। রেসিডেন্সিতে ঢোকার পর টের পেলাম, বিধিবাম! এরাও কনকন বা চিনচিন এর চেয়ে কম যায় না। এসে বলে, ফিলিং উউজি অথবা ফিলিং কুইজি। কী জ্বালা, জানলাম এরা মাথা ঘুরা কে বলে উউজি, বমি বমি লাগা কে কুইজি। বাপদাদার জন্মেও কী এমন ভেবেছিলাম! স্মোক করে কি না জানতে চাইলে বলে, সিগারেট খায় না তবে জয়েন্ট ফোঁকে। জানলাম, জয়েন্ট হলো গাঁজা। এই গাঁজা আরও কত কত নাম, পট, উইড, গ্রাস, আন্ট মেরি, মেরি জেইন। কোকেন হলো, কোক, ফ্লেইক, ক্র্যাক ইত্যাদি ইত্যাদি। 'সুগার ডায়াবেটিস' হলো ডায়াবেটিস। হাই ব্লাড প্রেশার কে বলে 'হাই ব্লাড'। এগুলো খুব দুর্বোধ্য নয়, কিন্তু যদি 'লো ব্লাড' শুনে মনে করেন, লো ব্লাড প্রেশার তাহলেই সমস্যা। লো ব্লাড মানে হলো এনিমিয়া বা রক্ত স্বল্পতা।

আজ আবার নতুন কিছু শিখলাম। এক রুগী বললেন, তার যে অসুখ আছে, সেটি লুপাস(SLE) নয়। তার রোগ হলো, লুপাস বা SLE'র সিস্টার। লুপাসের আবার বোন আছে, আগে আর শুনিনি! তার মেডিক্যাল রেকর্ড ঘাটাঘাটি করে জানলাম তার হচ্ছে শোগ্রিন সিনড্রোম (Sjogren's Syndrome)। আরেকজনের সাথে দেখা আজই হাসপাতালে, তার মূত্রনালিতে ব্লকেজ থেকে থেকে কিডনি ফেইলিউর। ইউরোলোজিষ্ট দেখে যাবার পর আমি গিয়ে কথা বলছিলাম। তাকে আর পুরনো রোগের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি কিছুটা লাজুক মুখে জানালেন, যৌবনে তার একবার 'ক্ল্যাপ' হয়েছিল। আমি 'ক্ল্যাপ' কী চিনতে পারিনি, গুগল সার্চ করে বের করলাম।( সেটি কি, দেখে নিতে পারেন উৎসাহী রা।)

সেই থেকে ভাবছি, 'জানার কোন শেষ নাই, জানার চেষ্টা চালিয়ে যাই'; অন্তত পেশাগত জীবনে।

_____________________

 

লেখক : প্রভাতী দাস রীতু , প্রবাসী সুলেখক ।
Nephrologist at Nephrologist
Former Post-Doctoral Fellow at Johns Hopkins University
Studies Nephrology and Hypertension at Johns Hopkins University
Studied Internal Medicine at Wayne State University
Studied Medicine at Chittagong Medical College

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়