SAHA ANTAR

Published:
2022-01-04 08:16:46 BdST

সরকারী চিকিৎসকদের বদলী ও পদোন্নতির সুষ্ঠু নীতিমালা এবং জুনিয়র ডাক্তারদের ক্যারিয়ার প্লানিং


সরকারী চিকিৎসকদের জন্য
বদলী ও পদোন্নতির সুষ্ঠ নীতিমালা এবং জুনিয়র ডাক্তারদের ক্যারিয়ার প্লানিং-এর উপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন করা সময়ের দাবী।।

ডা আজাদ হাসান

________________

বাংলাদেশে সরকারী- বেসরকারী হাসপাতালে তথা সমগ্র দেশে স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থাপনায় দারুন বিশৃঙ্খলতা বিরাজমান।
আর এক্ষেত্রে বিরাজমান অব্যবস্থার জন্য ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ঢালাও ভাবে অভিযোগ উত্থাপিত হয়ে থাকে কিন্তু প্রকৃত পক্ষে দায়ভারটা কার? এজন্য আসলে কোনো একটি ফ্যাক্টরকে এককভাবে রেস্পন্সিবল বলা ঠিক হবে না। বিষয়টি ব্যাখা করছি।

একটা সেবা খাতে কেবল একটা পেশার জনবলই থাকে না বরং বিভিন্ন পেশার সমন্বিত কর্মযজ্ঞের সম্মিলিত ফলাফলের উপর বস্তুত ঐ সার্ভিসের আউটকাম নির্ভর করে থাকে। আর এই সত্যটা সরকারের নীতি নির্ধারকেরাও জানেন ঠিকই কিন্তু তারা এক্ষেত্র বিরাজমান সমস্যা সংকুল খাত গুলো চিহ্নিত করে সমাধানের পথে হাটছেন না, ফলে প্রতিনিয়ত সমস্যা পুঞ্জিভূত হয়ে পাহাড় সম সমস্যায় পরিণত হচ্ছে।

দুঃখজনক হলেও সত্য যে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক নেতৃত্ব হতে এমন কিছু কথা শুনতে হয়েছে যা সত্যিই হতাশা ব্যঞ্জক।
ডাক্তারদের বিরুদ্ধে একটি কমন অভিযোগ ~
১) ডাক্তাররা গ্রামে থাকতে চান না।
এখন প্রশ্ন হলো ~
ডাক্তাররা কেনো গ্রামে থাকতে চান না?
এবার তাহলে বিষয়টা বিশ্লেষণ করা যাক।
ক) বিশ্বের প্রতিটি দেশেই মেডিক্যাল সাইন্সে সেই দেশের সেরা বা মেধাবী ছাত্ররাই ভর্তি হওয়ার সুযোগ লাভ করে থাকেন। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। স্বভাবতঃই এই সব ছাত্ররা যখন মেডিক্যাল গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী অর্জন করে তখন তাদের ভেতর উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের জন্য, আরো পড়াশুনা করার জন্য অদম্য আগ্রহ কাজ করে। আর এই উচ্চতর মেডিক্যাল শিক্ষা অর্জন ছাড়া যেমন পেশাগত উৎকর্ষতা অর্জন সম্ভব নয়, তেমনি কোনো পদন্নোতি লাভও সম্ভব নয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে স্বাধীনতার আজ ৫০ বছরেও ডাক্তারদের ক্যারিয়ার বিল্ড আপের সরকারী কোনো রোড ম্যাপ আজো গড়ে উঠে নি।

খ) উল্লেখ্য, একমাত্র ডাক্তারী পেশাতেই প্রমোশনের ক্ষেত্রে পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিগ্রীর প্রয়োজন হয়। এ কথা ঠিক সব ডাক্তাররা বিশেষজ্ঞ হবেন না বা সবাই বিশেষজ্ঞ হবেন সেটাও প্রত্যাশিত নয়। কিন্তু পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী ছাড়া ডাক্তারদের ভাগ্য হলোঃ চাকুরীতে "জয়েনিং এজ মেডিক্যাল অফিসার এন্ড রিটায়ারিং এজ মেডিক্যাল অফিসার"। এ রকম উদাহরণ আপনাদের আশে পাশে ভুড়িভড়ি পাওয়া যাবে। একবার ভাবুন তো দেশের এক সময়ের দেশের সব চেয়ে মেধাবী ছাত্রটির জন্য এর চেয়ে ডিজগাস্টিং আর কি হতে পারে?

গ) বর্তমানে সরকার কর্তৃক নব নিযুক্ত সরকারি চিকিৎসকদের জন্য নূন্যতম দু'বছর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কিংবা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চাকুরী করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় সরকারী চাকুরীতে পরবর্তী চাকুরীর ক্ষেত্রে পোস্টিং, বদলী, কোর্সের ক্ষেত্রে ভর্তি কিংবা পদন্নোতি কোনো ক্ষেত্রেই যারা গ্রামে চাকুরী করেন তাদের জন্য কোনো বিশেষ অগ্রাধিকার বা প্রণোদনার ব্যবস্থা নেই। ফলে দেখা যায়
 যাদের মামা-চাচার খুটির জোর আছে কিংবা রাজনৈতিক ভাবে সরকারী দলের আশির্বাদ পুষ্ট তারা অনায়াশে রাজধানী কিংবা বিভাগীয় শহরে সুবিধাজনক স্থানে তাদের পোস্টিং ম্যানেজ করে ফেলেন।
আর যাদের তেমন খুটির জোর নেই তারা ডিউটি ফাঁকি দিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে পিজি'র লাইব্রেরীতে খেয়ে না খেয়ে, রোদে ঝড়ে ভিজেও পড়াশুনা করার চেষ্টা করে, পোস্ট গ্রাজুয়েশন করার জন্য।  আর যাদের সেই সুযোগ নেই তারা মাসের পর মাস, বছরের পর বছর গ্রামে অর্থাৎ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কিংবা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ঘুরপাক খেতে হয়। তাদের জন্য ঐ চক্র থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় নেই, কারণ ~
তাদের পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী নেই,
 তারা কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করতে পারে নি ফলে, তারা কোনো ডিগ্রী অর্জন করতে পারেনি,
 তখন তার গ্রামে চাকুরী করার জন্য তাকে কোনো ক্রেডিট দেয়া হয় না বরং সেটা তখন তার ব্যর্থতা বা অযোগ্যতা হিসেবে সমাজে এবং রাষ্ট্রের কাছে বিবেচিত হয়।

ঘ) এ ক্ষেত্রে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং জেলা সদর হাসপাতালে পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করণ সহ পদ আপগ্রেডেশন করার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ান্তে চিকিৎসকদেরকে উপজেলা হতে জেলা সদর হাসপাতালে বদলীর সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে।

ঙ) যদি গ্রামে চাকুরী করা ডাক্তারদেরকে পোস্ট গ্রাজুয়েশন করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার না হোক অন্তত কোটা থাকতো, ক্লিনিক্যাল সাবজেক্টে না হলেও নন- ক্লিনিক্যাল সাবজেক্টস অথবা অ্যাডমিনিস্ট্রেশন -এ অগ্রাধিকার দেয়া হতো, তা হলো ডাক্তাররা এই গ্লানি হতে উদ্ধার পেতেন।

বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক নেতৃত্ব তাদের বক্তৃতায় চিকিৎসকদের ব্যাপারে তাঁদের পেশাগত স্কিল/উৎকর্ষতা সম্বন্ধেও সন্দেহ প্রকাশ করে বলা হয়ে থাকে~
২) "রোগী মারার না রোগী বাঁচানোর ডাক্তার তৈরী হচ্ছে, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে"।

 

তাছাড়া আর একটি বিষয় হলো, তৃতীয় চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের জন্য প্রমোশনের কিংবা প্রণোদনার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে, তাদের ভেতর এক ধরনের অন্তর জ্বালা তথা হতাশা কাজ করে যা তাদেরকে কাজ করতে অনুৎসাহিত করে।

হাসপাতালের সার্বিক সার্ভিসের মানোন্নয়ন করতে এর থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

বস্তুতঃ স্বাস্থ্য খাতের ব্যবস্থাপনা এত ব্যাপক এবং জটিল (কমপ্লেক্স) যে এত অল্প পরিসরে তা সম্পূর্ণ ভাবে আলোচনা করা সম্ভব নয়। আমি কেবল আপনাদের চিন্তার খোরাক দিলাম। তবে যে জন্য এত কথার অবতারণা করলাম, সেটা হলো,
 সব অনিয়ম এবং বিশৃঙ্খলার জন্য যেভাবে ডাক্তারদের অভিযুক্ত করা হয় সেটার জন্য ডাক্তাররা আংশিক দায়ী হলেও শত ভাগ দায়ী নয়। তবে এমন নৈরাজ্য জনক পরিস্হিতিও কারো কাম্য নয়।
 তৃতীয় -চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের বদলী রদ সংক্রান্ত বিধিটি সংশোধন পূর্বক যুগোপযোগী ধারা সংযুক্ত করতে হবে।
 তাই চিকিৎসকদের জন্য বদলী ও পদোন্নতির নীতিমালা প্রনয়ন, ডাক্তারদের ক্যারিয়ার প্লানিং-এর উপযোগী নীতিমালা প্রনয়ন, চিকিৎসকদের পদ সংখ্যা বৃদ্ধি ও পদ আপগ্রডেশনসহ সার্বিক ভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানো আবশ্যক।


ডা আজাদ হাসান


সিওমেক
২১তম ব্যাচ।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়