SAHA ANTAR

Published:
2021-12-05 07:07:09 BdST

৪৪ তম বিসিএস-এ সহকারী সার্জন পদে ১০০ জন চিকিৎসক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসা, কিছু মন্তব্য


 

 


ডা. আজাদ হাসান

____________
৪৪ তম বিসিএস-এ সহকারী সার্জন পদে ১০০ জন চিকিৎসক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।।

প্রশ্ন হলো এই যে ১০০ জন চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হবে, এটা কিসের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হলো?
এটা কি এই জন্য যে, বর্তমানে এমওএইচ-এ ১০০ টি সহকারী সার্জনের পদ শূন্য আছে, তাই ১০০ জন চিকিৎসক নবনিযুক্ত হবেন?
অথবা বিষয়টি কি এমন যে, আগামী এক বছরে ১০০ জন চিকিৎসক পেনশনে যাবেন, তাই ১০০ জন চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হবে।
অথবা বিষয়টি কি এরকম যে সরকারের বাজেটে আর্থিক সীমাবদ্ধতার জন্য চিকিৎসক নিয়োগের সংখ্যার ক্ষেত্রে সীমিত সংখ্যক নিয়োগ করা হচ্ছে।
আমার ধারণা উত্থাপিত প্রশ্নের কোন একটি কারণই এক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয় নাই।
কারণ খুব সাধারণ ভাবেও যদি বিষয়টা বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখা যাবে আমাদের দেশের ৩১ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোকে ৫০ শয্যায়, ১০০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতাল গুলোকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী লোকবল সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয় নাই। আর জেলায় জেলায় মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের মহতী উদ্যোগে যে কত চিকিৎসক পদ সৃষ্টি হয়েছে এবং শূন্য পদ আছে তার সঠিক পরিসংখ্যান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আছে কিনা আর যদি থেকে থাকে তা হলে এত অল্প সংখ্যক নিয়োগ বিরাজমান পরিস্থিতির কতটা উন্নতি করবে তা নিয়ে সংশয় আছে।
এবার পেনশনের বিষয়টি বিশ্লেষণ করা যাক। বিসিএস নিয়োগের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে আগামী ২-৩ বছর সময় লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে ১০ম (১৯৯১-এর ডিসেম্বরে নিয়োগ প্রাপ্ত) এবং একাদশ বিসিএস-এ (১৯৯৩-এর এপ্রিলে) নিয়োগ প্রাপ্ত প্রায় (৫০০+২১০)= ৭১০জন (+) চিকিৎসক বয়স জনিত কারণে পেনশনে চলে যাবেন। তার মানে এই বিষয়টিও সদাশয় সরকারের বিবেচনায় আসে নাই। যদি সুবিবেচনা করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি প্রচার করা হয় তা হলে যে বিষয় গুলো বিবেচনায় নেয়া উচিত তা হলোঃ
১) শূন্য পদের সংখ্যা।
২) আগামী ২-৩ বছরে কতজন চিকিৎসক পেনশনে যাওয়ার কারণে শূন্য পদের সৃষ্টি হবে, তার সংখ্যা।
৩) আগামী ২-৩ বছরে সম্ভাব্য নব সৃষ্ট পদ।
এগুলো বিবেচনায় না নিলে ডাটা বেইজে হিসাব রাখার ডিজিটালাইজেশন এর সুবিধা অধরাই রয়ে যাবে।

সব শেষে যে বিষয়টা বলতে চাই, স্বাস্থ্য খাতে নিয়োগের সময় কেবল সরকারের বাজেট ঘাটতি পরে আর অন্যান্য খাতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কখনো সরকারের বাজেটে ঘাটতি পরে না। যদি বিষয়টি এমন না হতে, তাহলে সব ক্যাডারে সমান সংখ্যক অফিসার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হতো।

হয়তো বলতে পারেন বিগত বছরে স্পেশাল বিসিএস- এর মাধ্যম স্বাস্থ্য খাতে কয়েক হাজার চিকিৎসক নিয়োগ পেয়েছেন। আমি সেটা অস্বীকার করছি না, তবে প্রসংগত আমি বলতে চাই, সেই নিয়োগের ক্ষেত্রে -ও কিন্তু নানান আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় শেষ পর্যন্ত মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রীর প্রতিশ্রুত সংখ্যা হতে সরে আসতে হয়েছে।

আর একটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, সেটা হলো জেলায় জেলায় মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের মহতী উদ্যোগে যে সমস্ত মেডিক্যাল কলেজের নিজস্ব হাসপাতাল এখনো গড়ে উঠে নাই, সে সব মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররা এখন জেলা সদর হাসপাতালে ক্লিনিকেল ক্লাস করে থাকে কিন্তু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং জেলা সদর হাসপাতালের ম্যান পাওয়ার স্ট্রাকচার ভিন্ন হওয়ায় ঐসব ছাত্ররা প্রত্যাশিত ক্লিনিক্যাল ট্রেনিং হতে বঞ্চিত হচ্ছে। সুতরাং এসব মেডিক্যাল হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল ক্লাস সুষ্ঠু ভাবে নেয়ার জন্য সহকারী রেজিস্ট্রার, রেজিস্ট্রার এ পদগুলোতে চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া জরুরী। বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ রইলো।

আসলে বিসিএস-এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতে নব নিয়োগ- এর ক্ষেত্রে অনেক আগের থেকেই চলছে এক ধরনের খাম খেয়ালীপনা, এখনও তার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে ।

উপসংহারঃ
এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে সদাশয় সরকার প্রতি বছর সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ক্যাডারে নিয়মিত ভাবে নবীন চিকিৎসকরা যেনো নব নিয়োগ লাভের সুযোগ পান সেই ভাবে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করবে এমনটাই সংশ্লিষ্ট মহলের সবার প্রত্যাশা।

সিওমেক-২১

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়