Dr.Liakat Ali

Published:
2021-10-08 01:44:16 BdST

বিসিএস স্বাস্থ্যের নিয়োগ পেতে ডা. সুমনার ১৮ বছরের লড়াইয়ে জয়: ততদিনে ডা. অধ্যাপক পিতা মারা গেছেন, ছেলে ভর্তি হয়েছে ঢাকা মেডিকেলে



সংবাদদাতা
__________________

বাংলাদেশের কোন নারীর এমন অসাধারণ অদম্য লড়াই বিরল। বিসিএস স্বাস্থ্যের নিয়োগ পেতে ডা. সুমনা ১৮ বছরের আইনি লড়াই করে অবশেষে জিতেছেন। ততদিনে ত্যাগ কম নয়। ডা. অধ্যাপক পিতা অমল কৃষ্ণ সরকার মারা গেছেন। যে সন্তানকে পেটে রেখে অদম্য সুমনা বিসিএস পরীক্ষায় বসেছিলেন, সেই ছেলে ভর্তি হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজে।
দীর্ঘ ১৮ বছরের যুদ্ধ শেষে ২৩তম বিসিএসে চিকিৎসক হলেন সুমনা সরকার। আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) এক বিজ্ঞপ্তিতে ২৩তম বিশেষ বিসিএসে (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের জন্য সহকারী সার্জন হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে সুমনা সরকারকে।

 

ডাক্তার প্রতিদিন সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিভাগের প্রফেসর ডা সুলতানা আলগিন এক বার্তায় ডা সুমনার এই বিজয়কে অদম্য নারীর অদম্য মহান বিজয় বলে অভিহিত করে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিজয়ীকে।

তিনি বলেন, ডা সুমনার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। তাঁর মুক্তিযোদ্ধা সূর্য সন্তান চিকিৎসক অধ্যক্ষ পিতাকে অমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অভিহিত করা স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের শামিল। ডা সুমনা
সেই রাষ্ট্র বিরোধী চক্রের ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্নভিন্ন করে প্রমাণ করেছেন সত্যের মৃত্যু নেই।
সত্য সদা দেদীপ্যমান।
তাঁর মহান লড়াইকে নত মস্তকে সম্মান জানাই ।

 

চিকিৎসক সুমনা সরকার অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ২৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। সুমনা সরকারের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা অমল কৃষ্ণ সরকারের মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে জটিলতার অভিযোগে পিএসসি সুমনার মৌখিক পরীক্ষা নেয়নি। তবে সুমনা সরকার হাল ছাড়েননি। আইনি লড়াইয়ে জিতেছেন তিনি। দীর্ঘ ১৮ বছর পর আদালতের রায় অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সুমনা সরকারের পরীক্ষা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সুমনা যে ছেলেকে পেটে নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলেন, সেই ছেলে এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। সুমনা সরকারের এই সাফল্য দেখে যেতে পারেননি বাবা ডা অমল কৃষ্ণ সরকার। তিনি ২০১৮ সালে মারা গেছেন। সুমনা বলেন, ‘বাবা আমাকে পরীক্ষা দিতে পরীক্ষার হলে পৌঁছে দিতেন। পরে আইনি লড়াইয়েও পাশে ছিলেন। গত বছর আমার পক্ষে আদালতের রায় পেলাম, তত দিনে বাবা আর বেঁচে নেই।’


সুমনা বর্তমানে চট্টগ্রামের লায়ন্স দাতব্য চক্ষু হাসপাতালে চক্ষু বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত।

২০০০ সালে পিএসসির নেওয়া ২৩তম বিসিএস (বিশেষ) পরীক্ষায় স্বাস্থ্য ক্যাডারের প্রার্থী ছিলেন সুমনা। ওই বছরের মার্চে প্রিলিমিনারি এবং এপ্রিলে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ২০০৩ সালের জুনে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হন। মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে জটিলতার অভিযোগে চূড়ান্ত মৌখিক পরীক্ষা থেকে বাদ পড়েন ।

 

সুমনার শ্বশুরবাড়ি চট্টগ্রামে। সুমনা সরকার বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেন ২০০৯ সালে। ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর মামলার রায় হয়। হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আপিল করে পিএসসি। আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত ২০১৬ সালের ১০ অক্টোবর হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে দেন। পরে গত বছরের ১৯ নভেম্বর আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি হলে পিএসসিকে অসমাপ্ত মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। চলতি বছরের ১ জুন সুমনা সরকার পিএসসির চেয়ারম্যান বরাবর মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। ৩০ জুন পিএসসি সচিবালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) নুর আহমদের সই করা চিঠিতে সুমনাকে জানানো হয়েছে, রায় বাস্তবায়নে সুমনার মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের উদ্যোগ নেয় কমিশন। মৌখিক পরীক্ষার পরই সুমনাকে নিয়োগের সুপারিশ করেছে পিএসসি।

টাঙ্গাইলের বীর মুক্তিযোদ্ধা অমল কৃষ্ণ সরকার স্বাধীনতাযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আবদুল আহাদের সই করা সনদ, ২০০৩ সালের ২১ জুন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাময়িক সনদপত্র, মুক্তিবার্তার নম্বরসহ এই বীর মুক্তিযোদ্ধার সব সনদ সবাইকে দেখিয়েও সুবিচারের জন্য বিচারের দরোজায় ধর্ণার পর ধর্ণা দিয়েছেন সুমনা সরকার।

এসএসসি, এইচএসসির পর প্রথমবারেই স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন সুমনা। বৃত্তির টাকায় পড়াশোনা শেষ করেছেন। সুমনার বাবা এ হাসপাতাল থেকেই উপাধ্যক্ষ হিসেবে অবসর নিয়েছিলেন। সুমনার দাদাও পাকিস্তান আমলের চিকিৎসক ছিলেন। সুমনা সরকার জানালেন, তাঁর স্বামী চিকিৎসক অধ্যাপক প্রবীর কুমার দাশসহ তাঁর এক ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী, সুমনার ছোট বোন (দেশের বাইরে থাকেন), বড় বোনের এক মেয়েসহ পরিবারের অনেকেই চিকিৎসা পেশার সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে এসএসসি পড়ুয়া নিজের ছোট ছেলেকেও সুমনা চিকিৎসক বানাতে চান বলে জানান তিনি।

সুমনা সরকার সমুন্নত মস্তকে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমি মাথা নত করিনি। পিএসসির বর্তমান সিদ্ধান্তে আমি সন্তুষ্ট। আশা করব আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথ জ্যেষ্ঠতা মেনে আমাকে নিয়োগ দেওয়া হবে।’

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়