ডেস্ক
Published:2021-07-14 19:18:51 BdST
সৎ, দক্ষ ও সাহসী সুনামগঞ্জের প্রাক্তন সিভিল সার্জন ডা. আব্দুন নূর আর নেই
ডেস্ক 
_________________
সৎ ও দক্ষ চিকিৎসক ব্যাক্তিত্ব, জবাবদিহিমূলক চিকিৎসা প্রশাসন পরিচালনাকারী প্রশাসক এবং সুনামগঞ্জের প্রাক্তন সিভিল সার্জন ডা. আব্দুন নূর 
আর নেই। 
সুনামগঞ্জের প্রাক্তন সিভিল সার্জন ডা. আব্দুন নূরের প্রয়াণে ডাক্তার প্রতিদিন সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিভাগের প্রফেসর ডা সুলতানা আলগিন গভীর শোক জানান। 
বলেন, তাঁর সম্পর্কে যতই জেনেছি, ততই শ্রদ্ধাবনত হয়েছি। 
তিনি চিকিৎসা প্রশাসন সিভিল সার্জন অফিসকে লোকসেবা প্রতিষ্ঠানে পরিনত করেছিলেন। এটা অনন্য সাধারণ কল্যাণী কাজ। তিনি অমর হয়ে থাকবেন তাঁর কর্মকুশলের জন্য।
বিশিষ্ট চিকিৎসক মোহম্মদ এনায়েত (ঢাডেক-১৯৯৬-৯৭, ২৫ তম বিসিএস ;সহকারী অধ্যাপক)
এক স্মৃতি শ্রদ্ধা এপিটাফ এ লিখেছেন,
সিভিল সার্জন হিসেবে আমি যতজনকে পেয়েছি তন্মধ্যে দুইজন সিভিল সার্জনের অধীনে চাকুরি করে গর্বিত ভাবি। ডা. আব্দুন নূর স্যারকে পেয়েছিলাম সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন হিসেবে। (১৩/৭/২১) ডা. আব্দুন নূর স্যার পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিলেন।
স্যারের তিনটি ঘটনা স্মৃতিচারণ করছি।
১) ডা. আব্দুন নুর স্যার একদা জামালগঞ্জ, সুনামগঞ্জের UHFPO ছিলেন। উক্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি সমন্বয় সভা ছিল সকাল ১০ টায়। ইউএনও সভাপতি ও UHFPO সদস্য সচিব হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। নুর স্যার সেই মোতাবেক চিঠি ইস্যু করেন। ইউএনও মিটিংয়ে আসেননি। বিকাল তিনটায় ইউএনও UHFPO স্যারকে ফোন দিয়ে বলেন 'UHFPO সাহেব মিটিং কি হয়েছে? মিটিংয়ের আগে তো আমাকে ফোন দিলেন না?' নূর স্যার উত্তরে বলেন 'এটা জাতীয় প্রোগ্রাম, আপনাকে সেই মোতাবেক চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। এটা আমার মেয়ের বিয়ে না যে আপনাকে ক্ষণে ক্ষণে মনে করিয়ে দিতে হবে'। ব্যালান্স শেষ না হওয়া পর্যন্ত ইউএনওকে ইচ্ছা মত ঝাড়ছিলেন। এটাই ছিল একজন অফিসারের দক্ষতা ও ব্যক্তিত্ব।
২) আমি হবিগঞ্জ সদর থেকে সুনামগঞ্জ সদরে বদলি হয়ে স্যারের অধীন যোগদান করলাম। স্যার আমার সম্পর্কে আগেই খোঁজ নিয়ে রেখেছিলেন। সব রকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলেন। আমাকে আমার ডেন্টাল টেকনোলজিস্ট সম্পর্কে সচেতন করলেন। বললেন, কয়েকদিন আগে ডেন্টাল বহিঃবিভাগে গিয়ে দেখলাম ডেন্টাল চেয়ারে ধূলার আস্তর জমে আছে। টেকনোলজিস্টকে পরিষ্কারের কথা বলায় উত্তর দিয়েছিল এমএলএসএস না থাকায় পরিষ্কার করা যাচ্ছে না। স্যার তখন রুমের দরজা বন্ধ করে টেকনোলজিস্টকে পরনের টি-শার্ট খুলিয়ে তা দিয়ে পরিষ্কার করালেন। এক ঘটনায় টেকনোলজিস্ট তারের মতো সোজা!
৩) সদরের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিয়মিত রাউন্ড দিতেন। ওয়ার্ডে স্যারের সামনে কোন নার্স কোন এমও সাহেবের নামের সাথে ভাই যুক্ত করে কথা বলেছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক রুমে প্রধান অফিস সহকারীকে (তখন নার্সরাও ৩য় শ্রেণির ছিল) ডেকে জানিয়ে দিলেন 'নার্সিং সুপারভাইজারকে বলবেন সকল নার্সদের জানিয়ে দিতে আমাকে স্যার আর আমার এমওদের ভাই' এটা চলবে না'।
সৎ ও দক্ষ অফিস প্রধানের অধীন চাকুরিতে জবাবদিহিতা বেড়ে যায় তবে সম্মান নিয়ে ও মেরুদণ্ড শক্ত করে দায়িত্ব পালন করা যায়। সুনামগঞ্জ বাসীর দুর্ভাগ্য মাত্র ছয়মাস সিভিল সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালন করে তিনি অবসরে যান। ১/২ বছর থাকতে পারলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাকে সুন্দর রূপ দিতে পারতেন। তার কারণে অফিসের কর্মচারীরা অন্যায় অবৈধ সুবিধা করতে পারেনি। তাই স্যারের অবসরের পর বিদায় সংবর্ধনা পর্যন্ত দেয়ার ইচ্ছা কারও মধ্যে পরিলক্ষিত হয়নি। যিনি তাঁর স্থলাভিষিক্ত হলেন তিনিও ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্বে আগ্রহী হননি বা সেই কর্মচারীদের সিন্ডিকেট ঢুকে গিয়েছিলেন।
আপনার মতামত দিন:

 
                 
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                       