ডেস্ক

Published:
2021-07-05 16:29:08 BdST

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোগী দেখতে যাওয়া ডাক্তারকে জরিমানার ঘটনায় ইউএনওকে প্রত্যাহার


ডেস্ক
_______________

লডকাউনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোগী দেখতে যাওয়া এক চিকিৎসককে জরিমানা করার ঘটনায় সাতকানিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নজরুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ৪ জুলাইমবিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এ কথা বলা হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন-২ শাখার উপসচিব কে. এম. আল-আমীন স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, নিম্নবর্ণিত কর্মকর্তাগণকে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাদের নামের পাশে উল্লিখিত পদে পদায়ন/বদলি করা হলো।

এতে আরও বলা হয়েছে, সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নজরুল ইসলামকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সিনিয় সহকারী সচিব (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হলো। আর হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বেগম ফাতেমা-তুজ-জোহরাকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে পদায়নের লক্ষ্যে ন্যস্ত করা হলো চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে।

 চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, সাতকানিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) নজরুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগ দিতে বলা হয়েছে। তার স্থলে আপাতত দায়িত্ব পালন করবেন এসি ল্যান্ড আল বরিশরুল ইসলাম।

এর আগে শুক্রবার (২ জুলাই) সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় কর্মস্থলে যাওয়ার পথে ডা. ফরহাদ কবিরকে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। তিনি সাতকানিয়া পৌরসভার নাছির ফার্মেসি এবং মক্কা ফার্মেসিতে নিয়মিত চেম্বার করেন। মোটরসাইকেলযোগে সাতকানিয়া পৌর এলাকার চেম্বারে যাওয়ার সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নজরুল ইসলাম তাঁকে এই জরিমানা করেন।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি মিডিয়ার কাছে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমাদের সর্বমহলে যোগাযোগ চলছে, যেভাবেই এটি একটি দুঃখজনক ঘটনা। আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। ঘটনাটি জেলা প্রশাসক, কমিশনার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালকসহ সবাই অবগত আছেন। এ বিষয়ে দ্রুত যুক্তিসঙ্গত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ প্রসঙ্গে জরিমানার শিকার ডা. ফরহাদ কবির গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি পৌরসভার নাছির ফার্মেসি এবং মক্কা ফার্মেসিতে নিয়মিত চেম্বার করি। ঘটনার দিন আমি চেম্বার শেষ করে ফিরছিলাম। ওই সময় একজন ইমার্জেন্সি রোগী আসার বিষয়ে ফোন পেয়ে মাঝপথ থেকে আবার চেম্বারে যাচ্ছিলাম। তখন সাতকানিয়া পৌরসভার কলেজ রোডের মুখে ইউএনও সাহেবের সাথে দেখা হয়। এ সময় তাঁর সাথে থাকা লোকজন সিগন্যাল দিলে আমি মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আমার পরিচয় দিই। ডাক্তার পরিচয় পাওয়ার পর ইউএনও কিছুটা ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন, আপনারা লকডাউন দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেন। আমরা লকডাউন সফল করতে পারি না বলে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। আর এখন আপনারা লকডাউন মানছেন না। এরপর ইউএনওর সাথে থাকা এক লোক আমার কাছ থেকে মোটর সাইকেলের চাবিটি কেড়ে নেয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এক পর্যায়ে ইউএনও জানান, আমাকে দুই হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। কারণ জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, লকডাউনে বের হয়েছেন এজন্য। তখন আমি উনাকে ডাক্তারদের চেম্বারে যাওয়া-আসায় বিধিনিষেধ না থাকার বিষয়ে বলি। এতে আরও বেশি রাগান্বিত হয়ে তিনি বলেন, আমি চাইলে আপনাকে জেল দিতে পারি। তা করলাম না, এক হাজার টাকা জরিমানা দেন।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘উনি যে ডাক্তার সেটা তো আমি বুঝতে পারিনি। উনার সাথে আইডি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং হেলমেট ছিল না।  আমি এক হাজার টাকা জরিমানা করেছি। আইন সবার জন্য সমান। সরকার আইন করেছে আমরা বাস্তবায়ন করছি। তিনি চাইলে আপিল করতে পারেন। মূলত সন্ধ্যা সাতটার পর পাওয়াতে, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও হেলমেট না থাকায় জরিমানা করা হয়েছে।’

এ ঘটনায় ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে পেশাজীবী সংগঠনগুলো। এতে চিকিৎসক হেনস্থাকারী ইউএনও মো. নজরুল ইসলামকে প্রত্যাহার ও শাস্তির দাবি জানানো হয়।পরবর্তীতে এলো এই প্রত্যাহার।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়