ডা মীনাক্ষী শবনম

Published:
2021-05-13 20:17:29 BdST

জীবিত ডাক্তার সবার, মৃত ডাক্তার শুধু পরিবারের একার


সন্তান সহ প্রয়াত এক তরুণ চিকিৎসক। জীবনকালে হাসি মুখে সেবা বিলিয়েছেন যিনি। ফাইল ছবি 

ডা. মীনাক্ষী শবনম
_______________________

বাংলাদেশে একজন ডাক্তার যখন জীবিত থাকেন,তখন সবাই বলেন “ও আমাদের ডাক্তার”
দুঃখজনক হল,যখন সেই ডাক্তার মারা যান,তখন শুধু পরিবারের একা হয়েই মারা যান।
ব্যাখ্যা পরে দেই।

ডাঃ রায়হান ফারুক রানা  সিলেটের মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে নাইট ডিউটিরত অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে (Sudden Cardiac Arrest) ইন্তেকাল করেছে।

আমাদের জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের ১৪-তম ব্যাচের ছাত্র ছিল,ইন্টার্নশিপে সম্ভবত পরবর্তী ১৫ বা ১৬ তম ব্যাচকে পেয়েছিল। জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে আমাদের সাথে এইচএসসি ২০০৭ সালের ব্যাচম্যাট ও ছিল। মোটাসোটা,তরুতাজা প্রায় ৬ ফুটের অধিক লম্বা ছেলেটা ধুম করে মারা গেল !

ওর অবশ্য সবকিছুই ছিল ধুম-ধারাক্কা। কলেজ লাইফে ধুম করে দাঁড়ি রাখল,বিয়েও ঐ রকম হঠাৎ,কথায় কথায় শুনলাম তার বড় ছেলে ও না কী স্কুলে ভর্তি হইছে।যে কোন পরীক্ষার আগে আমরা দশবার পরীক্ষার ফি নিয়ে চিন্তা করি,কিন্তু সে রেজিস্ট্রেশন করে ফেলত ধুমধাম।

গত বছর ঢাকায় সম্ভবত কোন এক পরীক্ষার আগে তুলা ছবি। আমরা পরীক্ষার হল দেখতে বের হয়েছিলাম,সে ভালো মানের খাবারের রেস্টুরেন্ট এর সন্ধানে বের হয়েছিল।আমাদের উদ্বেগ ছিল পরীক্ষার প্রশ্ন নিয়ে,তার চিন্তাভাবনা ছিল ভালো মানের রেস্টুরেন্ট নিয়ে।যেমন ভালো খাবারের আশেক ছিল,তেমনি ভালো মনের মানুষ ও ছিল।ICU ডিউটির সুবাধে,জটিল রুগীকে সিলেট থেকে ঢাকায় পাঠানো লাগলে,সে রোগীর সাথে চলে আসত এ্যাম্বুলেন্স করে।যে কোন রুগীর ব্যাপারে খবরাখবর পাওয়া যেত তার কাছে,সাধ্যমতো সাহায্য ও করতো।

খুব ধার্মিক এবং ধর্ম বিষয়ে চিন্তাভাবনা পরিষ্কার ছিল।আল্লাহ তা’আলা ও তাক্বদীরের উপর বিশ্বাস ছিল প্রচন্ড, “যা কিছু হয় সব আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার ভালোর জন্যই হয়”— এ কথা তার মুখে প্রায় সবসময় শুনতাম। পরীক্ষায় খারাপ করলে বা জীবনে কোন সমস্যা আসলে হতাশ হতে দেখিনি। নামাজ সাধারণত ক্বাজা করতো না,আর বিগত কয়েকমাস ধরে নফল-মুস্তাহাব আমল ও ছাড়তে চাইতো না। আজকে রাতের নফল নামাজ ‘ক্বিয়ামূল লাইল’ পড়ার জন্য বের হয়েছিল, হঠাৎ বুকে ব্যথা ধরে এবং ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এ কিছু বুঝে উঠার আগেই মারা যায়।

৩০/৩১ বছরের টগবগে,স্বাস্থ্যবান তরুণের এত দুর্বল হৃদয়ের পেছনে রয়েছে রাতজাগা অসংখ্য আইসিইউ ডিউটি,কোভিড ইউনিটের অনিয়মের খাওয়া-দাওয়া ও অপর্যাপ্ত-অনিয়মিত ঘুম। অথচ, এর কোন ক্ষতিপূরণ এদেশে নাই,না চাকুরিরত প্রতিষ্ঠান বিষয়টা দেখবে; না অধ্যয়নকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোন সহানুভূতি দেখাবে। চিকিৎসক সংগঠনের তো কোন দায়িত্ব নাই ই।
তাই বলছিলাম,
“জীবিত ডাক্তার সবার,কিন্তু মৃত ডাক্তার শুধু পরিবারের,একার।”

দুই সন্তানসহ সন্তানসম্ভবা স্ত্রী এবং একমাত্র ছেলে হারানো পিতা-মাতা এই শোক কীভাবে সইবেন তা পরম করুণাময় ভালো জানেন।আমরা শুধু শোক সইবার প্রার্থনা করতে পারি। এতক্ষণে লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্স মৌলভীবাজার কুলাউড়ায় নিজ বাড়ীর পথে রওনা দিয়েছে; সহযোগীতা পাওয়া অসংখ্য রোগীর দোয়া এবং সেই সাথে অনেক স্মৃতি জড়ানো কাফনে মোড়ানো বন্ধু রানার সাথে কাটানো স্মৃতিময় মুহূর্তগুলো স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে —

“????????????, ???????????? ???????? ???????????????????????????????? ???????? ???????? ????????????????????: ????????????’???? ???????????????? ???????? ???????????????????????????? ???????? ???????????????? ????????????????????. ???????????????????????????????????? ???? ???????????? ???????????????? ???????????????? ????????????, ???????????? ???????????????????????????????? ???????????? ???????????????? ???????? ???????????????? ???????????????? ????????.”

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়