Dr. Aminul Islam

Published:
2021-04-16 18:00:19 BdST

কখন শেষ হবে এই অতিমারী


 

অধ্যাপক ডা শুভাগত চৌধুরী 

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যাচার্য

--------------------------------

 

কখন শেষ হবে এই অতিমারী, এমন কথা বহুবার উচ্চারিত, এই মারীর গুরুতর হুমকি কি হবে?- এই প্রশ্নে না গিয়ে বলা যায়, করোনামুক্ত বিশ্ব দিকচক্রবালে দেখা যায়না। এমনকি ভ্যাকসিন নিয়েও।
ভ্যানডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টারের সঙ্ক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম শেফনার বলেন, অদূর ভবিষ্যতে আমাদেরকে ভাইরাসের সাথে বসবাস করে চলতে হবে।
পেন্সেল্ভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিউনোলজি ইন্সটিটিউট ডিরেকটর জন ওয়েরিই বলেন, ইতিহাস বলে সংক্রামক রোগ একেবারে নির্মূল করা প্রায় অসম্ভব। একমাত্র বসন্ত নির্মূলে মানুষ সফল হয়েছে। হাম কিছুটা নিয়ন্ত্রিত। কারণ এই টিকা দিলে মানুষের মধ্যে তৈরি হয় স্টেরিলাইজিং ইমিউনিটি। এর মানে টিকা নেয়া লোক রোগে আক্রান্ত হবে না বা ছড়াতে পারবে না।
হপকিন্স স্কুল অব মেডিসিনের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ক্লেয়ার রক বলেন, কোভিড-১৯ এর ব্যাপার অন্যরকম। কোভিড আর ফ্লু দুটোতেই এমন ইমিউনিটি (Sterilizing Immunity) হয়না তাই এদের মৃদু সংক্রমণ হতেই থাকবে। আর এরা কি অন্যদের সংক্রমণ ছড়াতে সক্ষম হবে কি না এ সম্পর্কে এখনও ধারণা নেই।
কোভিড টিকা দিলে সংক্রমণ প্রতিরোধ, রোগ গুরুতর হওয়া বা হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কিছুটা প্রতিরোধ হচ্ছে। এতে মৃত্যু আর হাসপাতাল গমন কমবে আশা করা যায়। রক বলেন এই টিকা কোভিড নির্মূল করবে এমন কথা নেই।
আরও ব্যাপার আছে। কতজন লোক টিকা নেবেন, আগ্রহী হবেন। আর নতুন ভেরিয়েন্ট উদ্ভবের কারণে এরা টিকা দ্বারা পরাজিত হবে কিনা এও প্রশ্ন। এসব উপাদান রোগ টিকে থাকার ব্যাপারে কি প্রভাব ফেলবে তাও দেখতে হবে। প্রতি জনে জনে ভাইরাস সম্প্রচারে প্রতিবার ভাইরাসটির জিনে হচ্ছে পরিবর্তন। তৈরি হচ্ছে নতুন প্রজাতি।
অহেইরি বলেন ভাইরাসের যত প্রতিলিপি তৈরি হচ্ছে বা রেপ্লিকেসন হচ্ছে ততো ভেরিয়েন্ট সৃষ্টি হচ্ছে। এসব অধিকাংশ প্রজাতি হয়তো অবলুপ্তির প্রান্তে তবে এটি রাসিয়ান রুলো গেমের মত, বন্দুকে যত গুলি ভরা ততো দিন আরও বড় বিপদ থাকে সামনে। বড় দুশ্চিন্তা হল এমন ভেরিয়েন্ট এলো যা ভ্যাকসিন দ্বারা সৃষ্ট ইমিউনিটি এড়িয়ে গেল।

কি জ্ঞান লাভ হল স্প্যানিশ ফ্লু থেকে?
বছরের উপর ঘুরে এলো, এই ভাইরাস সারা বিশ্বে এতো সহজে যাবেনা। হয়তো তা বিবর্তিত হবে ফ্লু বা সাধারন ঠাণ্ডা লাগার মত ভাইরাস অসুখে। লাগতে পরে কয়েক বছর বা দশক।
এক শতাব্দী আগের এই অতিমারী থেকে শিক্ষা পাওয়ার আছে। ১৯১৮ আর ১৯১৯ সালে স্প্যানিশ ফ্লুতে মারা যান ৫০ মিলিয়ন মানুষ। এ পর্যন্ত করোনাতে মারা গেছেন ৩ মিলিয়নের মত মানুষ। ভাইরাসের গতি পরে মন্থর হল কারণ বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ এর মুখোমুখি হয়েছেন, আর কিছু ইমিউন হয়েছেন, কিছু মারা গেছেন। কিন্তু এই ভাইরাসের প্রজন্ম থেকে গেল। ১৯১৮ অতিমারীর ভাইরাসের প্রজন্ম আঘাত হানল ১৯৫৭, ১৯৬৮ আর ২০০৯ সালে।
শেফনার বলেন। ১৯১৮ সালের ভাইরাসের জিনে এত বছরে এসেছে যে পরিবর্তন সেগুলো জমা হয়েছে, H1N1 ভাইরাসের স্ট্রেইন এর অবশিষ্ট রয়ে যাচ্ছে, কিছুটা মানব প্রজন্ম বা উত্তরাধিকারের মতো। হয়ত আপনার অতি বৃদ্ধ প্রপিতামহের জিন এর সামান্য অংশ থেকে গেল জিনে (great -great grand parents flu gene)। তাই বর্তমান ফ্লু জিনে রয়েছে সেই উত্তরাধিকার।
এখন করোনা ভাইরাসের জিনের মিউটেশন শুরু হয়েছে, কিছু মিউটেশন তেমন অর্থপূর্ণ হয়না, কিছু হয়না ক্ষতির কারণ। আবার কিছু মিউটেশন ভাইরাসকে এমন এক প্রজাতিতে রুপান্তর ঘটায় যা অতি সংক্রমণক্ষম। আর এরা দেহের ইমিউন ব্যবস্থা কৌশলে এড়িয়ে শরীরে আঘাত হানতে হয় পারঙ্গম।
ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়নবিদ গুস্তাভ আনলেস বলেন, সমস্যা হল জিনে একটি অতি সামান্য পরিবর্তন ভাইরাসকে ভয়ানক ক্ষতিকর করে তুলতে পারে। ভাইরাসের বিবর্তন নিয়ে গবেষণা করছেন এই বিজ্ঞানী, বলেন করোনা আর ফ্লুর মধ্যে তফাত, মানুষ ইনফ্লুএঞ্জার মুখোমুখি হচ্ছে অনেক অনেক বছর আর পাচ্ছে ইমিউনিটি।

কোভিড কি হবে ঋতুকালীন অসুখ?
অতিমারীর প্রাবল্যে এর উপাত্ত সঠিক পাওয়া যায়নি। এরকম প্রবল প্রভাব থাকলে তা ঋতু মানেনা। হয়তো একসময় কমে এলে তা ঋতুকালীন হতেও পারে।
ঋতুকালীন মানে ভাইরাস সারা বছরের জন্য চলে গেল তা না।
অয়েহেরি বলে এর দুই ধরনের পরিনতি হতে পারে। এই অতিমারী কালক্রমে মিইয়ে আসবে, ব্যাপক ইমিউনিটি হওয়ার জন্য, অন্য করোনা ভাইরাস প্রজাতি এর স্থলে এসে যেতে পারে। স্প্যানিশ ফ্লুর ব্যাপারে যা ঘটেছিল।
আবার এমনও হতে পারে এটি ঋতুকালীন হয়ে থেকে গেল আর আঘাত হানল কেবল বাচ্চাদের ঋতুকলে। তবে গুরুতর হলনা।
এমরি বিশ্ব বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এমন এক মডেল নির্মাণ করেছেন করোনা থেকে যাবে ঋতুকালীন মৃদু অসুখ হিসাবে।

কি হতে পারে শোচনীয় পরিণতি ?
অয়েহেরি বলেন। আমরা যদি যথেষ্ট মানুষকে টিকা দান না করি আর ভাইরাস মিউটেট করে ভয়াল হয়ে যায় তাহলে বছর বছর হাজার হাজার মানুষের প্রাণনাশ হবে।
এমন এক নিশি দুঃস্বপ্ন এড়ানো সম্ভব, বিজ্ঞজনের বক্তব্য সারা বিশ্বে দ্রুত ভ্যাকসিন ছড়িয়ে দেওয়া, বিতরন করা।

 

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়