Dr. Aminul Islam

Published:
2020-12-13 04:31:01 BdST

বড়লেখা হাসপাতালে একজন বিকারগ্রস্থের ফেইসবুক লাইভ এবং যা ঘটেছে


 

ডা. মোঃ ফয়জুল ইসলাম
________________________


বড়লেখা উপজেলা হাসপাতাল এবং একজন মানসিকবিকারগ্রস্ত এটেনশনসিকারের ফেইসবুক লাইভ।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ১.৩০ মিনিটের দিকে জনৈক মানসিক বিকৃত, এটেনশনসিকার বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার বোনকে নিয়ে আসেন। যিনি মানসিক কারনে শ্বাসকষ্ট (psychogenic hyperventilation) রোগে ভুগছিলেন।তাকে oxygen concentrator এর মাধ্যমে oxygen দেওয়া হয়। চিকিৎসা নিশ্চিত করে চিকিৎসক।এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে উনারা সিলেটে যেতে চান।চিকিৎসক তাদের রেফার এর কাগজ বুঝিয়ে দেন। একটা জরুরী রোগীর ডেলিভারী করান এবং একটা সংকটাপন্ন নবজাতকের চিকিৎসা করেন। তখন হুট করে একজন লেডি ডক্টরের সামনে এসে অশালীন, কুরুচিপূর্ন আচরন এর মাধ্যমে ফেসবুক লাইভে গিয়ে, কল্পনা প্রসুত অভিযোগ করতে থাকেন।
১. তিনি অভিযোগ করেন, হাসপাতালে চিকিৎসক নেই। আবার তিনিই তার লাইভে চিকিৎসকের সামনে ভিডিও করেন। আমার বলেন চিকিৎসক রিপোর্ট লিখে দিয়েছেন।চিকিৎসক একটা মরণাপন্ন রোগীকে বাঁচানোর চেষ্টা না করে উনার রোগীর পাশে কেনো দাড়িয়ে রইলেন না, এটাই তার ক্ষোভ।
২. তিনি হাসপাতালের বাথরুম নিয়ে অভিযোগ করেন। একটা মানুষ কতটা মানসিকভাবে ভাবে বিকারগ্রস্ত হলে তার অসুস্থ বোনকে রেখে হাসপাতালের বাথরুম লাইভ করে। আমাদের একজন মাত্র
পরিচ্ছন্নতা কর্মী দিয়ে হাসপাতালের বাথরুম যথেষ্ট ব্যবহার উপযোগী ছিলো।
৩. তিনি লাইভ করতে করতে ডেলিভারী রুমে ঢুকে যাচ্ছিলেন যেখানে একজন মহিলার ডেলিভারীতে নার্স, ডাক্তার ব্যাস্ত। কতটা বিকৃত মস্তিস্ক।
৪. মহিলা ওয়ার্ডের ভেতরে ডুকে যাচ্ছিলো লাইভ করতে যেখানে মহিলারা অপ্রস্তুত অবস্হায় ছিলো।
৫. হাসপাতালে একজন এম্বুলেন্স ড্রাইভার তারপক্ষে ৩৬৫ দিন ২৪ ঘন্টা সার্ভিস দেওয়া সম্ভব নয় তার ও জীবন আছে, ছুটি লাগে। গড়ে আমাদের এম্বুলেস মাসে ৬৫ এর উপরে ট্রিপ দেয় সিলেটে দিনে দুটার উপরে।
বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দেশের ৮ টি হাসপাতালের ১টি হিসেবে এমনি এমনি হয় নাই। এখানে যেসকল সীমাবদ্ধতার মধ্যে একটা ভালো সার্ভিসের প্রাণপন চেষ্টা আমরা করছি। সেটায় আপনার অবদান কি।লাইভ করে হিরো হতে চান।
১.৫০ শয্যার হাসপাতাল চলে ৩১ শয্যার লোকবলে সেখানেও সকল স্টাফ কম। একজন মাত্র পরিচ্ছন্নতা কর্মী।
২. উপজেলায় রাত ৯ টার পর একটা জরুরী পরীক্ষার সুযোগ না থাকার পরও অনেক খারাপ রোগীরও চিকিৎসা আমরা ঝুঁকি নিয়ে এখানে করি।
৩. কয়টা উপজেলা হাসপাতালে সিজারিয়ান সেকশন হয়। আমাদের গাইনী এন্ড অবস বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট Priyanka Bhattachariya ম্যাডাম ২৪ ঘন্টা যেরকম রেসপন্স করেন। প্রায় প্রতিদিনই Ramendra Singha Ram স্যার জুনিয়র কনসালটেন্ট এনেস্থিসিয়া এর সহযোগিতায় সিজার অপারেশন হয়। এমনও হয়েছে কোন দিন চারটা পাঁচটা ওটিও হয়েছে এমন হয়েছে।
৪.করোনাকালীন সময়ে আমরা ফোনে সার্বক্ষণিক ফলোআপ করেছি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে লকডাউন করেছি।
৫.আমাদের ইউএইচএফপিও স্যার Ratnadip Biswas Tirthaসার্বক্ষণিক যেকোন বিষয়ে রেসপন্স করেন ক্যাম্পাসে থাকেন।সেখানে হাসপাতালে এসে একটা মিথ্যাচার করেন। এটা তো আপনার পারিবারিক শিক্ষার পরিচয় দেয়।
বড়লেখা উপজেলা হাসপাতালের এই সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থার চেইন একদিনে গড়ে উঠে নাই। আমরা আমাদের মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়, উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেব, ইউএনও Shamim Al Imran মহোদয় সকলের সহযোগিতা পরামর্শে সার্বক্ষণিক আমাদের ইউএইচএফপিও স্যারের নেতৃত্বে সীমাবদ্ধতার মধ্যে হাসপাতালের সার্ভিস উন্নতির চেষ্টা করছি।
সেখানে কোন ব্যাক্তি বিশেষ বা গোষ্ঠীর পরিকল্পিতভাবে এই হাসপাতালের সুনামক্ষুন করাকে আমরা ছাড় দিবো না। আপনার গঠনমুলক অভিযোগ, আমাদের জানান, ইউএনও মহোদয়, উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয়,আমাদের মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়কে জানান,আমরা আপনাদের সকলের সহযোগিতায় সেসব ক্ষেত্রে উন্নয়ন করবো।
আমরা এই ঘটনায় বড়লেখা উপজেলা হাসপাতালের সকল স্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারী ব্যাথিত এবং মর্মাহত হয়েছি। এটা কেবল আমাদের নয় বড়লেখার জনগনের, জনপ্রতিনিধির অসম্মান।
আমরা জনগনকে কষ্ট দিতে চাই না, তাই আমরা আস্থা রেখেছি আমাদের উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয়, ইউএনও মহোদয় এবং মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় এর আশ্বাসের উপর।আশা করি দৃষ্টান্ত স্হাপনের মাধ্যমে তারা এ ধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনার পূনরাবৃত্তি ঘটতে অনুৎসাহিত করবেন।
আমি ইউএনও মহোদয়কে ধন্যবাদ জানাই, তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, পরবর্তীতে এরকম হাসপাতালে গোলযোগসৃষ্টি কারীদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দিবেন।
আমি উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয়, বড়লেখা থানার অফিসার্স ইনচার্জকে ধন্যবাদ জানাই, তারা আমাদের পক্ষে প্রকৃত ঘটনা শুনেছেন এবং আইনানুগ প্রদক্ষেপ এর আশ্বাস দিয়েছেন।
আমি আরো ধন্যবাদ জানাতে চাই, বড়লেখা উপজেলার সাংবাদিকবৃন্দদের তারা সত্যের পক্ষে তাদের কলম ধরেছেন এবং বড়লেখা হাসপাতালের অগ্রযাত্রায় ভুমিকা রাখছেন।আমি আশা করি তাদের আমরা সবসময় পাশে পাবো।
সবশেষে আমি ধন্যবাদ জানাই বড়লেখা উপজেলা হাসপাতালের সকল স্তরের কর্মকতা ও কর্মচারীকে যারা হাসপাতালের গুনগত পরিবর্তনে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এবং মিথ্যাচার রুখতে সর্বাত্মক সাথে ছিলেন।
আমি ধন্যবাদ জানাই আমাদের ইউএইচএফপিও স্যারকে যিনি পুরোটা সময় আমাদের মনোবল জুগিয়েছেন এবং এই মিথ্যাচারের বিষয়ে সকলকে জানিয়েছেন।
আমি ধন্যবাদ জানাই বিএমএ সভাপতি Shabbir Khanস্যারকে যিনি আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন,সহযোগিতা করেছেন।
আমি ধন্যবাদ জানাই, শ্রদ্ধেয় সিভিল সার্জন স্যার Tauhid Ahmedস্যারকে এ ঘটনার সার্বিক তদারকির জন্য।
পরিশেষে আমি বড়লেখা বাসীকে বলতে চাই, অনেক সীমাবদ্ধতা নিয়ে আমরা সবাই মিলে আপনাদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের চেষ্টা করছি। আপনারা আমাদের সহযোগিতা করুন।এ হাসপাতাল আপনার আমার সবার।
ডা. মোঃ ফয়জুল ইসলাম
মেডিকেল অফিসার।
বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়