Dr. Aminul Islam

Published:
2020-11-25 02:57:26 BdST

চিকিৎসক নিগ্রহ নিয়ে বিএমএ'র কঠোর বিবৃতি: "চিকিৎসকদের ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেছে"



ডা. মোহাঃ শেখ শহীদ উল্লাহ
দপ্তর সম্পাদক
বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন
___________________________

বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন (বিএমএ)’র সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এবং মহাসচিব ডা. মোঃ ইহতেশামুল হক চৌধুরী পত্রিকায় প্রকাশের জন্য নিন্মলিখিত বিবৃতি প্রদান করেনঃ-

অত্যন্ত উদ্বেগের সহিত লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ¯স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় চিকিৎসক নিগ্রহ, স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ভাংচুর, চিকিৎসক গ্রেফতার, এমনকি রোগীর স্বজনের আঘাতে চিকিৎসক মৃত্যুর ঘটনা অহরহ ঘটছে। চিকিৎসাধীন কোন রোগীর মৃত্যু ঘটলেই রোগীর স্বজন এবং আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর এহেন অতিউৎসাহী কর্মকান্ডে চিকিৎসকদের মধ্যে মারাত্মক ক্ষোভের সৃষ্টি করছে যা প্রকারান্তরে নির্বিঘ্ন চিকিৎসা সেবা প্রদানে বাধা সৃষ্টি করবে। রাষ্ট্রযন্ত্রের উদাসীনতা এসকল অপকর্মকারীদের প্রকারান্তরে উৎসাহিত করছে। রোগীর স্বজনদের সাথে আইনশৃংখলারক্ষাকারী বাহিনী কোন কোন ক্ষেত্রে যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে নিজেরাই চিকিৎসক নিগ্রহে জড়িয়ে পড়ছে। বিগত ১৭/১১/২০২০ইং তারিখ জাতীয় মানসিক হাসপাতালের একজন চিকিৎসক গ্রেফতারে আইনের নূন্যতম অবশ্য প্রতিপালনীয় ব্যবস্থাদি গ্রহণ না করে আইনশৃংখলারক্ষাকারী বাহিনী বেপরোয়া আচরণ করেছে। চিকিৎসক নিগৃহীতের ঘটনা কিংবা মৃত্যুবরণ করার পরও রাষ্ট্রের নির্লিপ্ততা আমাদেরকে ক্ষুব্ধ করেছে। অধিকন্তু মানসিক হাসপাতালের ডাঃ মামুনের গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে একজন বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্যে আমরা বিস্মিত। ডাঃ মামুনের অ¯স্বাভাবিক গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি যে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছেন তা প্রতিয়মান হচ্ছে। আইনের প্রতিকার পাওয়া যেখানে প্রত্যেকটি নাগরিকের অধিকার ঠিক তেমনি একজন নিরীহ সরকারী কর্মকর্তার বিতর্কিত গ্রেফতার ও রিমান্ড সঠিক আইনের প্রয়োগকে নিশ্চিত করে না।

 

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নতুন নিয়োগ পাওয়া সর্বোচ্চ কর্মকর্তা মন্ত্রণালয়ে যোগদানের পর থেকেই একের পর এক বিতর্কিত বিভ্রান্তিমূলক ও অজ্ঞতাপ্রসূত মন্তব্যের মাধ্যমে আমাদের পেশার মান মর্যাদাকে ক্রমাগত আঘাত করছেন। তিনি অভিভাবক না হয়ে প্রশাসনের রুদ্র মূর্তিতে শাসকের ভাষায় কথা বলেন যা ঔপনিবেশিক আমলাতন্ত্রের আচরণকেই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। মহামান্য আদালতের রায় থাকা সত্তে¡ও বহুল প্রত্যাশিত চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রণয়নে বাধা সৃষ্টি করে প্রকারান্তরে আমলাতন্ত্র ক্রমাগত চিকিৎসক নিগ্রহের পথকে সুগম করে দিচ্ছে। অন্যদিকে আমলাতন্ত্র চর দখলের মতো চিকিৎসক ক্যাডারের গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে নিচ্ছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অসংখ্য দূর্বলতা চিকিৎসকদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে আমলাতন্ত্র সরকার জনগণ ও চিকিৎসকদের মুখোমুখি করে দিয়ে নিজেরা অনবরত ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে। চিকিৎসকদের ধৈর্য্যর বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। এর জন্য ঘুনে ধরা প্রশাসনযন্ত্রই একমাত্র দায়ী।

একশত ছয়জন চিকিৎসক সহ আরো বিশ জনের অধিক অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীর শাহাদাত বরণের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে এদেশের চিকিৎসকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মহামারী মোকাবেলায় নিরলসভাবে কাজ করছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় আমরা যখন নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছি তখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে স্থানীয় প্রভাবশালী মাস্তান কর্তৃক চিকিৎসক নিগ্রহ, আইনশৃংখলারক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক হয়রানি আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিদের বিভ্রান্তিকর বাগাড়ম্বরতায় আমাদের মাঝে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এধরনের অবিচার আর অন্যায় আচরণ কোনভাবেই মেনে নেয়া যায়না। ক্রমাগত অন্যায় ও অবিচার আচরণে যেকোন সময় চিকিৎসা সেবা মুখ থুবড়ে পড়ে যেতে বাধ্য। কালবিলম্ব না করে চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, প্রতিটি চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনা মনিটর করে আঘাতকারীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা ও অন্যায়ভাবে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক চিকিৎসক গ্রেফতারের ঘটনা বন্ধ করতে হবে। আমরা আশা করব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা বিভ্রান্তিকর বক্তব্য না দিয়ে নিজেদের কাজ ও দায়িত্বের প্রতি আরো মনোযোগী হবেন। অর্বাচীনের মত চিকিৎসকদের চিকিৎসা পদ্ধতি শিখিয়ে দেওয়া থেকে বিরত থেকে স্ব স্ব কাজ করলে জাতি উপকৃত হবে।
বার্তা প্রেরক-

ডা. মোহাঃ শেখ শহীদ উল্লাহ
দপ্তর সম্পাদক
বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন

 

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়