Ameen Qudir

Published:
2017-01-21 18:04:37 BdST

লন্ডনে ভুল চিকিৎসায় বাংলাদেশি শিশুর মৃত্যু, ৩ বছর ধরে হয়রানী রয়াল হাসপাতালের


 

ডা. সুতপা ভট্টাচার্য
_____________________


একে তো চিকিৎসায় ভুল। বাংলাদেশ বংশোদ্ভুত বাঙালি শিশুর মৃত্যু। তা নিয়ে তিনবছর ধরে শিশুটির শোকস্তব্ধ পরিবারকে হয়রানি, চরম মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছে খোদ বৃটেনের রয়াল হাসপাতাল। বিভিন্ন সালিশ আদালতও তাদের নালিশ কানে তোলে নি প্রথমে।


ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার ব্রিটিশ মিডিয়াকেও পায় নি পাশে। এত বড় মৃত্যুকে পাত্তাই দেয় নি কথিত স্বাধীন মুক্ত মিডিয়ার দেশ বৃটেন।

তারপরও অসহায়ভাবে লড়াই চালিয়ে গেছে পরিবারটি । সবশেষে আদালতের নির্দেশে ভুল স্বীকার করে রয়াল হাসপাতাল । ততদিনে কেটে গেছে তিন তিনটি মূল্যবান বছর। এরকম শত শত ঘটনা ঘটছে বৃটেনে। কোন প্রতিবাদ হচ্ছে না।

একই ঘটনা বাংলাদেশে ঘটলে ঘটতে পারত শত অনাকাঙ্খিত ঘটনা। ডাক্তার নির্যাতনসহ হরেক কান্ড। মিডিয়া ঝাঁপিয়ে পড়ত। ডাক্তার হাসপাতাল চৌদ্দ পুরুষকে বলা হত কসাই।

যদিও লন্ডনের এই বাঙালি ভুক্তভোগী পরিবারটি অভিজাত ও সজ্জন। তারা আইনের পথেই থেকেছেন।

লন্ডন থেকে প্রকাশিত বাংলা মিডিয়ার খবরে জানা যায়, হাসপাতালটির ভুল চিকিৎসার কারণে ২০১৩ সালে ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তৌহিদুল করিম সুহৃদ ও নারগিস ফারজানা ন্যান্সি দম্পত্তির ২০ মাস বয়সী সন্তানের মৃত্যু হয়।


২০১২ সালে ১২ মার্চ লন্ডনের কুইন্স হাসপাতালে তাদের সন্তান তাহমিদ তাওসিফের জন্ম। তাদের সন্তান শর্ট ট্রমা ভাওয়েল বা ছোট পাকস্থলী নিয়ে জন্ম নেয়। সাধারণত জন্মের সময় একটি শিশুর পাকিস্থলীর আয়তন থাকে ১০০ সেন্টিমিন্টার। কিন্তু তাহমিদের পাকস্থলী ছিল ২৭ সেন্টিমিটার। জন্মের পরপরই শিশুটির পাকস্থলীতে অপারেশনের প্রয়োজন হলে তাকে রয়্যাল লন্ডন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ২০ মাস পর্যন্ত রয়্যাল লন্ডন হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোনমি বিভাগে চিকিৎসাধীন ছিল তাহমিদ। তার পাকস্থলী স্বাভাবিক করতে ৯টি অপারেশন করা হয়। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর শেষ অপারেশনটি করা হয়।


অপারেশনের পর শিশুটির ক্ষতস্থানে থ্রি এম পলিফিল্ম টেপ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। অপারেশন ঠিক মতো না হওয়ায় ক্ষতস্থান দিয়ে ফ্লুয়িড গড়িয়ে পাকস্থলীর ভেতরে ইনফেকশন হয়। শিশুটির বাবা-মা তাৎক্ষণিকভাবে ডাক্তারের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও ডাক্তারের সাক্ষাত পাননি। শিশুটির অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে। পরেরদিন ১০ ডিসেম্বর শিশুটি মারা যায়।

 

 

তাহমিদ মৃত্যুর পর ডাক্তাররা সুহৃদ-ন্যান্সিকে এই বলে সান্ত্বনা দেন যে, জন্মের সময় দুর্বল থাকায় সে মারা গেছে। তবে এমন যুক্তি মানতে না পেরে তদন্তের দাবি করে শিশুর পরিবার।

ক্লিনিক্যাল কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিভাগে অভিযোগ করলে কোন প্রতিকার পাননি এই দম্পতি। বারবার অভিযোগের ফলাফল জানতে চাইলেও তারা এ বিষয়ে কথা বলে ২০১৪ সালের এপ্রিলে। ৮ মাস পর ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে রয়্যাল লন্ডন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার অবহেলার কথা স্বীকার করলেও ভুল চিকিৎসার বিষয়টি এড়িয়ে যায়।
লন্ডনী বাংলা মিডিয়া জানায়,

এরপর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেন সুহৃদ দম্পতি। ২০১৫ সালে দ্বিতীয় দফা তদন্তের পর এনএইচএস চিকিৎসায় কোনও ধরনের অবহেলা ছিল না বলে রিপোর্ট প্রকাশ করলে ব্যক্তিগত আইনজীবীর মাধ্যমে তৃতীয় দফা তদন্তের পর ডিসেম্বরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা ও ভুল চিকিসার বিষয়টি প্রমাণিত হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়। চলতি বছরে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে সুহৃদের আইনজীবী গণমাধ্যম বিষয়টি জানান।

ভুক্তভোগীরা বাংলা মিডিয়াকে জানান, ‘আমার সন্তানের চিকিৎসার সময়ে দেখেছি অনেক বাঙালি পরিবারের শিশু এনএইচএসের গাফিলতি আর ভুল চিকিৎসার কারণে মারা যাচ্ছে। কিন্তু কোনও বাবা-মাকে সাহস করে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে দেখিনি আমি। এ কারণেই আমি এনএইচএসের ভুল চিকিৎসার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তাদের ভুল স্বীকার করতে বাধ্য করি।

___________________________

লেখক লন্ডন প্রবাসী ডাক্তার।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়