SUBROTO GHOSH

Published:
2020-06-17 18:23:52 BdST

খুলনায় গরীবের ডাক্তারকে অবিরাম ঘুষি মেরে হত্যার ঘটনায় ফুঁসছে চিকিৎসক সমাজ


 

ডেস্ক
________________________

বাংলাদেশের খুলনায় এক চিকিৎসককে অবিরাম ঘুষি মেরে হত্যার ঘটনায় ফুঁসছে চিকিৎসক সমাজ। কিভাবে ঘুষি মেরে মেরে ডাক্তারকে মরণাপন্ন করা হয় , তার ভিডিও এখন অনলাইনে ভাইরাল।

বাংলাদেশের চিকিৎসক সমাজের নেতা অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান এক বার্তায় খুলনায় সন্ত্রাসীদের নির্মম হামলায় নিহত ডাক্তার আব্দুর রকিবের হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করে বলেন , খুলনার আইন শৃঙ্খলাবাহিনী এবং প্রশাসন আমার ভাইয়ের হত্যকারীকে খুঁজে বেরকরে আইনের আওতায় আনুন । যেকোন পরিচয়ে হত্যাকারীদের কেউ আড়াল করার চেষ্টা করবেন না । পরিনাম ভয়াবহ হবে, প্রয়োজনে এই কোরনা কালেই হবে ।


ভাইরাল ভিডিও লিঙ্ক:
https://www.facebook.com/Jahidhst/videos/2746744605553416/?t=56


https://www.facebook.com/111742877105727/videos/602070593765833/?t=100


হামলার ভিডিও বিস্তারিত :https://www.facebook.com/111742877105727/videos/602070593765833

 

ডা. সুব্রত ঘোষ লিখেছেন, ·
করোনাকালে চিকিৎসা সেবা দেবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে একজন সিনিয়র চিকিৎসককে পিটিয়ে মারলো রোগীর স্বজনরা !

ডা. মো. আব্দুর রকিব এক সময় খুলনা বিভাগের পরিচালক পদে পদায়িত হয়েছিলেন। সারাজীবন হাজার হাজার মানুষকে অপারেশন করে, চিকিৎসা দিয়ে তিনি সুস্থ্য করেছেন। কত শত গরীবের ভিজিট, অপারেশন ফি, হাসপাতাল বিল মাফ করেছেন হিসেব নেই। নিতান্তই নিরীহ ভদ্রলোক। নিরিবিলি একজন মানুষ। নিরবে নিভৃতে খেয়ে না খেয়ে মানুষের সেবা করেছেন। খুলনার সবথেকে বেশি অপারেশন (সার্জারী) করা চিকিৎসক সম্ভবত ডাঃ রকিব।

সাতক্ষীরার মানুষ, জীবনের শত অভাব অনাটনে দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা এই সব মানুষগুলো কিভাবে, কত কষ্টে যে মেডিকেলে পড়াশুনা করে একজন চিকিৎসক হয়েছেন, তা শুধু উনি আর উনার পরিবার জানে। অথচ জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিতে মৃত্যুকে উপহার পেলেন।

জাতি হিসেবে আমরা চরমতম কৃতঘ্ন আর বেঈমান!!! লজ্জা লাগে, ঘেন্না হয়!!!

প্রমাণ হিসেবে সিসিটিভি ফুটেজ আছে। অবিলম্বে খুনীদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হোক।

ডা. কাওসার উদ্দিন (ঢামেক, কে-৬৫)লিখেছেন,

সাধারণ মানুষদের ডাক্তার বিদ্বেষী মনোভাব দেখে আমরা চিন্তিত বিস্মিত ক্ষুব্ধ! এই মানসিকতা কিন্তু এমনি এমনি তৈরি হয়নি! আমাদের প্রচলিত সামাজিক ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ফল এগুলো।

সাধারণ মানুষের মানসিকতা বদলায় না কেন? মানুষ কিভাবে একজন ডাক্তারকে পিটিয়ে মেরে ফেলে? এগুলো নিয়ে যতই কথা বলিনা কেন কোন লাভ নেই, যতদিন না মূলের সমস্যাগুলো উৎঘাটন করে সেসব নির্মুলে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া যাবে।

এই দেশে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বরাবরই কম।
সেই সীমিত বরাদ্দে আবার সীমাহিন দূর্নীতি।
স্বাস্থ্যসেবাদানকারীদের মানোন্নয়ন থেকে শুরু করে প্রমোশন, সব কিছুতেই দূর্নীতি ও সিস্টেম লস।
হাসপাতাল ও ক্লিনিক ব্যবস্থার মান উন্নয়নে নেই কার্যকর কোন প্রতিষ্ঠান। ব্যাঙের ছাতার মত যদু মদু ক্লিনিক হাসপাতাল রাস্তার মোড়ে মোড়ে। চাইলেই যে কেউ দিতে পারে, মান তার যাই হোক। আর পরবর্তীতে তারা সেবা ও জনবলে যথার্থ রীতিনীতি মেনে চলছে কিনা সেসব দেখবালের কোন বালাই নেই। তাই এই ছোট্ট দেশেই এরকম শখানেক হাসপাতাল পাওয়া যাবে যেখানে ওটি হয় ওয়ার্ড বয়দের দিয়ে, বা তাদেরকে সহকারী হিসেবে নিয়ে।
ওষুধ বাণিজ্যের উপর কার্যকর কোন মনিটরিং নেই। ফার্মেসি ম্যান থেকে শুরু করে কোয়াক কবিরাজ সাধারণ মানুষ সবার কাছেই সব ওষুধ শুধু পয়সা থাকলেই সহজলভ্য। চিকিৎসকের সেখানে প্রয়োজন নেই।
অসংখ্য নতুন নতুন সরকারী বেসরকারী হাসপাতাল মেডিকেল প্রতিনিয়ত হচ্ছে। কিন্তু অনর্থক সংখ্যা না বাড়িয়ে বরং বিদ্যমান হাসপাতালগুলোকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে বিশ্বমানের করা যায় কিনা সেই উদ্যোগ আমাদের বরাবরই কম। বরং মামা খালু কার নামে কে কতটি হাসপাতাল ক্লিনিক চালু করতে পারে তার প্রতিযোগিতাই এদেশে বেশি।
চিকিৎসক পেশাজীবিদের মূল্যায়ন সবর্স্তরে কম। কারণ উপরের যে চিকিৎসকদের কার্যকর ভূমিকা পাকনের কারণে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ এই খাতকে মূল্যায়ন করবে, তারা বরাবর ব্যস্ত থাকেন অমুক তমুকের সুপারিশ বা ব্যক্তিস্বার্থ নিয়ে। একচোখা দৃষ্টিতে শুধু নিজে লাভবান হলে তাদের অনেকে ভুলে যান বৃহত্তর চিকিৎসক গোষ্ঠীর অধিকার ও সুবিধা অসুবিধার কথা।
এই দেশে চিকিৎসা পেশার সাথে জড়িত অনেকগুলো বিষয়ে কার্যকর কোন আইন বা বিধি বিধান নেই। বরং যে যার স্বার্থে কিছু অস্পষ্ট নিয়ম নীতি তৈরি করে রাখছে যুগযুগ ধরে। এই যেমন কারা চিকিৎসক আর কারা কোয়াক সেটা এই দেশে অদ্ভুতভাবে নির্দিষ্ট। আইনের মারপ্যাচে তাই কোয়াকরাও সর্বত্র ডাক্তার লেখে। লোকজনও তাই পার্থক্য করেনা কে পাশ করা ডাক্তার, আর কে ভুয়া ডাক্তার। এই সিস্টেমে এখন পাশ করাও বেশ সহজ, মান যথোপযুক্ত না থাকলেও।
চিকিৎসকদের সাথে খারাপ আচরণ করলে শাস্তি কেমন হবে তার কিছুটা থাকলেও, কার্যকর কোন প্রয়োগ কখনোই হয়নি।
চিকিৎসকদের প্রতিষ্ঠান বিএমডিসির যেমন কোন দায় নাই চিকিৎসকদের কার্যক্রম মনিটরিং এ, তাই ভুয়া ডাক্তারের ছড়াছড়ি। আইন ব্যবস্থায় নেই চিকিৎসক সুরক্ষা ও তাদের নিরাপত্তায় কোন কার্যকর আইন, তাই সাধারণ পাব্লিক আজ একে ও তো কাল ওকে পিটিয়ে আহত করছে, বা ডা. রাকিবের মত কাউকে নির্মমভাবে পিটিয়েই মেরেই ফেলছে। এই রীতি বহুদিনের। কারণ কোন বিচার নেই। নেতাদের সাময়িক বিবৃতি আর একটু মানববন্ধনই হল ভরসা।
হেলথ ট্যুরিজমের ব্যবসা এদেশে বেশ রমরমা। নিজস্ব সিস্টমকে ডেভেলপ না করে আমাদের দেশের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ শ্রেণী বাইরের দেশের উপর বেশি আস্থাশীল ও নির্ভরশীল। এই যেমন, প্রচুর রোগী ইন্ডিয়া যাচ্ছে চিকিৎসার জন্য। এদেশের ডাক্তারদের পিটানোর সময় তাদের চিন্তা হয়তো এমনই থাকে, 'এরা সব কসাই, আমাদের জন্য ভাল চিকিৎসকরা তো সব ওপারেই আছেন।' অথবা আমাদের এলিট শ্রেণী যারা অনেক কিছুর নিয়ন্ত্রণকর্তা, তারা চিন্তা করে এই নোংরা সিস্টেমে দু একজন ডাক্তার মরে গেলে আর কিইবা আসে যায়। আমাদের তো আর কিছু হচ্ছে না, আমাদের জন্য লন্ডন সিংগাপুর আছে।'
আমাদের দেশ ও দেশের মিডিয়ায় বাইরের হাসপাতালের বিজ্ঞাপন প্রচার প্রসার বেশি চলে, যতটা না চলে এদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মান কিভাবে উন্নয়ন করা যায় সেসব নিয়ে।

করোনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, উলংগভাবে প্রকাশ করছে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল কেমন, কতটা জরাজীর্ণ এটা। এই উদ্ভট সিস্টেমে সাধারণ মানুষের একশন নিয়ে আমার কিছু বলার নেই, কারণ অসাধারণ মানুষগুলোর অসাধারণ সব কার্যক্রম নির্ভর এই ভগ্ন সিস্টেম এগুলো যে ঘটবে সেটাই তো স্বাভাবিক...

_______________________________________________

 

INFORMATION

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়