Dr. Aminul Islam

Published:
2020-06-15 20:26:43 BdST

করোনায় শহীদ ডাঃ রুমির বাবা কি ভিক্ষা চেয়েছেন বলে মনে হচ্ছে স্যার!


লেখকের ছবি

ডাঃ জোবায়ের আহমেদ
____________________________

করোনা ভাইরাস তার তান্ডব শুরু করেছে বাংলাদেশে।
নগরে আগুন লাগলে দেবালয় এড়ায় না এটা খুব জানা কথা।
দেশের গুণীজন, বিশিষ্ট ব্যক্তি,রাজনীতিবিদ,আমলা, মন্ত্রীরা করোনার ভয়াল ছোবলে মৃত্যুর কাছে হার মানছেন।

সাধারণ মানুষের জীবন এই দেশে বরাবরই অপাংক্তেয়ই।
সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে খেলাকরা রুবিনা হকদের অনেক দাম রাষ্ট্রের কাছে।
দেশের চিকিৎসকদের জীবন বিপন্ন করা ভূয়া মাস্ক ব্যবসায়ীদের তোয়াজ করে এই রাষ্ট্র।
এই দেশের ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থায় সেসব মানুষ আস্থা রাখতো, তাদের উন্নত সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত করা বড় মানুষটির অনেক দাম এই রাষ্ট্রের কাছে আছে বিধায় ক্লিনিক্যালি ডেড একজন মানুষকে সিংগাপুরে পাঠাতে চেয়েছিলো রাষ্ট্র।।
কিন্ত রাষ্ট্রের মালিক জনগন বিনা চিকিৎসায় রাস্তার ধারে হুইল চেয়ারে শ্বাসকষ্টে ভুগে মারা যায়,মালিকের স্ত্রী মাথায় হাত দিয়ে রাস্তায় বসে পড়ে।
এতে রাষ্ট্রের লজ্জা হয়না।।

রাষ্ট্রের কাছে চিরদিন অবহেলিত পেশাজীবি হলো চিকিৎসকরা।
সেই চিকিৎসকরা এই দেশে কসাই নামে পরিচিত।
এই কসাইরা যদিও মরছে দেদারসে, আক্রান্ত হচ্ছে তাতে রাষ্ট্রের কি যায় আসে।।

এরা মরে সাফ হয়ে গেলে রাষ্ট্র বিদেশী চিকিৎসক আমদানি করবে।

সেদিন একজন ডাঃমঈন উদ্দিন এয়ার এম্বুলেন্স না থাক একটা সরকারি এম্বুলেন্স ও পাননি।
আজ রাষ্ট্র যাদের গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে,তাদের জন্য কিন্ত অনেক এয়ার এম্বুলেন্স, হেলিকপ্টার উড়াচ্ছে আকাশে।।
এতে আমরা খুশি।।

ফ্রন্টলাইন ফাইটার বলছে রাষ্ট্র চিকিৎসকদের।
প্রনোদণা প্যাকেজ ঘোষণা করছে।
সরকারী চিকিৎসকরা সেটা পাবেন।
আদৌ কয়জন পাবেন তা নিয়ে শঙ্কা রয়ে গেছে।

কিন্ত বেসরকারী চিকিৎসক, সেল্ফ এম্পলয়েড চিকিৎসক যারা এই দেশের মানুষকে চিকিৎসা দিচ্ছে, তারা রাষ্ট্রের গোনাতে নাই।।
তারা মারা গেলে তাদের অসহায় পরিবারকে রাস্তায় বসতে হবে ভিক্ষার থালা নিয়ে।
রাষ্ট্র তাদের দায়িত্ব নিবেতো নাই উল্টো তারা যেসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, তাদের থেকেও তাদের নায্য হিস্যা আদায়ে সচেষ্ট হবে না।

কারণ এই রাষ্ট্র লুটেরা ও ডাকাত বান্ধব।।

চট্রগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের শিশু বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডাঃ রুমির মানসিক মৃত্যু হয়েছিলো গত ১৯ নভেম্বরে।
এক রোগীকে ব্যাথার জন্য ন্যাপ্রিন ট্যাবলেট দিয়েছিলেন।
আমি সহ সারাদেশের হাজার হাজার চিকিৎসক এই ট্যাবলেট প্রতিদিন বিভিন্ন রোগীকে দেই।
আমাদের ভাগ্য ভালো এটা খেয়ে কারো রিয়েকশান হয়নি।
কার কোন মেডিসিন খেয়ে Adverse Drug Reaction হবে তা আমরা জানিনা,আল্লাহ জানেন।
এর মধ্যে ভয়াবহ যেই রিয়েকশান তা হলো
Steven Johnson syndrome
সেই রোগী ডাঃ রুমীর দেওয়া ন্যাপ্রিন খেয়ে তা হলো।
তাকে আইসিইউতে নেওয়া হলো।।

মহাবিশ্বের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসা বিজ্ঞানী সাংবাদিকরা ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তুললেন।যাচ্ছেতাই লিখে গেলেন।
এলাকাবাসী ডাঃ রুমিকে চেম্বার ছাড়া করলেন।
কেউ পাশে দাঁড়ায়নি।।
সেদিন ঘটেছিলো ডাঃ রুমির মানসিক মৃত্যু।

তারপর তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন।
এয়ার এম্বুলেন্স আসলো।কিন্ত এলাকা বাসী তাকে এম্বুলেন্সে তুলতে দিলেন না।
তিনি মারা গেলেন।

ডাঃ রুমির পিতা অসহায় হয়ে তার কর্মস্থল প্রতিষ্ঠানে সাহায্য আবেদন করলেন।
তিনি কি ভিক্ষা চেয়েছেন?
তার সন্তান এই প্রতিষ্ঠানে শ্রম দিয়েছেন,মেধা দিয়েছেন,পীড়িত শিশুদের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন,মা বাবাদের মুখে হাসি এনে দিয়েছেন।
আজ তার বাবাকে মলিন ও কাতর ভাবে সাহায্য আবেদন করলে সেই প্রতিষ্ঠান একটা বিজ্ঞপ্তি ছাপালো।
সেখানে অধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত চিঠিটা পড়ুন।
ডাঃ রুমির বাবা কি ভিক্ষা চেয়েছেন, চাঁদা তুলে সাহায্য চেয়েছেন??

আমি করোনা ভাইরাসের পুরো সময় আমার চেম্বারে রোগী দেখছি।
পালিয়ে যাইনি।
এই রাষ্ট্রের জনগনকে চিকিৎসা দিচ্ছি।
হ্যা ভিজিট নিয়েই সেবা দিচ্ছি।
কিন্ত আমি না দিয়ে বাসায় বসেও থাকতে পারতাম।
আমি কি তবে রিস্ক নেইনি জীবনের।
আমি মারা গেলে আমার বাবা তো চাঁদাও চাইতে পারবেন না কারো কাছে??

যারা নীতি বানান, তারা কি বেসরকারি চিকিৎসক ও সেল্ফ এম্পলয়েড চিকিৎসকদের কথা একবারও ভাবলেন না?

এই বিজ্ঞপ্তি দেশের সকল বেসরকারি চিকিৎসকদের জন্য ম্যাসেজ।।

দেশে এত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মারা গেলেন,এই রাষ্ট্র কি তাদের শোকবার্তা জানিয়েছেন??
এই মানুষগুলির কি কোন অবদান ছিলো না এই দেশে।।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের Third class staff আবজাল দেড় হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলো।
কত আবজাব আমাদের জানার বাইরে।
সেই আবজালের মাথার উপর বটবৃক্ষ হয়ে যারা থেকেছে, তাদের তোষামোদিতেই ব্যস্ত এই রাষ্ট্র।
রাষ্ট্র ব্যস্ত থাকুক তার কাজে।
চিকিৎসকরা মরুক নীরবে।।

আমরা কিছু চাইনা। আল্লাহ ই একমাত্র উত্তম প্রতিদানকারী।

________________________________

INFORMATION 

 

 

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়