DR. Suresh Tulshan

Published:
2020-06-09 16:14:28 BdST

সিনিয়র ডাক্তার ও জুনিয়র ডাক্তার প্রসঙ্গে



অধ্যক্ষ ডা. মওদুদ আলমগীর পাভেল

_______________________

প্লাটফর্মে একটি পোস্টের প্রেক্ষিতে-

প্লাটফর্মের দেয়ালে কিভাবে লিখতে হয় একটু আগেও জানতাম না।
আমার তরুণ বন্ধুটি সহায্য না করলে এ লেখা আমার অন্তরে ঘুরতে ঘুরতে এক সময় হারিয়েই যেত।

লেখাটা কতটা লম্বা হবে জানি না।
তবে যাদের ধৈর্য্যরে উপর আস্থা খুব বেশী নেই তারা ক্লাস পালানোর মত কেটে পরলে আমার তেমন আপত্তি নেই। তবে আইসোলেশন আর কোয়ারেনটাইনে যারা আছে তাদের সময় কাটানোর একটা মামুলী মাধ্যম হয়েতো হতে পারে।

আমার প্রসঙ্গ সিনিয়রদের হাসপাতালে ডিউটি করা বা না করা নিয়ে নয়।
আর আত্মপক্ষ সমর্থন?মোটেও না।
কারন আমার কপালে এই করোনার যুদ্ধে ‘রাজাকারের’ লজ্জাতিলক আছে এমনটাও মনে করি না।
তাহলে এই লম্বা ভূমিকায় জ্ঞান পর্বের কারনটা কি? আছে! আছে! একটু সবুর।
সমস্যাটা মনে হয় অন্য জায়গায়।

আমরা সিনিয়ররা (অবশ্যই তথা কথিত, কারন আমি বয়স বাড়াকে সিনিয়রিটি মানি না, প্রায়ই স্থুল ভাবে বলি গরু বুড়ো হলেই তাকে কেউ সিনিয়র গরু বলে না বা সম্মান করে দু আটি খড়ও বেশী দেয়না,
বরং বুড়ো গরুর মাংস কেউ কিনতে চায় না সিদ্ধ হয় না বলে,
আর ট্যানারীও অন্য চোখে দেখে ওর চামড়ায় ভালো জুতোও হয় না )।

আমরা জুনিয়রদের আস্থা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছি।
তা না হলে এই তথাকথিত জুনিয়ররা এখানেও তথা কথিত,
কারন আমি সেই সব সিনিয়রদের মধ্যে নেই, যারা প্রথম বারে পরীক্ষা দেয়া জুনিয়র পোস্ট গ্রাজুয়েট পরীক্ষার্থী দেখলেই চেয়ারের পেছনে হেলে যান,
সাফ বুঝিয়ে দেন,
এ দফা তোমার নয় তুমি বাবা জুনিয়র,
যথেষ্ট পাকোনি এখনও।

যাদের বাবা মা চাচা খালা আমাদের সিনিয়রদেরই বয়সের,
তাদেরকে এই করোনাকালে বাড়ীর বাইরে যাওয়া তো দূরে থাক,
ঘরের চৌহদ্দীর বাইরে দেখলেই ধমকে ভেতরে ঢোকাচ্ছে,
হাসপাতালে ডিউটিতে থেকে বাড়ির সিনিয়রদের উপর নজরদারী করার জন্য WI-FI, CCTV লাগানোর কথা ভাবছে, ঠিক তারাই উল্টো দিকে এই সিনিয়রদের হাসপাতালে না যাওয়া নিয়ে ক্ষোভে বাষ্পরূদ্ধ হচ্ছে।
তাহলে কারনটা তো আর সিনিয়রে আটকে থাকলো না। কারনটা আসলে ওখানে নয় কারনটা ’আস্থায়-ভালোবাসায়-বিশ্বাসে’।
আমরা সিনিয়ররা দিনে দিনে আমাদের জ্ঞাত অজ্ঞাতসারে সেই জায়গাগুলো হারিয়েছি। শুধু হারায়নি সেই ভালোবাসাহীন-আস্থাহীন-বিশ্বাসহীন মূল্যবোধগুলো,
যা আমাদের মাঝারীদের (না জুনিয়র না সিনিয়র) মধ্যে সংক্রমিত করেছি।
যারা দুদিন পরেই সিনিয়র হয়ে এই একই প্রশংসা বাক্যে নিঞ্চিত হবে-
আর নিশ্চিত থাকতে পারো আমরা যে পথে এগোচ্ছি তাতে তোমরা আজকের সেই জুনিয়াররা, যারা মাঝারী পর্ব পেরিয়ে সিনিয়র কোটায় অন্তর্ভূক্ত হলে একই উপাধি তোমাদের জন্যও অপেক্ষা করছে,চিন্তা করো না।

কিন্তু এমন তো হবার কথা ছিলো না।
আমরা কোনো জেনারেল বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মত গ্রাজুয়েশন বা পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী দিয়েই কাজ সেরেছি এমনটি তো নয়, - যেখানে শিক্ষকের ছবি কল্পনা করলে ক্লাস রুম ছাড়া কিছুই দেখা যায় না আর ছাত্রের ছবিতে শুধুই সারি সারি বেঞ্চ বা টেবিল চেয়ার। আমাদের গন্ডি তো বাকিদের থেকে সম্পুর্ণই আলাদা। আমাদের ছাত্ররা রাতের বেলা রেজিস্ট্রারদের হাত ধরে লিভার Palpate করতে শেখে,
কব্জির বিশেষ চালনায় Knee Jerk, Ankle Jerk দেখতে শেখে।
প্রফেসরদের বদান্যতায় কাপা কাপা হাতে Appenctormy করতে শেখে,
শেখে কি ভাবে Bleeding বন্ধ করতে হয়।
বার বার ভুল করে Non touch technique gloves পরতে শেখে।
Cardiac Message দিয়ে মৃত্যু পথযাত্রীকে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করে।
অপারেশনের মাঝ পথে এ্যাসিস্টেন্টের জায়গা ছেড়ে ব্লাড-ব্যাংক-এ দৌড়ে গিয়ে নিজের শরীরের রক্ত নিজে হাতে নিয়ে সেই দৌড় পায়েই OT তে বয়ে নিয়ে এসে আত্মীয়তার পরিচয়হীন Road Traffic Accident কিম্বা Stab Injury ভিকটিমকে বাচিয়ে তুলতে একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে।
মাঝ রাতে ইন্টার্নী কিংবা সি.এর টেলিফোন পেয়ে চোখ ডলতে ডলতে একবারে OT তে ঢুকে বিপদ উদ্ধারে হাতে হাত লাগিয়েছে তো এই সিনিয়ররাই। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের যোজন দূরত্বের ব্লাক বোর্ড- হোয়াইট বোর্ডের মত সম্পর্কের শিক্ষকরা তাদের ছাত্রদের কাছে নতজানু সম্মানে সম্মানিত হলে আমরা সিনিয়ররা তোমাদের চোখে এত বৈরী কেন?
কারন তোমরা আমাদের কখনোই সেই মর্যাদার উপযুক্ত করে দেখইনি।
বারবার তোমাদের বিশ্বাস আর আস্থা ভেঙ্গেছি আমরা,
যে সিনিয়র শিক্ষককে তোমরা সম্মানের সর্বোচ্চ জায়গায় বসিয়েছ,
তাকেই যখন বদলী ঠেকাতে এক মাঝারী আমলার সামনে নতজানু হতে দেখেছ,
তখন তোমার সেই মূল্যায়নের জায়গায় চিড় ধরবে না কেন? একই কর্মক্ষেত্রে বছরের পর বছর জোঁকের মত কামড়ে থাকার ভয়ঙ্কর চেষ্টায় যখন তোমারই সহপাঠী ছাত্র নেতাকে, তোমার শিক্ষককে চেম্বারে বসিয়ে আরেকটা রসগোল্লা খাওয়ানোর জন্য ধ্বস্তাধ্বস্তি করতে দেখ তখন আদর্শের আকাশ ফিকে হয়ে আসবে এটাই তো স্বাভাবিক।
একটা বাড়তি পদোন্নতির জন্য সারাজীবন আদর্শের বুলি কপচানো তোমার শিক্ষককে তুমি যখন কলেজের অডিটোরিয়ামে হল ভর্তি ছাত্র/ছাত্রীর সামনে অপদার্থ কোন রাজনৈতিক নেতার পদলেহন করা অসত্য ভাষনের স্রোত বইয়ে দিতে দেখ,
তখন তোমার নিজেকে বিধ্বস্ত, কনফিউজড মনে হতেই পারে।

কিন্তু আমাদের ঐতিহ্য তো এত মলিন ছিল না।
জীবনের কোন পরীক্ষায় প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় না হওয়া পিজি’র প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান সার্জারীর গোলাম রসুল স্যার, ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিনের সাবেক বিভাগীয় প্রধান জি এম চৌধুরী স্যার, গাইনীর মোখলেছুর রহমান স্যার, আইয়ের আহমেদ শরীফ স্যার, এ্যানেসথেসিয়ার শত শত পদ সৃৃষ্টিকারী শাহজাহান নুরুল সামাদ স্যার, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা বিএমএ’র সভাপতি, ইএনটির মাজেদ স্যার, বাংলাদেশে ইউরোলজীর প্রতিষ্ঠাতা লস্কর স্যার, পেডিয়্যাট্রিক্স অসংখ্য পদ সৃষ্টিকারী নুরুল ইসলাম স্যার, কিম্বা শিশু বিশেষজ্ঞ তালুকদার স্যার, প্রথম শহীদ মিনারের নকশাকারী বদরুল আলম স্যার, শহীদ ফজলে রাব্বী স্যার, শহীদ আলীম চৌধুরী স্যার তো আমাদেরই পূর্বসুরী।
ঈর্ষণীয় মেধা আর অসামান্য চিকিৎসা দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও এরা সযত্নে সাহসীকতার সাথে অর্থের কাছে পরাভুত হয়নি। টাকার বিনিময়ে যোগ্যতার পশরা যেমন সাজাননি,
তেমনি বাজার দরের সাথে তালে তাল মিলিয়ে Demand and Supply এর অর্থনৈতিক সূত্রকে বিত্তশালী হবার সিড়ি বানান নি।
আর তাই তাদের সম্মানের জায়গা এতটুকুও প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি কোনদিন।
তাদের নাম করতেই শ্রদ্ধায় আনত হতে ইচ্ছে করে সহজাত স্বাভাবিকতায়।
তাদের নামের পাশে আরোপিত Legend শব্দ ব্যবহার করতে হয় না।

তাহলে হঠাৎ করে মূল্যবোধ গুলো এতটা পাল্টে গেল কেন? আমরা মানতে চাই আর না চাই,
সেই পুরাতন কথাটাই আজ নতুন করে আবারো সত্য আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে "অর্থই অনর্থের মূল"। হ্যাঁ এটাই,টাকাই পাল্টে দিয়েছে আমাদের বেশীর ভাগকেই। আমরা সিনিয়রদের যেমন,
ঠিক তোমরা জুনিয়রদেরও। আমাদের অনেককে পাল্টে দিয়েছে টাকার উপার্জনের নেশা,
তোমাদের পাল্টাচ্ছে টাকা পাবার নেশা।
আর তাই কোনো এক তারিখের বিকেলে চেম্বার শুরু করে পরের তারিখের কয়েক ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও আমরা চেম্বার ছাড়তে পারিনা।
সূর্যোদয় সূর্যাস্তের কোনটাই দেখা হয় না আমাদের।
সন্তানের বৃদ্ধি আমাদের দেখতে হয় শয্যায় Horizontally. চেম্বারে রোগী দেখার ফাঁকে, অপারেশনের মাঝপথে আমাদের দৃষ্টি চলে যায় ধানমন্ডিতে নির্ণয়মান চতুর্থ ফ্লাটের ইন্টেরিয়র ডিজাইনে। সতীর্থের ফ্লাটের চাইতে নিজেরটার আয়তন ৫০০ ফুট কমের আফসোস বুকভাঙা দীর্ঘশ্বাস হয়ে বেরিয়ে আসে। ফেসবুকে বন্ধু সন্তানকে যখন কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া বা আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানের গাউন পরিহিত দেখি,
তখন বাংলাদেশের বিশ্বাবিদ্যালয়- মেডিকেল কলেজের পড়া সন্তানের পরিচয় আড়াল করি দাঁতে দাঁত চেপে। শেয়ার করা ছবি গৃহকত্রীর মোবাইলে পৌছামাত্র গৃহদাহের আগুন জ্বলে ওঠে দাউ দাউ করে।
সদ্য কেনা হ্যারিয়ারের বনেটে আয়েশে হেলান দেয়া বন্ধুর ছবিতে যখন লাইকের ছড়াছড়ি, তখন অন্যদিকে নিজ সন্তানের চোখে আন লাইকের চাইতে ডিসলাইকের ছবিটাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
আপাত নির্দোষ আমন্ত্রনে বন্ধুর রিসোর্ট কিম্বা খামার বাড়ীতে ব্যাচের রি-ইউনিয়ন থেকে ফেরার পথে স্ত্রীর কাছে প্রতিজ্ঞা করতেই হয় আগামী শীত আসার আগেই এর চাইতে জমকালো পাল্টা আয়োজন করতেই হবে।
আজকাল ফেসবুকে ছড়াছড়ি বেঢপ ভুড়িওয়ালা শর্টস পরা আমদের ছবি নায়েগ্রার সামনে, সেনাকুঞ্জে ছেলের বৌভাতের ছবি,
এমন কি পোস্ট গ্রাজুয়েশন পরীক্ষায় পরীক্ষকের ছবিও বাদ যায় না।
সাদা মাটা কোন কন্ফারেন্সের Pleasure trip এ অংশ নিয়ে আমরা প্রশিক্ষণের বিজ্ঞপ্তি দিই পত্রিকায়।
আমরা সিনিয়ররা নিজের অজান্তেই এই দূষিত শিক্ষা সংক্রমিত করে চলেছি আমাদের উত্তরসরীদের রক্তে, আর তাদের Immune System এর Lymphocyte এবং Macrophage গুলো এতই দূর্বল যে,
ঐগুলোকে ঠেকানো তো দূরে থাক Cytotoxic Storm এর ঝড়ে নিমিষেই মনস্তাত্ত্বিক Multi Organ Failure এর জন্ম দিচ্ছে।
আর সেই বিষবৃক্ষ সঞ্চারিত হচ্ছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। কথায় বলে ‘অসুখই সংক্রামক- স্বাস্থ্য নয়’।
তাই আমাদের মাঝে গুটিকয়েক আদর্শবাদী সিনিয়ররা সমাজে অপাংতেয়ই হয়ে পড়ে থাকেন। তাদের কপালে জোটে আপ্তবাক্য -‘পান না বলেই খান না’।
তোমরাও কিন্তু বুকে হাত দিয়ে বলতে পারো না যে, তোমরা সবাই ধোঁয়া তুলসী পাতা।
একই প্লাটফর্মে যাত্রা শুরু করা তোমাদের বন্ধুরা যখন পোস্ট গ্রাজুয়েশন করে ওপারের প্লাটফর্মে পৌছে যায় তখন তাদের চোখেই কিন্তু তোমাদের হিসেব "Simple MBBS",সেটা তোমরা পড়তে পারো আর নাই-ই পারো।
পোস্ট গ্রাজুয়েশন করার পর দিন থেকেই তাদের স্বপ্ন লক্ষ্য আর আদর্শ দিক পাল্টায় না - পারবে বলতে জোর দিয়ে? হ্যারিয়ার মার্সিডিজ, প্রাডো, পাজেরো, ফ্লাট রিসোর্ট - খামার বাড়ী, কানাডার ডুয়াল সিটিজেনশীপ তোমাদের স্বপ্নের অনেকটা জুড়ে নাই বলতে পারবে জোর দিয়ে? সিনিয়রদের হাতে তৈরী তোমরা জুনিয়ররা,
তাদের সামনেই তাদের চাইতে তোমাদের অপারেশন রেট ৩ গুণ-৫ গুণ বেশি নির্ধারণ করনি?
CT, MRI, USG, ECG, Uroflometry বা অন্যান্য INVESTIGATION সমূহ যৌক্তিকভাবে করাও,
বলতে পারবে বুকে হাত দিয়ে। প্রমোশন নিশ্চিত করতে অথর্ব সিনিয়রকে Legendary বলতে বলতে শব্দটার শ্লীলতাহানী কে করেছে?
ম্যাডামের কোলে বসে ছবির পোস্ট,
এক দিনে ছয় শাড়ী পড়ার হাস্যকর প্রতিযোগীতায় লাইক -কমেন্ট করার জন্য হুমড়ী খেয়ে পড়েছে কারা?
তারা কি ভিন্নগ্রহের?

সবাইকে এক পাল্লায় মাপার প্রয়োজন নেই।
সিনিয়রদের অনেকেই আছেন যারা আজও মূল্যবোধে প্রতিষ্ঠিত- কনসালট্যান্ট থেকে অধ্যাপক- অব্দি সব সময়ই। আমার মত অনেক সিনিয়রই আজও কোভিড হাসপাতালে যান নিয়মিত।
হাসপাতালের Triage,
PPE-Donning-Doffing, Management Protocol, Oxygen Therapy, High flow Oxygen, Ventury Mask, Rebreathing Mask, Non Invasive Ventilator, RT-PCR Lab Management, ICU, জুনিয়রদের Duty Roster, Meals, Quarintine Accomodation এবং সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ‘SAFETY FIRST’ নিশ্চিত করতে ২৪ ঘন্টার বেশীর ভাগ সময়ই ব্যাস্ত রেখেছি নিজেকে।
আমার হাসপাতালের সব জুনিয়র ডাক্তাররা অন্তত এটা জানে আমি ওদের অরক্ষিত রেখে পালাবো না।
ওদের যোগ্য মর্যাদা আর আর্থিক সম্মানের জন্য লড়বো সামনে থেকে।
যুদ্ধের ডাক পেয়েও তোমাদের জুনিয়রদের অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছে, কোয়ারেনটাইন আর আইসোলেশনের নাটকও কম হয় নি- যেটা আমার থেকে তোমরাই ভালো জানো।

আমি আমার নিজের বিবেকের কাছে পরিস্কার বলেই জোর গলায় বলতে পারি- আমি সিনিয়র কিন্তু রাজাকার নই। জেনারেল ওসমানী মুক্তিযুদ্ধে একটা গুলিও নিজে ছোড়েন নি কিন্তু তিনিই মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক- কোনো বিতর্ক ছাড়াই-এটাই সত্যি।
ফলে যে সকল সিনিয়ররা আমার মত প্রত্যক্ষে না থেকেও পরোক্ষভাবে আছেন তারাও করোনা যোদ্ধা।

তাই এসো এই যুদ্ধের ডাকে কে সাড়া দিলো আর কে না দিল সেটা দেখার দরকার নেই। আমাদের হাজার হাজার ভেন্টিলেটার নেই, নেই সামান্য High flow OxygenTherapy-র সুযোগও।
তারপরেও এসো আমরা আমাদের সামর্থ্যরে সবটা দিয়ে চেষ্টা করি।
তোমাদের মত জুনিয়ররাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। আমাদের কথা জানি না- আমার কথা জানি- আমি আছি তোমাদের সাথে।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ও রাজাকার ছিলো, ছিলো দালাল। আজকের যুদ্ধেও দালাল-রাজাকার সবই আছে।
যুদ্ধ শেষে সেই রাজাকারদের তালিকা হবে কিনা জানি না- কিন্তু অন্তরের ঘৃণায় সেই রাজাকার-দালালেরা প্লাবিত হবে নিঃসন্দেহে।
আর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান, সেটা নিয়ে কিছু বলতে চাইনা, শুধু এটুকু বলি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা কয়েক হাজার টাকা ভাতার লোভে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়নি।
যুদ্ধ শেষে তোমাদের সবাইকে চাই অক্ষত নিরাপদ।
মনে রেখ আত্মহত্যা বাহাদুরী নয়।
আর এই যুদ্ধ আমাদের আরেকবার সুযোগ দিক যাতে আমাদের হারিয়ে যাওয়া মানবিক মূল্যবোধে আমারা আরেকবার ফিরতে পারি।
___________________

অধ্যাপক মওদুদ আলমগীর পাভেল
অধ্যাপক (সার্জারী), টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ, বগুড়া
প্রাক্তন অধ্যক্ষ
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, বগুড়া এবং দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ, দিনাজপুর; এবং
সাবেক সভাপতি, সোসাইটি অব সার্জনস অব বাংলাদেশ।

________________________________

AD..

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়