Ameen Qudir

Published:
2020-04-09 02:35:39 BdST

'যে রাষ্ট্রের শিকড় থেকে শিখর পর্যন্ত চিকিৎসক বিদ্বেষ সেই রাষ্ট্রের কাছে কিছুই চাই না '


 

ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ
__________________________________
·
আমি কখনোই ঝুকিভাতা চাইনি।
'ঝুকি ভাতা না দিলে রুগিসেবা দেবো না'
এমন শর্ত দেওয়ার তো প্রশ্নই আসেনা।

আমাদের সহকর্মীদের কেউ কেউ স্যোসাল মিডিয়ায় ঝুকিভাতার এ্যাপিল জানালেও আমি হলফ করে বলতে পারি কেউই কোন শর্ত দেয়নি, কেউই বলেনি যে ঝুকিভাতা না দিলে তারা রুগিসেবা দিবে না।

আমি আগের এক স্ট্যাটাসে লিখেছিলাম আমি ঝুকিভাতা চাই না।
আমি অতি স্পষ্ট করে বলেছিলাম রুগির সেবা দিতে গিয়ে যতক্ষণ পর্যন্ত না করোনাক্রান্ত হচ্ছি ততক্ষণ পর্যন্ত রাজকোষ থেকে এক পয়সায়ও অনুদান বা ভাতা চাই না।

আমি শুধু বলেছিলাম রুগির সেবা দিতে গিয়ে নিজে যদি করোনাক্রান্ত হই তাহলে রাষ্ট্র যেন আমার চিকিৎসার ব্যায়ভার বহন করে আর যদি করোনাক্রান্ত হয়ে এই পৃথিবীর আলো বাতাসে আর ফিরে না আসি তাহলে রাষ্ট্র যেন আমার পরিবারের জন্য একটা বিশেষ অনুদানের ব্যাবস্থা করে।

আজ আমার মোহভঙ্গ হয়েছে।
যে রাষ্ট্রের শিকড় থেকে শিখর পর্যন্ত প্রতিটা পরতে পরতে চরম মাত্রায় চিকিৎসক বিদ্বেষ সেই রাষ্ট্রের কাছ থেকে আমি আর কিছুই চাই না, কিছুই আশা করি না।

না কোন বীমা চাই না, কোন ভাতা চাই না, কোন অনুদান চাই না।
আমি চাই না আমার নাম কোন বীমার লিস্টে উঠুক।

রুগির চিকিৎসা দিতে গিয়ে যদি করোনাক্রান্ত হই, যদি তখন চিকিৎসা না করাতে পারি হাসিমুখে মৃত্যূকে আলিঙ্গন করে নেবো।

আমার পরিবারের জন্যও কোন অনুদান চাই না।
আর দশটা পরিবারের ক্ষেত্রে যা ঘটে আমার পরিবারের ক্ষেত্রেও তাই ঘটবে, চিন্তা কি?
আর দশটা অতি সাধারণ নাগরিকের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতটা যেমন হতে পারে আমার মাসুম সন্তানটির ভবিষ্যতও তেমনি হবে, ক্ষতি কি?

খুব বেশীদিন আগে নয় এইতো মাত্র গতবছরই আমার ১৫জন চিকিৎসক সহকর্মী এই রাষ্ট্রেরই নাগরিকদেরকে ডেঙ্গুর হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেদেরকে মৃত্যূর হাতে সপে দিয়েছিলো!

কি পেয়েছে তারা?
কি পেয়েছে তাদের পরিবার?

এই রাষ্ট্র কি তাদের আত্মত্যাগকে কোন স্বীকৃতি স্যালূট জানিয়েছে?
এই রাষ্ট্র এই একবছরে একবারও কি তাদের পরিবারের খোঁজ নিয়েছে?

আমার সেই সহকর্মীর পরিবার ও সন্তানেরা যেভাবে বেঁচে আছে আমার পরিবার ও সন্তানেরাও সেইভাবে বেঁচে থাকার উপায় খুঁজে নেবে, ইনশাল্লাহ্।

জানিনা কোন চিকিৎসক বা কয়জন চিকিৎসক করোনার ভয়ে হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়েছে!

কখনো কি শুনেছেন কোন সেনাপতি তার সৈন্যদলকে কোনরকম যুদ্ধাস্ত্র ছাড়াই যুদ্ধের ময়দানে ঠেলে দিয়েছেন?

যদিও আপনারা সেই শুরু থেকেই ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে আসছেন যে আপনাদের শতভাগ প্রস্তুতি আছে কিন্তু আমরা দেখলাম বাস্তবতা একেবারে শতভাগ উল্টো।

আমরা দেখলাম করোনা যখন প্রথম আঘাতটা হানলো তখনও আমাদের হাতে কোন অস্ত্র নেই, কোন বর্ম(পিপিই) নেই!
সেই পরিস্থিতিতে কোন চিকিৎসক যদি ভয় পেয়ে থাকেন তবে সেটা কি অন্যায়!?
হয়তো কেউ কেউ ভয় পেয়েছেন ঠিকই তবে যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে কেউ পালাননি।

আঘাত হানার প্রায় দশদিন পর যে বর্ম(পিপিই) আমাদেরকে দিলেন তাও নিছকই অপ্রতুল, সেই অপ্রতুল বর্ম গায়ে চড়িয়েই যুদ্ধের ময়দানে থেকেই আমরা জান লড়িয়ে যাচ্ছি।

আপনারা অবশ্য ফাঁকাবুলি এখনও আউরে যাচ্ছেন- আপনাদের হাতে লাখ লাখ বর্ম(পিপিই) আছে।
যেসব উপজেলায় ন্যূনতম ১৫জন চিকিৎসক পোস্টেড সেখানে দিচ্ছেন মাত্র ৪টি করে বর্ম(পিপিই)।
তারপরেও আপনাদের গলাবাজি এখনো থামেনি!

এখানে অনেক চাটুকর মোড়ল হয়তো ছুটে এসে বলবেন বৃটেনে চিকিৎসকরা ময়লা ফেলার পলিথিন পরে রুগি সামলাচ্ছে আর তোমরা পিপিই পিপিই করে গলা ফাটাচ্ছো!
তাদেরকে বলতে চাই যুদ্ধের তিনমাস পরে এসে বৃটেনের এই অবস্থা।
আপনার কেন যুদ্ধের শুরুতেই এই অপ্রতুলতা যেখানে আপনারা তিনমাস আগে থেকেই বলে আসছেন আপনারা শতভাগ প্রস্তুত!

এতো অব্যাবস্থাপনা আর এতো অপ্রতুলতাকে(লেখার কলেবর অনেক বড় যাওয়ার আশঙ্কায় এই অপ্রতুলতা আর অব্যাবস্থাপনা নিয়ে এখানে আলোচনা করতে চাই না) মেনে নিয়েই আমরা জান লড়িয়ে যাচ্ছি তবুও আজ পর্যন্ত কারো হাসিমুখের একটা ধন্যবাদ পর্যন্ত পেলাম না!
প্রতিদিন হাজার হাজার লাখ লাখ রুগি সেবা পেয়ে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে তাদের কথা কেউ বলছে না!

একটা দুটো অনিয়ম হলেই পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রই যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ছে!
এমনকি যে রুগিটি সেবা পেয়ে সুস্থ্য হয়ে যাচ্ছে সেই রুগিটিও কখনো কখনো চিকিৎসকের চৌকাঠটা পেরিয়েই চিকিৎসককে 'কসাই' বলে গালি দিচ্ছে!

আজ প্রিয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর দেশের প্রায় শতভাগ চিকিৎসকের মতো আমিও কষ্ট পেয়েছি।
সেই কষ্ট থেকেই এই লেখা!
তবে এই বিষয় নিয়ে এটাই শেষলেখা আর লিখবো না।

প্রিয় চিকিৎসক ভাইয়েরা,
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর অনেকেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েয়েছেন, অনেকেই অনেককে দুষেছেন, আমিও হয়তো দুষেছি।

অনেকেই বলেছেন আমাদের নেতৃত্বের ব্যার্থতার কারনে আমাদের পেশার মর্যাদাহানি হয়েছে।

যদি সত্যিকারার্থেই তাই মনে করেন তাহলে আপনিও প্রতিজ্ঞা করেন যে কোন ঝুকিভাতা বা বীমাসুবিধা না নিয়েই আপনি রুগিসেবা দিবেন তাতে যা হয় হোক।
প্রতিজ্ঞা করেন বীমার লিস্টে নাম তুলার জন্য লাইন না দিয়েই রুগিসেবায় মনযোগ দিবেন।
জীবনই যদি না থাকে কি করবেন এই পাঁচ লাখ, দশ লাখ, পঞ্চাশ লাখ কিংবা কোটি টাকা দিয়ে!

যদি পেশার মর্যাদা নিয়ে এতটুকু খেদ থাকে তাহলে এই গাটসটুকু দেখান আর তা যদি না পারেন তাহলে পেশার মর্যাদার প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে হাহুতোশ করার বা অন্যকোন নেতাকে দুষবার কোন অধিকারই আপনার নেই।

আপনিই আপনার সিদ্ধান্তের মালিক।
আপনার আপনার করে একেকজনের সিদ্ধান্ত মিলেই হাজারজনের সিদ্ধান্ত।
হাজার জনের সিদ্ধান্তই পারবে পেশার মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে, কোন নেতা এককভাবে পারবে না!!
_______

এতো বড় লেখা ধর্য্য নিয়ে পড়ার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
________________________
ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ।
সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ,স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, চিকিৎসক পরিষদ, বিএসএমএমইউ।
Doctor ,t Bangabandhu Sheikh Mujib Medical University
Former Secretary General বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ শাখা ,দিনাজপুর।
Studied MBBS. at Dinajpur Medical College, Dinajpur

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়