Ameen Qudir

Published:
2020-02-18 23:08:58 BdST

ডাক্তার মেয়েটাই জানে:ডাক্তার ছেলেটাই পারে:একটা ডাক্তার দম্পতিই জানে


ডাঃ শামছুল আলম

___________________

ডাক্তার ছেলেটাই পারে
কেমন করে আজিজ সুপারে শুধু একটা কাঁথা বিছিয়ে ফ্লোরিং করে ঘুমাতে হয় ;
মায়ের হাতের রান্না ছাড়া শুকনো রুটি, আধা বাটি ডাল দিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে হয়;
কেমন করে বিকেলের নাস্তার টাকা বাঁচাতে, রাতের খাবার একটু আগে খেয়ে নিয়ে রাত জেগে পড়তে হয় ।
ডাক্তার মেয়েটাই জানে
কেমন করে শাশুড়িকে কম ঝাল দিয়ে, আলু -পটল ভাজি করে, সকাল বেলা নাস্তা দিতে হয় I নিজের বাচ্চার মুখ থেকে বুকের দুধটাকে সরিয়ে রেখে, সময়ের অভাবে না খেয়েই খালি পেটে হাসপাতালে ছুটতে হয় ।
একটা ডাক্তার দম্পতিই জানে
কেমন করে ঈদের বাজেট করতে হয়।ননদের জামাইয়ের পাঞ্জাবি আর ছোট ভাইয়ের বউয়ের শাড়ি কিনতে হয় I তারাই জানে কেমন করে পুরোনো পাঞ্জাবি আলতো করে ধুয়ে নিয়ে নতুন করে পরতে হয় I
কেমন করে বোনের বাড়ি সেমাই-চিনি পাঠাতে হয়।

একটা ডাক্তার ছেলেই জানে
কেমন করে ক্লিনিকের নাইট ডিউটি শেষ করে সকাল বেলা হাসপাতালে অনারারি করতে হয় , অর্থোপেডিক্সের ওটিতে ঘন্টা দুয়েক পেশাব চেপে রাখতে হয় ।

ডাক্তার মেয়েরাই জানে
কেমন করে ইতর পুরুষের ভিড় এড়িয়ে হাসপাতালে চলতে হয় ;অন্য নারীর জরায়ু কেটে একটু করে থামতে হয় ; হঠাৎ করে তার হয়ে যাওয়া মাসিকের রক্ত কেমন করে লুকাতে হয় ।

একটা ডাক্তার দম্পতিই জানে
কেমন করে বৃত্তটাকে ছোট করে আঁকতে হয় ;
সেই বৃত্তের পরিধিটা কেমন করে বাড়াতে হয় ;
কোন মানুষটার প্রয়োজনে তাকে একটু থামতে হয় ;একজনের আয় দিয়ে অন্যজনকে পড়তে হয় ।

একটা ডাক্তার ছেলেই পারে
কেমন করে মৃত বাবাকে কবর দিয়ে পরদিন হাসপাতালে ফিরে যেতে হয় ;
পরিবারের হাল ধরতে গিয়ে বয়সটাকে ভুলতে হয়;
বন্ধুরা সব বিয়ে করলেও তাকে কিন্তু ক্লিনিকের নাইট ডিউটিতে চেয়ারে বসেই স্টেথো জড়িয়ে ঘুমাতে হয় ।

ডাক্তার মেয়েরাই জানে
কেমন করে তার মিসক্যারেজের ব্যথা ভুলে পরদিনই ভাইবা বোর্ডে হাজির হতে হয়;I মা-বাবার সব কষ্ট শেষে, আশা-ভালোবাসার স্বপ্ন ভুলে অন্য মানুষের ঘরে, ডাক্তার বউ হয়ে শোভা বর্ধন করতে হয় ;
চুলার পাশে পড়ার বই রেখে লাউ দিয়ে চিংড়ি রাঁধতে হয়।

একটা ডাক্তার দম্পতিরাই জানে
একই পাঙ্গাস মাছ কেমন করে দ্বিতীয় দিনেও রাঁধতে হয়।
মেয়ের জন্য জামা না কিনে পরীক্ষার খরচ জোগাতে হয় ;
দূর দেশে বেড়াতে না গিয়ে ঘরের পাশে নদী তীরে হাসি মুখে ঘুরে আসা যায়।
ক্লান্ত দেহে শুধু জড়িয়ে ধরেই রাতের পর রাত কাটানো যায়।

মাঝে মাঝে আমি ভাবি, কেমন করে এরা এইসব পারে? কোথায় পেয়েছে তারা এই শক্তি ?
তারপর একদিন মনে হলো সৃষ্টিকর্তা যখন মানুষের ভাগ্য আর কর্ম নির্ধারণ করেন, সেদিন তিনি ডাক্তার ছেলেটা আর ডাক্তার মেয়েটাকে একটু হয়তো বেশি মনবল বাড়িয়ে দেন।
এই শক্তিটা হয়তো আমরা তাঁর কাছ থেকেই পেয়েছি।

Human body and mind is our business.
This gift is given by Almighty Himself.
We should respect it, accept it.

একজন মা যখন হাসপাতালে তার আটকে পড়া মৃত প্রায় সন্তানকে জীবিত খুঁজে পান, একজন দাঁতের রোগী যখন চিকিৎসা শেষে ব্যথা মুক্ত হন, তখন এই মানুষগুলো আমাদেরকে মুখে কিছু না বললেও তাদের আত্মা নিশ্চয়ই আমাদের জন্য দোয়া করে ;

অবশেষে কোন একদিন আমরা যখন সবাই সৃষ্টিকর্তার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো, সেদিন তাঁর কাছে দুহাত তুলে বলবো,
"তুমি মানুষ সৃষ্টি করলে খোদা, সেই মানুষের যত্ন নিতে আমাকে দায়িত্ব দিলে, আমি আমার সাধ্য মত চেষ্টা করেছি, এখন আমাকে সেই প্রতিদান দাও"

সেদিন, সেই দয়ালু নিশ্চয়ই আমাদের ফিরিয়ে দিবেন না;

ডাঃ শামছুল আলম. সি ও মে ক/ ১৯৯৬-৯৭

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়