Ameen Qudir

Published:
2020-02-16 23:40:23 BdST

বাংলাদেশী টিভি নাটকের জ্ঞানগর্ভ তথ্য: ইন্টার্নশীপ শেষ হলে নার্স হয়ে যান ডাক্তার


ডেস্ক
___________________

বাংলাদেশের টিভিনাটকে বিচিত্র সব তথ্য দিয়ে জনগন ও দর্শকদের মগজ
ধোলাই করছেন একশ্রেনীর   নাট্যকার লেখক ও নাট্য নির্মাতা। সেসব নাটক দিব্যি প্রচার করছে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল গুলো।
"ফিরে এসো রুবি:" টিভি নাটকে জানা গেল নতুন তথ্য।
ওই নাটক সংলাপের মাধ্যমে জানাচ্ছে, ইনটার্নশীপ শেষ হলে নার্সরা ডাক্তার হয়ে যান।
এই নাটকটির ভিডিও দেখলে দর্শক ৪ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের মধ্যেই এই অসাধ্য ও মেডিকেল কারিকুলাম বিরোধী তথ্য জানবেন। সেখানে অভিনেত্রী মাহজাবিন সংলাপে বলছেন, :" আর এই ইন্টার্নশীপ শেষ হওয়ার পর আমরা (নার্সরা)ই কিন্তু ডাক্তার হব। "
নাটকটি সম্প্রতি বিশ্ব ভালবাসা দিবসে মহা সমারোহে সম্প্রচার হয়েছে।
এসব সংলাপে ডাক্তার সমাজে সৃষ্টি হয়েছে হাস্যরস। না হাসবো , না কাঁদবো।
বাংলাদেশের কোন মেডিকেল কলেজে এরকম অদ্ভুত সুযোগ নেই। কিন্তু সে সুযোগ করে দিল এই জাতীয়  নাটক।
এখানে নাটকের লিঙ্ক দেয়া হল :https://www.youtube.com/watch?v=6cnici14XyU&feature=share&fbclid=IwAR1rRzgnObWz4O9W5gnRwVvVstD2MvcvEgoRNp_SVkDF5Fo6TeRdVLDHZzc

এ বিষয়ে বিশিষ্ট চিকিৎসক লেখক ডা. আজাদ হাসান তার লেখায় জানান ,

চিকিৎসক বিদ্বেষ মূলক নাটক বন্ধ করা উচিৎ।
♦ সবাই কেবল সুযোগ পেলেই ডাক্তারদের ব্যবহার ভালো নয় বলে ডাক্তারদের ব্যবহার ভালো করার ছবক দেন।
কিন্তু ডাক্তারদের সাথে রোগীদের ব্যবহারও যে মার্জিত এবং পরিশালিত হওয়া উচিৎ সে কথা কেউ বলেন না।
আলোচ্য নাটকে জনপ্রিয় অভিনেতা "অপূর্ব"-এর মুখ দিয়ে যে ধরনের ডায়লগ বলানো হয়েছে তা কোনো ভদ্র সমাজের ভাষা, ভদ্রোচিত আচরণ এর মধ্যে পড়ে না। হাসপাতাল একটি সংবেদনশীল স্থান। এখানে মানুষ তার অসহায় অবস্থায় আস্থার স্থান মনে করে ইস্পিত সেবা নিতে আসেন। এটা তাই একটি পবিত্র স্থান।
বিহেভিয়ারাল সাইন্স বলে একটি সাবজেক্ট আছে যা বহিঃবিশ্বে মেডিক্যাল কারিকুলামের অংশ, যা মানুষকে আচরণ গত দীক্ষা দিয়ে থাকে। আমার মতে এই বিষয়টি মেডিক্যাল, নন-মেডিক্যাল সবারই পাঠ্যসূচী বা সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিৎ।

আমরা স্বীকার করি কিংবা না করি, আমাদের দেশের সিনেমায় সংস্কৃতির নামে যেভাবে অশ্লীল দৃশ্য কিংবা ধর্ষণের দৃশ্য দেখানো হয়, তাতে করে বর্তমানে সমাজে ধর্ষণ এবং ব্যভিচার বৃদ্ধির জন্য, পরোক্ষভাবে এসব চলচ্চিত্র যে অনেকাংশেই দায়ী তা বলা বাহুল্য।
আমাদের সমাজের সামাজিক অস্থিরতা, মানবিক মূল্যবোধ, নৈতিক অবক্ষয়, ধর্মীয় মূল্যবোধ আজ তলানীতে পৌছাতে বাকী। এসব অবক্ষয় হতে উত্তরণের ক্ষেত্রে মিডিয়া আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে পারে। মিডিয়ার কাছে মানুষের সেটাই প্রত্যাশা।

কিন্তু আজকাল বিভিন্ন সরকারী এবং বেসরকারি হাসপাতালে স্থানীয় মাস্তানদের দ্বারা চিকিৎসকরা যে ভাবে অহেতুক নিগৃহীত হচ্ছেন, তার জন্যও এ ধরনের ঔদ্ধত্য পূর্ণ ডায়লগ এবং অভদ্র আচরণ সম্বলিত নাটক/সিনেমার চিত্রায়ণ পরোক্ষভাবে দায়ী বলে আমার ধারণা। এ ধরনের অস্রাব্য ভাষার প্রয়োগ এবং আচার / ব্যবহার সমাজকে কি মেসেজ দেয়?
হাসপাতাল নিয়ে নাটক/সিনেমা করেন তাতে আপত্তি নেই, তবে সেটা যেনো বাস্তবতা বিবর্জিত না হয়, সেটা যাতে সমাজে নেগেটিভ ইম্পেক্ট না সৃষ্টি করে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সব সময় চিকিৎসকদের নিয়ে নেগেটিভ নাটক না তৈরী করে, চিকিৎসকরা যে কি ধরনের সীমাবদ্ধতার মাঝে চিকিৎসা সেবা সচল রেখেছেন তা তুলে ধরার অনুরোধ রাখছি।
এ কথা অনস্বীকার্য যে, সমাজে প্রচলিত সামাজিক আচার আচরণ এবং অসংলগ্নতা তুলে ধরতে মিডিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। তাই মিডিয়ার কাছে প্রত্যাশা হলো, নাটক চিত্রায়নের ক্ষেত্রে আপনারা আরো সহানুভূতিশীল এবং সহনশীল ও দায়িত্বশীল আচরণ করবেন, কোনো রকম উসকানিমূলক নয় বরং ভদ্রোচিত এবং পরিশালিত বোধ বজায় রেখে ডায়লগ নির্বাচন করবেন। যাতে করে সমাজে অস্থিতিশীলতাকে উসকে দেয়া নয়, বরং বর্তমান বৈরী পরিবেশের মাঝে চিকিৎসকরা যাতে কিছুটা স্বস্তিতে কাজ করতে পারেন, যা চিকিৎসক বান্ধব পরিবেশ তৈরীতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারেন, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে অনুরোধ রাখছি।

আজকের সময়ে চিকিৎসক সমাজের এটাই প্রত্যাশা।

ডা. আজাদ হাসান

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়