Ameen Qudir

Published:
2019-10-20 05:48:56 BdST

জেনারেল প্র্যাকটিশনাররা কখনও ৫০ শতাংশ চিকিৎসা খরচ কমাতে সক্ষম



ডা.অসিত মজুমদার_______________________________


জিপি সিস্টেমঃ
জিপি কী?
বাংলাদেশে জিপি শব্দটি ততটা পরিচিত নয় যতটা পরিচিত অনেক উন্নত দেশে। লিখিত অলিখিত সরকারি বেসরকারি সব পর্যায়ে জিপি কম বেশী প্রচলিত হলেও বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এটি ততটা শক্তিশালীরূপে আভির্ভূত হতে পারেনি। এর কারণে না গিয়ে কীভাবে জিপি সিস্টেমকে মানুষের পদ্ধতিগত ভাবনায় নিয়ে মানবতার কল্যাণে কাজ করা যায় এব্যাপারেই আমাদের সবার কার্যকরী ভূমিকা রাখা দরকার। বর্তমানে বিশ্বে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ডসহ কিছু কমনওয়েলথভুক্ত দেশে অত্যন্ত শক্তিশালীভাবে স্বাস্থ্য সেবায় এই জিপি সিস্টেম কার্যকর আছে। এজন্যই ওদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাটাও অত্যন্ত শক্তিশালী এবং জনকল্যাণমুখী। জিপি এবং শক্তিশালী রেফারাল সিস্টেম প্রতিষ্ঠিত হলে গড় পড়তায় চিকিৎসা খরচ অনেক অনেক কমে যাবে। কোন কোন ক্ষেত্রে এই খরচ ৫০% এ নেমে আসবে।
কে জিপি হতে পারেনঃ
জিপি বা জেনারেল প্র্যাকটিশনার বা ফ্যামিলি ফিজিসিয়ান বা প্রাইমারী কেয়ার ফিজসিয়ান বা জেনারেলিস্ট হচ্ছে একজন হাই প্রোফাইলড পেশাগত চিকিৎসক যিনি সরকার অনুমোদিত স্ট্যান্ডার্ড মান বজায় রাখা কোন মেডিক্যাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে পাস করা একজন গ্র্যাজুয়েট ডাক্তার। জিপি আপনাকে তথা মহিলা পুরুষ শিশুসহ সব বয়সী সবার নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবাসহ যে কোন এক্সিডেন্ট, ইমারজেন্সী, ইমিউনাইজেশন, লো কমপ্লেক্স সার্জারী , ক্রনিক ডিজিজ, একিউট নন লাইফ থ্রেটেনিং ডিজিজ, প্রি হসপিটাল ইমার্জেন্সী কেয়ার, ডেলিভারী, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার, নিউরো, ইউরো, মেডিসিন, সার্জারী, গাইনী, শিশু, বাত ব্যথা, প্যারালাইসিস, এন্ডোক্রাইন, অর্থোপেডিক, কলোরেক্টাল, প্রিভেন্টিভ কেয়ার, হেলথ এডুকেশন, শিশু, এডোলেসেন্ট, জেরিয়াট্রিক, হসপিস, প্যালিয়েটিভ, স্লিপ এবং স্পোর্টস মেডিসিনসহ সব ধরণের চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকবেন।
জিপি হওয়ার যোগ্যতাঃ
কাউকে জিপি হতে গেলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে হাইলি একাডেমিক প্রোফাইলসহ একটা হাইলি কমপিটিটিভ পরীক্ষার মাধ্যমে পাস করেই তবে চান্স পেতে হয়। তারপর পাঁচ বছর ইনটেনসিভ পড়াশোনা শেষে পরীক্ষা দিয়ে মেডিক্যাল গ্র্যাজুয়েট হলে তারপর ইনটার্নশীপ কমপ্লিট হলে তবেই জিপি হবার যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। একজন জিপি ছাত্রাবস্থায় যেসব বিষয়ে পড়াশুনা করে থাকে দক্ষতা অর্জন করে থাকেনঃ
প্রথম দুই বছরঃ
এনাটমী, ফিজিওলজী ও বায়োকেমিস্ট্রি, এরপর প্রথম পেশাগত পরীক্ষা
তারপর দুই বছরঃ কমপ্রিহেনসিব মেডিক্যাল কেয়ার
প্যাথলজী, কমিউনিটি মেডিসিন, ফার্মকোলজী, এবং ফরেনসিক মেডিসিন ও মেডিসিনাল আইন, এরপর দ্বিতীয় পেশাগত পরীক্ষা
পাশাপাশি
মেডিসিন ও এর সকল শাখা,
সার্জারী ও এর সকল শাখা
গাইনী এন্ড অবস্টেট্রিক্স
শেষ এক বছরঃ
মেডিসিন ও এর সকল শাখা
সার্জারী ও এর সকল শাখা
গাইনী এন্ড অবস্টেট্রিক্স
টানা তিন বছর ধরে একজন মেডিক্যাল ছাত্র উল্লেখিত ক্লিনিক্যাল বিষয়ে একাডেমিক লেকচার, টিউটরিয়াল, গ্রুপ ডিসকাশন, ক্লিনিক্যাল ওয়ার্ড প্ল্যাসমেন্ট ক্লাস সম্পন্ন করে থাকেন।
এরপর ফাইনাল পেশাগত পরীক্ষা।
ইনটার্নশীপঃ টানা পাঁচ বছর একাডেমিক কোর্স সমাপ্তি শেষে এরপর ফাইনাল পেশাগত পরীক্ষায় পাস করার পর টানা এক বছর মেডিসিন, সার্জারি ও গাইনীসঃ চিকিৎসা বিজ্ঞানের সকল শাখায় পূর্ণ রেসিডেন্সিয়াল ইনটেনসিভ প্রশিক্ষণই ইনটার্নশীপ। এসময় একজন ইনটার্নশীপ কার্যতঃ কোন প্রকার ছুটিও ভোগ করতে পারেন না।
জিপির যোগ্যতাঃ
এমবিবিএস পাসের পর সফলভাবে ইনটার্নশীপ প্রশিক্ষণ সমাপ্তি শেষে একজন চিকিৎসক জিপি বা জেনারেল প্র্যাকটিশনার বা ফ্যামিলি ফিজিসিয়ান বা জেনারেলিস্ট হিসেবে চিকিৎসা করার অনুমোদন লাভ করে। একজন জিপি চিকিৎসার পাশাপাশি রোগী এবং স্পেশালিষ্ট এর মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে থাকেন।
অতিরিক্ত প্রশিক্ষণঃ
আমেরিকায় একজন চিকিৎসক আরও অতিরিক্ত তিন বছর প্রশিক্ষণ নিয়ে আমেরিকান বোর্ড অব ফ্যামিলি মেডিসিন এর জিপি হিসেবে সার্টিফাইড হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে। আমাদের দেশে সরকারীভাবে ওরকম কোর্স চালু না হলেও বেসরকারিভাবে অনেকেই এরকম কোর্স সম্পন্ন করে যাচ্ছেন।
এক্ষেত্রে একজন জিপিকে মেডিসিন, সার্জারী, গাইনীসহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের সকল শাখায় হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নিতে হয় যাতে সব ধরণের রোগী অত্যন্ত দক্ষতার সাথে চিকিৎসা করতে সক্ষম হয় এবং প্রয়োজনে যথাসময়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য সঠিক চিকিৎসা কেন্দ্রে রেফার করতে সমর্থ হয়। এছাড়াও প্রতি বছর কমপক্ষে পঞ্চাশ ঘন্টার প্রশিক্ষণ থাকে যাতে প্রফেশনালিজম, মেডিক্যাল এক্সপার্টাইজ, প্র্যাকটিস পারফরম্যান্স, সেলফ এসেসমেন্ট ও লাইফলং লার্ণিং সিস্টেম থাকে।
এছাড়াও একজন জিপি তাঁর চিকিৎসার সময় রোগীর বায়োলজিক্যাল, সাইকোলজিক্যাল এবং সামাজিক বিষয়গুলোও বিবেচনায় রাখতে সমর্থ হন।
একজন জিপি কিভাবে কাজ করেনঃ
জিপি নিজে নিজে প্র্যাকটিশনার হিসেব কাজ করতে পারেন বা কোন বড় ধরনের স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বা নিজস্ব প্রাইভেট অফিস যেখানে নার্স বা ম্যানেজার সহায়ক হিসেবে কাজ করে থাকেন। আমরা "জেনারেল প্র্যাকটিশনার বাংলাদেশ" নামে কাজ শুরুর প্রস্তাব করছি এবং এতে বেশ কিছু জিপি যুক্ত হতে যাচ্ছেন।
জিপি আপনার স্বাস্থ্য কোঅরডিনেটরঃ
সুশীল বাবু দীর্ঘদিন ধরে থায়রয়েড হরমোন সমস্যার জন্য ঔষধ খায়। পাশাপাশি ওনার কিডনী, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা এরকম বিভিন্ন সমস্যার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাচ্ছেন। সুশীল বাবু খুব গর্ববোধ করছেন।ঈশ্বর ওনাকে এতজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানোর সামর্থ্য দিয়েছে। চিকিৎসা নিয়ে ওনি খুবই সন্তুষ্ট। তবুও একটা কথা থেকে যায়। সেটা হচ্ছে চিকিৎসার সমন্বয়। এই যে সুশীল বাবু এতগুলো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শমত ঔষধ খায় এতে বিভিন্ন প্রেসক্রিপশন মিলে তালগোল পাকিয়ে ফেলতে পারেন এবং এটা হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। কোন কোন ঔষধ দুই কিংবা তিনটা প্রেসক্রিপশনে থাকতে পারে। কখনও প্রয়োজনীয় ঔষধ বাদও পড়তে পারে। মনে রাখতে হবে ১০০% সঠিকভাবে কাজ করা কোন মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। এজন্যই সম্পূর্ণ চিকিৎসার সমন্বয় প্রয়োজন এবং কখনও কখনও এই সমন্বয়ের কাজটা বারবার করার দরকার হয়।
এক্ষেত্রে উচিত হবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানোর পর সমস্ত ফাইল, রিপোর্ট এবং প্রেসক্রিপশন নিয়ে আপনার জিপি বা জেনারেল প্র্যাকটিশনারকে দেখানো। জেনারেল প্র্যাকটিশনার আপনার সমস্ত ফাইল রিপোর্ট দেখে ট্রিটমেন্ট সমন্বয়ে সহযোগিতা করবেন। এতে আপনি হয়তো বড় কোন ক্ষতি হতে বেঁচে যেতে পারেন। Always coordination with your GP. এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অধিকাংশ উন্নত দেশে এটা অনুসরণ করা হয়।
সবার সচেতনতায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
_____________________________
ডা.অসিত মজুমদার

সুলেখক। লোকসেবী চিকিৎসক।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়