Ameen Qudir

Published:
2019-09-27 05:57:29 BdST

ডাক্তারদের এক ঐতিহাসিক আইনি বিজয়:প্রায় ১০০ কোটি টাকা বন্টন হয়েছিল সারা বাংলাদেশে


অধ্যাপক ডা. নোমান চৌধুরী

________________________

বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. নোমান চৌধুরী তার ফেসবুক কলামে এক অনন্য আইনি বিজয়ের কথা এবং পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ বর্ননা করেছেন। তাতে রয়েছে চিকিৎসক সংগঠনগুলোর জন্য অনন্য শিক্ষা। যে অভিজ্ঞতা তারা কাজে লাগাতে পারে। লেখাটি পাঠকদের দরবারে পেশ হল। অধ্যাপক ডা. নোমান চৌধুরী লিখেছেন ঠিক এভাবে:
যারা আইন সম্বন্ধে কিছু জানতে চান তাদের জন্যে: আইনের গল্প।
আইনের মধ্যেই অনেক ফাঁক-ফোঁকর রয়ে গেছে। আপনার কাজ হল সেটি কাজে লাগিয়ে আপনার উদ্দেশ্যটি "কৌশলে" হাসিল করে নিয়ে আসা। আর এ জন্যই আইনজীবিদেরকে বলা হয় "কৌসুলি"!
#গল্পঃ--
১! ২০১০ সালে HPRB- রীট পিটশন নং 9587/10, সরকারের বিরুদ্ধে ১টি মামলা করে দিল।
বিষয়টি ছিল সরকার ঘোষিত বর্ধিত হারে প্যাথলজিক্যাল, বায়োকেমিকেল, রেডিওথেরাপী, রেডিওলজী, নেফ্রোলজি,কার্ডিওলজি হেমাটোলজি, ফিজিক্যাল মেডিসিন সহ বেশ কয়েকটি Discipline এর আওতায় রাজস্ব আদায়ের প্রশাসনিক আদেশের বিরুদ্ধে!
সরকার এর বিরুদ্ধে আদালতে বিশিষ্ট আইনজীবি মঞ্জিল মোরশেদ মোভ করলেন, সরকার BMDC-র মত যথারীতি নির্লিপ্ত রইল। রায়ে স্থগিত হয়ে গেল সেই প্রশাসনিক আদেশ।
সেই সংগে এর সাথে সংস্লিষ্ট কর্মকর্তা -কর্মচারীদের " ইউজার ফিঃ' বন্টনও স্থগিত হয়ে গেল।
যেহেতু বিষয়টি আমাদের Radiology বিষয়কেও টাচ করল, তাই আমরাও ক্ষতিগ্রস্থদের দলে পড়ে গেলাম।
আমি তখন Society of Radiology & Imaging -এর নির্বাচিত দপ্তর সম্পাদক!
EC- meeting এ সিদ্ধান্তঃ হল মামলা মোকাবেলার। EC-সকল সদস্য বিশিষ্ট আইনজীবি বাসেত মজুমদারকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিল; আমি ছাড়া। Note of Descent দিলাম, যে প্রস্তাবিত উকিল Civil Writ এক্সপার্ট নন, উনি হলেন ফৌজদারি উকিল! তাই উনাকে নিলে হেরে যাবার সম্ভাবনা।কিন্তু মেজরিটির সিদ্ধান্তঃ মোতাবেকব তিনিই লড়লেন। ২০১১ সনের ডিসেম্বরে গরু-হারা হেরে গেলাম আমরা।
জাজ সামছুদ্দিন চৌধুরী মানিক জিজ্ঞাসা করলেন বাছেত মজুমদার সাহেবকে কোন আইন বলে এই টাকা সরকারী হাসপাতালে রোগী থেকে নেয়া হয় এবং কোন আইন বলে বিতরণ হয় কর্মচারী দের মধ্যে-- বলুন?
জবাবে বললেন -- আইন আছে কি না জানি না, তবে বিভিন্ন সময় মন্ত্রনালয় কর্তৃক ৭-৮টি প্রশাসনিক আদেশের মাধ্যমে... ইউজার ফি উত্তোলন ও বিতরণ করা হচ্ছে সরকারী হাসপাতালের ৮-১০টি ডিপার্টমেন্ট এ!
জাজ বললেন--- সরকারি টাকা Legislative backup ছাড়া, শুধুমাত্র প্রশাসনিক আদেশে বন্টন করা সংবিধানের ৯৫ ধারা অনুসারে বে-আইনী; অতএব এ যাবৎকালে উত্তোলিত ও বিতরন কৃত সব কিছু বে আইনী ঘোষনা করা হল এবং ভবিষ্যতে এ অর্থ উত্তোলন ও বিতরণ স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়ার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়ে দিল।
২! ডাক পড়ল আমার। সকল কর্মকর্তা +কর্মচারী আমার কাছে আসলো কি করা যায়? আমি বললাম যে, এখন কি আর করা যাবে? পুর্নাংগ রায় তো হয়েই গেছে আমাদের বিরুদ্ধে, আপনাদেরকে তো ফৌজদারি উকিল নিতে মানা কিরেছিলাম!! অবশেষ সকলের ৩-৪ দফা অনুরোধে বিষয়টি হাতে নিলাম। CMP - করে stay চাইলাম রায়ের বিরুদ্ধে; এখনকার প্রধান বিচারপতি তখন চেম্বার জাজ-- No order করে দিলেন। নিরাশ হলাম।-----
রায়ের কপি উঠালাম। সরকারকে আপিলে বাদী করলাম স্বাস্থ্য সচিবের কাছ থেকে উকালত নামায় সই নিয়ে! আমরা offside এ রইলাম।
২০১২ সালের ২৮শে অক্টোবর আপিল বিভাগ হাইকোরর্টের রায় স্থগিত হল এবং জমাকৃত ইনভেস্টিগেশনের টাকার অর্ধেক পুর্বের বিধি মোতাবেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে বনটনের নির্দেশ দেয়া হল।
৫ই ফেব্রুয়ারি /২০১৩ , স্বাস্থ মন্ত্রনালয় স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে টাকা বিতরনের সার্কুলার জারী করল!
বাধ সাধলো স্বাস্থ্য মন্ত্রী। তিনি আমাদেরকে ডেকে বললেন এটা উত্তোলন নিষেধ করা হল। উঠাবে না। আবার স্থগিতাদেশ জারী হল মন্ত্রনালয়ের এপ্রিল মাসেই!
আমি পুনরায় Writ মামলা নং ৭২৯৯/১৩ রুজু করে হাইকোর্ট থেকে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল বিভাগের রায় বাস্তবায়ন করে টাকা বিতরণের আদেশ এনে প্রায় ১০০ কোটি টাকা সারা বাংলাদেশে বন্টিত হল। সরকার এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে আবার স্থগিত করে দিল যা আজ পর্যন্ত স্থগিত রয়েছে।
আইনের #ফাক দিয়ে কিন্তু ১০০ কোটি টাকা বের হয়ে গেল বা বলতে গেলে আমি করে দিলাম!!

-------------------------------------------------
কেন এ গল্প বলা? কি দরকার?....
১১ টি সংগঠন সচিবালয়ে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে বলে এসছিল উপরোক্ত রায় করার ফলে। তাই সচিব সাহেব "আদেশ তাদের অনুরোধে স্থগিত করে আদেশের মধ্যেই তাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে স্থগিত করা হল" লিখে দিল।
আর আমি একা যুদ্ধ করে আদালতে জিতে আসলাম --- কিভাবে। আল্লাহই জানেন!
** অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয়--- চিকিৎসক দের উপকার করার জন্য আজ কতই না সংগঠন আছে? হাটতে গেলে পায়ের তলে পারা পড়ে যায়?
সকল সংগঠনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি,....
"আপনারা কেন এই কানামাছি খেলা খেলছেন?"
আমি একা লড়ে যদি ১১টি সংগঠনের বিরুদ্ধে জিততে পারি, যেখানে সুস্পষ্ট Legislative backup ছিল না;
সেখানে সুস্পষ্ট Legislative bacup ( BMDC- act- 2010 এর) ২৯(২) ধারা থাকা স্তত্বেও কেন এতগুলি সংগঠন কেন পারছে না? এটা আমার প্রশ্ন সবার কাছে??
স্বাচিপ, বিএমএ, প্লাটফর্ম, SOMA, voice of Doctor's, BCS Health Cadre welfare Association, Citizen Group, BDF, DSB group, আরও কত কি গ্রুপ আছে চিকিৎসক দের "!
সবাই ডাঃ দের জন্য নিবেদিত প্রান বলেই লেখালেখিতে যা বুঝা যায়---- অন্যদিকে ৬০-৬৫ টা স্পেশালিটি,সাব-স্পেশালিটি মিলিয়ে কত বড় বড় এসোসিয়েশন আছে আমাদের ডাঃ দের!! সকলে মিলেও বা কেউ কি পারে না Sacmo-দের করা এই রিটটি ( ২০১২ থেকে ঝুলে থাকা) হাইকোর্ট এ মোকাবেলা করতে??
যেখানে আইন আছে আমাদের পক্ষে, তবে কে ন উনারা কেউ যাচ্ছেন না; অথচ ডাঃ দের জন্য ফেসবুকে ও অফলাইনে কি মায়াকান্নাটাই না তারা কাদেন!!
এ মামলা তো পুর্নাংগ রায়ই হয়নি!! সেটা মোকাবেলা করলেই ত sacmo-রা হেরে যায়!!---
উপরে যে মামলার কথা বলেছি সেটা তো হাইকোর্ট পুর্নাংগ রায় দিয়েছিল, সেটাই তো বাতিল করেছিলাম! এবং সেটাতে আমাদের পক্ষে কোন আইনই ছিল না??
আর যদি নাই কিছু করেন, তবে কুম্ভীরাশ্রুটা না ঝরালেই পারেন!!!
এতগুলি চিকিৎসক সংগঠন ১টি মাত্র DMF সমিতির সাথে পারে না? এটা কি বিশ্বাস যোগ্য??
আসলে সবই হিপোক্রেসি??
দুঃখিত রুড কথা বলার জন্য।
আর......!! বলব খানিক পরে!!

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়