Ameen Qudir

Published:
2019-08-20 06:28:57 BdST

মেধাবী পাচার , ডাক্তারদের বিদেশ গমন : পুশিং ফ্যাক্টর ও পুলিং ফ্যাক্টর


 

 


ডা. সাঈদ এনাম
____________________________

দেশের সেরা চিকিৎসা বিদ্যাপীঠ ঢাকা মেডিকেল থেকে পাশ করে কত শত শত মেধাবী ছাত্রছাত্রী বিদেশে চলে গেছে। শত শত মেধাবী চলে গেছে দেশ সেরা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েট থেকে পাশ করে। তারা বিদেশে সেটেল্ড হয়েছে। সেখানে সফলতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন স্ব-স্ব ক্ষেত্রে। তাদের সফলতার কথা শুনলে আমাদের বুক ভেসে যায় গর্বে। ওরা'তো আমাদেরই স্বজন। ভাই, বোন, বা বন্ধুজন। পাশাপাশি একটা হাহাকারও বুকে চেপে থাকে।

এসব মেধাবী ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে সেবা বঞ্চিত হচ্ছে, হয়েছে এ দেশের সাধারণ মানুষ। তারা দেশে থাকলে আমাদের চিকিৎসা, শিক্ষা, শিল্প কারখানা সবকিছুই আরো সমৃদ্ধ হতো। আমরা হয়তো আরেকটু এগিয়ে যেতাম।

ভবিষ্যতে আরো অনেক অনেক মেধাবী ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার এদেশ ছেড়ে চলে যাবে। দেশ ছেড়ে চলে যাবে গণিতবিদ, পদার্থবিদ, রসায়নবিদ। তাদের কেউ আটকাতে পারবেন না। মেধাবীদের এভাবে পাচার হওয়াকে কাঁচা ভাষায় Brain Drain, মেধাবী পাচার। নারী পাচার, শিশু কিশোর কিশোরী পাচার এর মতো এটাও এক ধরনের পাচার।

চলমান এই পাচারের দুটো ফ্যাক্টর আছে।

এক. পুশিং ফ্যাক্টর
দুই. পুলিং ফ্যাক্টর

পুশিং ফ্যাক্টর হলো মেধাবীদের জন্যে বৈরী পরিবেশ যা তাদের দূরে ঠেলে দেয়। যেমন, যুৎসই কর্মসংস্থানের অভাব, প্রতিকূল পরিবেশ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, কম বেতন, পদোন্নতির অভাব, গবেষণার অভাব, সম্মানের অভাব।

পুলিং ফ্যাক্টর হলো সুন্দর, নিরাপদ পরিবেশ, ঝামেলা মুক্ত নিশ্চিত ভবিষ্যৎ যা মেধাবীদেরকে আকৃষ্ট করে। যেমন উন্নত পরিবেশ, যুৎসই চাকুরী, উচ্চ বেতন, সুনিশ্চিত জীবন, গবেষণার সুযোগ ইত্যাদি।

উন্নত বিশ্বের দেশ গুলো উন্মুখ হয়ে বসে আছে বিভিন্ন দেশের মেধাবীদের খোঁজে খোঁজে তাদের দেশে চালান করার। তার সকল সুযোগ সুবিধার নিশ্চয়তা দিয়ে বাই হুক অর ক্রুক আপনার মেধাবী সন্তানকে নিয়ে যাবে। অনেকটা বরশী দিয়ে যেভাবে মাছ ধরি হয়, ঠিক সেভাবেই।

সাইকিয়াট্রির বা মনোরোগ বিষয়ে কনফারেন্স এ প্রেসেন্টার হিসেবে জাপান, আমেরিকা ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে অংশগ্রহণ করার সুযোগ হয়েছে। সে'দেশের প্রফেসরদের মুখে বাংলাদেশের ডাক্তারদের সুনাম শুনেছি। এমনও হয়েছে আমি বাংলাদেশ থেকে গিয়েছি শুনেই বললেন, 'ওহ বাংলাদেশ..., আমাদের হসপিটালে বাংলাদেশের এক ডাক্তার আছে, খুবই ইন্টেলিজেন্ট'। অর্থাৎ অনেক সময় আমাকে বা আমার দেশকে তারা চিনছেন আমাদের সেই সব হারিয়ে যাওয়া সহপাঠী, মেধাবী ভাইবোন ও বন্ধুবান্ধবদের মাধ্যমে।

বিষয়টি যে কি পরিমান আত্মঘাতী হচ্ছে সেটা কেউই কল্পনা করতে পারবেননা। দেশ যদি এসব মেধাবী দের ধরে রাখতে পারতো তাহলে দেশের প্রতিটি সেক্টরের সেবা ব্যবস্থা আরো আরো এগিয়ে যেতো।

দিন শেষে, হোটেলে ফেরে এসে আমাদের বীরদের এসব বীরত্বগাঁথা শুনে আমার মাঝেমধ্যে মন খারাপও হয়। কারন এ মেধাবী গুলোর বেশিরভাগই দেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সেরা ছাত্র। উন্নত দেশ উন্নতি করছে আমাদের মেধা দ্বারা। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের ভবিষ্যৎ খুব একটা ভালো হবেনা। মেধাবীরা চলে যাবে, পড়ে থাকবে মেধাহীনরা।

তবে ব্যতিক্রমও আছে। অনেক কিংবদন্তী স্যার,প্রফেসর আছেন আছেন যাঁরা বিদেশের লোভনীয় সব সুযোগ সুবিধা কে বুড়ো আংগুল দেখিয়ে দেশের বিভিন্ন ভার্সিটি, কলেজ এ সেবায় শিক্ষকতায় নিজেকে নিয়োজিতো রেখেছেন। হয়তো সম্মান ছাড়া আর তেমন কিছুই তারা পাচ্ছেন না। মাঝেমধ্যে সে সম্মানটুকু ও দিতে ব্যার্থ হয় আমরা।

ডা. সাঈদ এনাম

কে-৫২

সাইকিয়াট্রিস্ট

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়