Ameen Qudir

Published:
2019-05-26 21:22:17 BdST

'চিকিৎসা পেশার সাথে রাষ্ট্রের ক্রমাগত বৈমাত্রেয় আচরণ কোনো শুভ পরিণতি বয়ে আনবে না'



ডা. আজাদ হাসান

সিওমেক;২১ তম ব্যাচ
_____________________________

বর্তমানে সব চেয়ে ঝুঁকি পূর্ণ পেশার নাম সম্ভবত "চিকিৎসা পেশা"। বেশী নয় গত ছয় মাসের পত্রিকার পাতা উল্টালেই আমার কথার যথার্থতা খুজে পাবেন। তবে পাশাপাশি এটাও স্মরণ রাখতে হবে, ক্ষেত্র বিশেষে চিকিৎসকরা তথা চিকিৎসা পেশা আজ অপ-সাংবাদিকতা বা হলুদ সাংবাদিকতারও স্বীকার। সুতরাং যখন পত্রিকা পড়বেন তখন খবরের পেছনের খবরটি জানতে চেষ্টা করুন, তা হলে প্রকৃত সত্য উদঘাটিত হবে। সেই সাথে অপ-সাংবাদিকতাকে বা অপেশাদারি সাংবাদিকতাকে না বলুন।

আজ আমি যে বিষয়টি অত্যন্ত পরিতাপের সাথে উল্লেখ করতে চাই তা হলো, চিকিৎসা পেশা আজ অভিভাবক হীন হয়ে পড়েছে। সবাই কেবল ডাক্তারদের এই দায়িত্ব পালন করতে হবে, সহানুভূতি শীল হতে হবে, আচরণে সংযত হতে হবে, মানবিক হতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি হরেক রকম উপদেশ দিয়ে নসিয়ত দিতে পারদর্শী। কিন্তু সেই ডাক্তারদের উপর কর্তব্যরত অবস্থায় যখন অযাচিতভাবে বর্বরোচিত হামলা হয়, তখন ঐ সব বাণী দাতা সুশীলরা মুখে কুলুপ এটে বসে থাকেন। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

আজ যদি দায়িত্ব পালন কালীন সময়ে কোনো ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা পুলিশ বিভাগের সদস্য কিংবা আনসার ভিডিপি সদস্যও আক্রান্ত হন, তা হলে স্ব স্ব মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে খোদ প্রধান মন্ত্রীর দপ্তর পর্যন্ত তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে সরকারী কিংবা বেসরকারী হাসপাতাল কিংবা মেডিক্যাল কলেজে কর্তব্যরত ডাক্তারদের উপর উপর্যুপরি পৈশাচিক হামলা ও নেক্কারজনক আক্রমণের পরও সরকারের কোনো মহল হতে কোনো রকম উচ্চ বাচ্য তো দূরের কথা, নূনতম সহানুভূতিরও স্বাক্ষর আমরা দেখতে পেলাম না।

চিকিৎসক কিংবস স্বাস্থ্যসেবার সাথে সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের সাথে রাষ্ট্রের এহেন বৈমাত্রেয় সুলভ আচরণ যেমন অপ্রত্যাশিত তেমনি হতাশাজনক এবং ভবিষ্যতে এ হেনো আচরণ কোনো ভালো ফল বয়ে আনবে বলে মনে হয় না।

সাম্প্রতিক সময়ে একজন কলেজ শিক্ষকের প্রতি সন্ত্রাসীদের আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রের আচরণ এবং পরবর্তীতে গৃহীত পদক্ষেপ এবং স্বয়ং মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী কর্তৃক বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নেয়ায় আমি সংশ্লিষ্ট মাননীয় মন্ত্রী সহ সবাইকে অভিনন্দন জানাই। পাশাপাশি বলতে চাই, প্রতিনিয়ত হাসপাতালে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের পর স্বাস্থ্যসেবা খাতের সাথে সংশ্লিষ্টদের নির্লিপ্ততা, উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতা সম্পর্কে নিন্দা বা ধিক্কার জানানোর ভাষা আমার জানা নেই।

আমাদের পেশাজীবি সংগঠনের নেতারা এই সংগঠনের সিড়ি বেয়ে সবাই (সরকারী কিংবা বিরোধী দলের হোক) জন প্রতিনিধি হওয়ার দৌড়ে ব্যস্ত। তাই ওনারা সবাই মেপে কথা বলেন, হিসেব কষে পদক্ষেপ নেন, পাছে যাতে জনগণ রুষ্ট না হন, যাতে ওনার ভোট নষ্ট না হয়!

ওনারা পেশাজীবি সংগঠনের নেতা হয়ে ভুলে যান, ওনারা কি শপথ নিয়েছেন। অথচ শপথ না নিয়েও ওনারা বনে যান জনগণের নিঃস্বার্থ হিতাকাঙ্ক্ষী বন্ধু! অথচ যারা ওনাদেরকে নেতা বানালেন, যারা ওনাদের কাছ থেকে কিছুটা শান্তনা কিংবা আশ্বাসের আশায় থাকেন, সেই চিকিৎসক সমাজ থাকে অবহেলিত, নিষ্পেষিত এবং বঞ্চিত। আর মন্ত্রণালয়ের কথা কি বলবো, সে তো রীতিমতো আকাশের চাদের চেয়েও দূর্লভ বিষয়, আকাশের চাদকে অন্ততঃ দেখা যায়, ছোয়া যায় না। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্তা ব্যক্তিরা এমনই দূর্লভ যে, ওনাদের দেখাও যায় না, ছোয়াও যায় না!

যদিও চিকিৎসা সেবায় দয়িত্ব পালন কালে উদ্ভূত বিভিন্ন অনভিপ্রেত ঘটনার পর কখনো কখনো স্থানীয় বিএমএ-কে পাশে পাওয়া যায় তথাপি তাদের ভূমিকাও খুব আশা ব্যঞ্জক নয়।

তাছাড়া ডাক্তারদের ক্ষেত্রে পোস্ট গ্রাজুয়েশন ছাড়া প্রমোশন না হওয়া, অথচ প্রশাসন এবং পুলিশ ক্যাডারের ক্ষেত্রে প্রমোশনের জন্য পোস্ট গ্রাজুয়েশনের বাধ্যবাধকতা নেই, উপরন্ত ওনারা গ্রেড-১ অফিসার অথচ সম্পুর্ন একাডেমিক লাইফে A+ পাওয়া চিকিৎসক প্রফেসররা গ্রড-৩ অফিসার যা সত্য দুংখজনক ও দূর্ভাগ্যজনক।

বর্তমানে চলমান পরিস্থিতিতে
আজ চিকিৎসকরা কর্মক্ষেত্রে "নিরাপদ কর্ম পরিবেশ" নিয়ে উদ্বিগ্ন। আর এর অবশ্যম্ভাবী ভবিষ্যৎ পরিণতিঃ

১) সদ্য এইচ এস সি পাশ কৃত মেধাবী ছাত্ররা আর চিকিৎসা পেশাকে পছন্দের তালিকার শীর্ষে রাখতে নিরাপদ মনে করছে না।
২) সদ্য পাশকৃত মেধাবী নবীন চিকিৎসকরা আর এদেশে চিকিৎসক সেবা দেয়া নিজেদের জন্য নিরাপদ মনে করছে না। যারা পারছে, সবাই এখন বিদেশ মুখী হয়ে পড়ছে।
৩) আগামী দিনে তাই চিকিৎসা পেশা অপেক্ষাকৃত অল্প বা কম মেধা সম্পন্ন চিকিৎসক দ্বারা পূর্ণ হতে চলেছে। যা একটি জাতির জন্য চরম দূর্ভাগ্যের।

ক্রমাগত ভাবে উপেক্ষিত এবং প্রবঞ্চনার শিকার চিকিৎসকরা তথা চিকিৎসা পেশা আজ অরক্ষিত এবং নিগৃহীত এক প্রবঞ্চনার নামান্তর।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়