Ameen Qudir

Published:
2019-04-30 00:03:21 BdST

'হাসপাতালের নোংরা দেখে ডাক্তারকে অভিযুক্ত করার মানে কি? বিকেলে ইএমও একজনই থাকার কথা'


 



ডা. ফাতেমা জোহরা
________________________

কিছুদিন আগে দৈনিক  পত্রিকায় একটি খবর আসে আর তা হলো -- "হাসপাতালে মাশরাফি অভিযান, ঝড়ের মুখে ডাক্তার নার্সরা"। কথা হলো যার যা কাজ তাকে তাতেই মানায়।মাশরাফির উচিত ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা করা।ডাক্তারের ডিউটি সম্পর্কে কতটুকু জ্ঞান রাখেন উনি? দুপুর ৩.৩০ মিনিটে শুক্রবারে মিডিয়া সহ হাসপাতালে এসে যদি মনে করেন সকল ডাক্তার ও নার্সরা তাকে আমন্ত্রিত করবেন তাহলে বলবো উনি বাংলাদেশের হাসপাতালের অবস্থা ও বাস্তব চিত্র সম্পর্কে কিছুই জানেন না।একজন ডাক্তার সকাল,দুপুর ও রাতে কতটুকু ডিউটি করেন, কার কতক্ষন ডিউটি, কে কি কারনে অনুপস্থিত এসব জেনে পরিস্থিতি বিচার করা উচিত।ডাক্তাররা দুপুর ২টার পর রোস্টার অনুযায়ী ডিউটি করেন।তাতে ইনডোর আর ইমার্জেন্সীতে একজন করেই ডিউটিতে থাকে। বাংলাদেশের হাসপাতালের অবস্থা করুণ তার জন্য ডাক্তাররা একা দায়ী নন।যেসব সমস্যা গুলো রয়েছে তার সবগুলোই প্রশাসনিক যার জন্য অনেক ক্ষেত্রে সরকার সহ উনিও দায়ী।ডাক্তার অনুপস্থিত থাকা যদি অস্বাভাবিক হয় তবে তাদের যখন জাতীয় দলের অনুশীলন হয়, তখন তারাও অনুপস্থিত অনেকে থাকে।তারাও টাকার অপচয় করে।বাংলাদেশের মত এত কম টাকায় এত উন্নত সেবা বিশ্বের কোথাও দেয়া হয়না।এই যে ডাক্তাররা এত মার খেয়েও জনগণের সেবা করে সেসব কি উনার চোখে পড়েনা?নাকি এমপি হয়ে এসব ভুলে গেছেন?রোগীদের কথা শুনেই এত উত্তেজিত হয়ে গেলেন?তার মানে রোগীরা সব সত্যবাদী আর ডাক্তাররা সব মিথ্যাবাদী?সাধারণ মানুষকে সাহায্য করতে চান ভাল কথা কিন্তু ডাক্তারদের সুবিধা অসুবিধার দিকেও খেয়াল করা উচিত। ডাক্তাররা কতটা নিরাপদ আছে কর্মক্ষেত্রে সেটাও দেখা উচিত। ভাল খারাপ সব প্রফেশনেই থাকে।তাই বলে শুধু খারাপটাই দেখবেন আর বলবেন,আর সাংবাদিকরা তাই লিখবে আর জনগণ তাই পড়বে আর জানবে তা তো ঠিক না।গত ২৫শে এপ্রিল বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ৩ টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টানা ২ ঘন্টা নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে ঝটিকা সফর করেন মাশরাফি। নারী ও শিশু ওয়ার্ডে রোগীদের সাথে কথা বলে তাদের কাছ থেকে নানা ধরনের সমস্যা শোনেন।ওই সময় পুরো হাসপাতালে মাত্র একজন ডাক্তারের উপস্থিতি দেখতে পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তিনি। সদর হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে মাত্র ২ জন নার্স দেখে তাদের ডিউটির ব্যাপারে খোজ নেন। জানতে পারেন হাসপাতালে ২-১ জন নার্স দিয়েই বিভিন্ন ওয়ার্ড পরিচালিত হচ্ছে।রোগীদের অনুরোধে হাসপাতালের বাথরুম ও তার পরিবেশ নিজে দেখেন এবং মোবাইলে ছুবি তুলে নেন। কয়েকটি বাথরুমের দরজা ভাঙ্গা এবং দূর্গন্ধ তাকে অত্যন্ত বিব্রত করে তোলে। তিনি এ ব্যাপারে জানার জন্য আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারকে ফোন করতে বলেন। এরপর মাশরাফি দোতলায় এসে ডাক্তারদের অবস্থান জানতে চেয়ে হাজিরা খাতা দেখেন। হাজিরা খাতায় সার্জারী চিকিৎসক সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা.আকরাম হোসেনের ৩ দিনের অনুপস্থিতির প্রমাণ পেয়ে ছুটির আবেদন দেখতে চান।এ সময় ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথমে রোগী সেজে ওই চিকিৎসককে ফোন করলে ও নিজের পরিচয় দিয়ে মাশরাফি ডাক্তারকে বলেন, 'স্যার এখন যদি হাসপাতালের সার্জারী প্রয়োজন হয় তাহলে সেই রোগী কী করবে?' এরপর সেই ডাক্তারকে তার কর্তব্যর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে দ্রুত এলাকায় ফিরে আসার নির্দেশ দেন তিনি।মাশরাফির হাসপাতালে আসার খবর পেয়ে ততক্ষণে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা.মশিউর রহমান বাবু এসেছেন হাসপাতালে। এসময় চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি বিষয়ে কথা বলে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার কে দিয়ে হাজিরা খাতায় সেই চিকিৎসক ডা.আকরাম হোসেনের ৩ দিনের অনুপস্থিত করিয়ে নেন।ডাক্তারের অনুপস্থিতি বিভিন্ন কারনে হতে পারে।সেই চিকিৎসক এর একান্ত প্রয়োজনে হয়তো তাকে ছুটি নিতে হয়েছে। সে নিশ্চয় অফিসিয়ালী ছুটি নিয়ে গেছে। অার সেখানে ২য় কোন সার্জন নেই তার সার্জারী এর কাজে ব্যাকআপ দেয়ার জন্য। আবার ইমারজেন্সি সার্জারী লাগলে রোগী ভুগবে এটাও ঠিক। আর এক্ষেত্রে এমপি মাশরাফি এসব সিস্টেম এর দোষ না খুঁজে সুযোগ মতো ডাক্তারকে ধরেছে।
এসব খবর না নিয়ে গাল ফুলালে তো চলে না।হাসপাতালের নোংরা পরিবেশ দেখে ডাক্তারকে অভিযুক্ত করার মানে কি? আবর্জনায় পরিপূর্ণ ড্রেন এবং নানা নোংরা পরিবেশ দেখে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. মশিউর রহমানের কাছে দূরাবস্থার কারণ জানতে চান।ডাক্তারের কাজ তো ড্রেন পরিষ্কার করা না।এই কাজগুলো নড়াইল পৌরসভার।অবশ্য কদিন আগে ডাক্তারদের ঝাড়ু হাতে ছবি প্রকাশ হওয়ায় সাধারণ মানুষ ভাবতেই পারে যে এটা ডাক্তারের কাজ।তবে উনার মত মানুষের এটুকু বুদ্ধি আছে এটা বোঝার মত যে এটা ডাক্তারের কাজ না।তিনি হাসপাতালকে মানুষের সেবার জন্য উন্মুক্ত করতে বলেন।তো হাসপাতাল কি মানুষের সেবা দিচ্ছে না?তাহলে উনার উচিত হাসপাতালে ডাক্তারদের সাথে থেকে নিজ চোখে দেখা যে কত কম সুবিধা ও যন্ত্রপাতি দিয়ে ডাক্তাররা ডিউটি করে।রোগীরা শুধু অভিযোগ করবে আর সেটাই শুনবেন তা না করে ডাক্তারদের সমস্যাগুলোর সমাধান ও করা উচিত। উনি হাসপাতালের অরগানোগ্রাম সংশোধন করে একাধিক চিকিৎসক রাখার ব্যবস্থা করুক। ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার আটজন,ইনডোর মেডিকেল অফিসার আটজন হলে অন্তত চারজন ডাক্তার পাবেন।উনি নিজেই একসময় বলেছেন ডাক্তাররা রিয়েল হিরো। উনি কি তা ভুলে গেলেন?একজন জনপ্রতিনিধি যে ভাষায় আর যে টোনে কথা বলছেন তা অবাক করার মতো।উনি এমপি হয়ে এলাকার উন্নয়ন বাদ দিয়ে বিশ্বকাপ খেলার জন্য এক মাসের দেশের বাইরে যাচ্ছেন কেন? যাওয়ার আগে একটা ইস্যু ডাক্তারদের এক হাত নিয়ে গেলেন। ডাক্তাররা তো উনাদের মত মাসে চার লাখ টাকা বেতন গুনেন না আর টিভিতে বিজ্ঞাপনও করেন না। অর্থাৎ চাকুরি আয় বহির্ভূত ইনকামের ধান্দা বা প্রয়োজন সবারই আছে।সদর হাসপাতালে বিকেলে ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার তো একজনই থাকার কথা। সন্ধ্যায় নিশ্চয় ওয়ার্ড প্রতি একজন ডক্টর রাউন্ডে আসেন।সেখানের অর্গানোগ্রাম দেখে জানা যায় প্রায় অর্ধেক ডাক্তারের পদই শুন্য। ইএমও চার জনের দুইজনের পদ শুন্য। পরিচ্ছন্নতা কর্মী ৮ জনের তিন পদ শুন্য। একটা একশ বেডর হাসপাতালে অন্তত ২০-২৫ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী প্রয়োজন৷ এই বিষয় গুলো সিভিল সার্জনরা কেন তুলে ধরেন না?? সমস্যা না বললে সমাধান কিভাবে আসবে??
__________________________

লেখক : ডা. ফাতেমা জোহরা
সুলেখক। পেশায় মনোচিকিৎসক।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়