Ameen Qudir

Published:
2019-04-26 06:40:15 BdST

রানা প্লাজায় ২০০ মানুষের জীবন বাঁচানো বীরের অকাল মৃত্যু অসচেতনতা, অবহেলা ও অজ্ঞতায়


 


ডেস্ক
__________________________

রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে উদ্ধার অভিযানে বীর তরুণ নওশাদ হাসান হিমু নিজের জীবন বিপন্ন করে ২০০ মানুষের জীবন বাঁচিয়েছিল, সমাজের অসচেতনতা, অবহেলা ও অজ্ঞতায় সেই বীরের অকাল মৃত্যু হল।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, যথা সময়ে হিমুকে নিয়মিত মনোসেবার চিকিৎসায় রাখলে তার অকাল প্রয়াণ হত না। চিকিৎসকরা তাকে নিয়মিত ওষুধ ও কাউন্সেলিং দিয়ে বাঁচাতে পারতেন। রানা প্লাজার কারণে যে মানসিক ট্রমায় তিনি ভুগছিলেন , সেটা নিয়মিত মেয়াদী চিকিৎসায় সারানো সম্ভব।
কিন্তু বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই এসব রোগীদের মনোসেবার অধীনে আনা হয় না। কখনও নাম কা ওয়াস্তে চিকিৎসা নিয়ে আর ফলোআপ করা হয় না। মনোরোগীর ক্ষেত্রে স্বজন পরিজনদের সেবাও গুরুত্ব পূর্ণ। হাল ছাড়তে হয় না। নিয়মিত চিকিৎসায় অবশ্যই নিরাময় সম্ভব।
জানা যায়, রানা প্লাজার ধ্বংসযজ্ঞ দেখার ও সেখানে কাজ করার ট্রমায় যুবকটি মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। অবশেষে সম্প্রতি সেই রানা প্লাজা ট্রাজেডির ছয় বছর পূর্তিতে সাভারে নিজের গায়ে আগুন দিয়ে জীবনদাতা বীর স্বেচ্ছাসেবকটি আত্মহত্যা’ করেন।

নিহত নওশাদ হাসান হিমুর (২৭) বাবার নাম আবুল হোসেন। তিনি বরিশালে অধিবাসী।

পুলিশ এবং হিমুর বন্ধুরা জানান, গতরাত ৯টার দিকে হিমু নিজের গায়ে আগুন দেন। হিমু ছিলেন অকুতোভয়। তিনি সে সময়ে রানা প্লাজা ট্রাজেডির উদ্ধারে অংশ নেন। এবং অসম সাহসে ২০০ নারী পুরুষকে উদ্ধার করেন।

শরীরে আগুন দেওয়ার পর হিমুকে দ্রুত সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।


পরিচিতরা সকলেই হিমুকে ‘নিভৃতচারী’ হিসেবেও উল্লেখ করেন ।
বলেন, রানা প্লাজা ভেঙ্গে পড়ার পর হিমু বীরত্বের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছিল। সেই ঘটনায় হিমু খুবই বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলো। নানা ধরণের মানসিক সমস্যায় ভুগছিল। তার মানসিক ডাক্তার দেখানো দরকার ছিল।

 

একটি মেসেজ সবাইকে জানাতে চাই:ডা. সুলতানা এলগিন


এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিদ্যার সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুলতানা এলগিন বলেন, হিমু র অকাল প্রয়াণ আমাদের সকলকে যেন অপরাধী করে গেল।
এমন একটি বীর প্রাণ , তার জন্য শোক জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। তার শোকার্ত পরিজন , স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীদের জানাই গভীর সমবেদনা।
পাশাপাশি একটি মেসেজ সবাইকে জানাতে চাই, মানসিক রোগ কোন অলৌকিক বিষয় নয়। আর দশটি সাধারণ রোগব্যধির মত এটির নিরাময় সম্ভব।
হিমু খুব কাছে থেকে বিপুল মৃত্যু যজ্ঞ দেখেছে। এ ধরণের ঘটনায় বিভিন্ন দেশেই কোন কোন উদ্ধারকর্মী মানসিক ট্রমায় পড়ে যান। সেই সব করুণ দৃশ্য তাদের মানস পট থেকে মুছে যায় না। নানা মানসিক সমস্যায় ভোগেন।
উন্নত দেশে এ ধরণের রোগীদের মানসিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়।
আমরাও হিমুর কথা জানলে বিশেষ ভাবে তাকে চিকিৎসা দিতে উদ্যোগী হতাম। এরকম কল্যানী যুবকের অকাল মৃত্যু কোন ভাবেই কাম্য নয়। তার সুস্থতা ও বেচে থাকা মানে আরও অনেক মানুষ তার কাছে সেবা পেত।
সকলের প্রতি আমাদের আর্জি থাকবে, এধরণের কেসে রোগীদের বিএসএমএমইউতে মনোরোগ বিভাগে নিয়ে আসুন। আমরা অবশ্যই তাদের সেবায় সর্বাত্মক চেষ্টা করব। আমরা এখানে আত্মহত্যা নিরোধ ক্লিনিক , ও সি ডি ক্লিনিক সহ বেশ কয়েকটি ক্লিনিক নিয়মিত পরিচালনা করছি। হাজারো রোগী নিয়মিত সেবা পেয়ে ভাল হচ্ছে। এসব ক্লিনিক তাদের মেয়াদী চিকিৎসার নিশ্চয়তা দিচ্ছে।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়