Ameen Qudir

Published:
2019-04-18 00:27:59 BdST

"ডাক্তারদেরকে কে মর্যাদা দিবে ? এরা নিজেরা কি নিজেদের পেশার মর্যাদা দিতে জানে ?"


 

 

ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ
_____________________

 

সোস্যাল মিডিয়ায় দেখলাম জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্টি সপ্তাহ্ উপলক্ষ্যে আমাদের কতিপয় কর্তৃস্থানীয় চিকিৎসক ঝাড়ু হাতে হাসপাতাল প্রাঙ্গন ঝাড়ু দিচ্ছেন!

জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্টির সাথে চিকিৎসকদের উঠোন ঝাড়ু দেওয়ার কি সম্পর্ক আছে সেটা এই মধ্যরাত অব্দি আমার মাথায় ঢুকলো না!
অযথাই ভেবে ভেবে শুধু মাথাব্যাথাটাই বাড়ালাম!

শুনুন মশাইরা,
যার যা কাজ তাকেই তা মানায়!
কামারের কাজ কুমোরকে মানায় না!
সেটা সে ভালোমতো পারেও না!

চিকিৎসকের কাজ ঝাড়ু দেওয়া নয়,
চিকিৎসকের কাজ চিকিৎসা সেবা দেওয়া।

স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্টি সপ্তাহ্ উপলক্ষ্যে হাসপাতালের উঠোন বারান্দা ওয়ার্ড পরিস্কার রাখতে চান ?
সেটা পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের দিয়েই করান।
এটা 'মুন্না ভাই এমবিবিএস'র মুভিসেট না, এটা আপনার পেশার মর্যাদার সাথে জড়িত একটা ব্যাপার!

পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়েই যদি এতো মায়াকান্না তাহলে সেটা শুধু এই এক সপ্তাহর জন্য কেন ?

বছরের ৩৬৫দিনই পরিচ্ছন্ন কর্মীদের দিয়ে ঝা চকচকে পরিস্কার করে রাখুন।
আর আপনার কাজটা আপনি ঠিকমতো করুন।
সেটা যদি না পারেন তাহলে আলগা হিরোগিরি করতে গিয়ে পেশার মানটা আর ধুলোয় লুটিয়ে দিবেন না!

কয়েকদিন আগে বিমান প্রতিমন্ত্রী এক হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে হাসপাতাল অপরিচ্ছন্ন দেখে হুকুম জারি করে বসলেন-
'কাজে অবহেলা করলে চিকিৎসকদের চাকরি ছাটাই করা হবে।'

ব্যাপারটা যেন এমন যে হাসপাতাল পরিচ্ছন্ন রাখাটা চিকিৎসকেরই কাজ, সেই কাজে চিকিৎসকরা অবহেলা করেছে তাই তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে!

ভিন্ন মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী এসে আমাদের চিকিৎসকদের উপর খবরদারি করবে, তাও ঝাড়ু দেওয়ার মতো এরকম একটা ব্যাপার নিয়ে যেটা চিকিৎসকদের জব ডেসক্রিপশনের মধ্যেই পড়েনা -এটা মেনে নিতে কষ্ট হয়েছিলো তাই রিয়্যাক্ট জানিয়ে দু'কথা লিখেছিলাম।

এখন তো মশাই আপনাদের এই ঝাড়ু দেওয়া দেখে মনে হচ্ছে মন্ত্রীই ঠিক বলেছিলো, আমিই বরং ভুল রিয়্যাক্ট করেছিলাম!

মনে পড়ে, প্রায় বছর দুই আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের উচ্চপদস্থ কর্তাব্যাক্তিরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসক কর্তাব্যাক্তিদের সাথে একটি মতবিনিময়ের প্রোগ্রাম করেছিলেন।

সেখানে স্বাস্থ্যমন্ত্রনালয়ের কর্তাব্যাক্তিরা বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে তাদের কাজের খবরাখবর নিচ্ছিলেন।
আশ্চর্যজনকভাবে খেয়াল করলাম ঢাকাস্থ একটি সরকারি হাসপাতালের পরিচালক যিনি একজন চিকিৎসক তিনি হাসপাতালের প্রতিদিনকার এতো এতো স্বাস্থ্যসেবার কথা বাদ দিয়ে কিভাবে তার হাসপাতালের টয়লেট পরিস্কার রাখেন সেই গল্প বলা শুরু করলেন!

তার দেখাদেখি অন্যান্য হাসপাতালের পরিচালক চিকিৎসকরাও একইসুরে রা রা করতে লাগলেন।
সবাই টয়লেট নিয়ে কথা বলতে বলতেই প্রোগ্রামটা শেষ করে ফেললেন!
যেন হাসপাতালে টয়লেট পরিস্কার করাই চিকিৎসকদের কাজ!

চিকিৎসকরা যেন হাসপাতালে কোন আউটডোর সার্ভিস দেয় না, কোন মুমূর্ষু রুগিকে ইনডোরে সেবা দেয় না, কোন অপারেশন করে না!

তাই পরিচালক চিকিৎসকরা তাদের হাসপাতালে কতজন রুগি আউটডোরে সেবা পায়, কতজন রুগি ইনডোরে সেবা পায়, কতজন রুগির অপারেশন হয়,
রুগির সেবার মান উন্নয়নে তারা কি কি করেছেন বা সেবার মান উন্নয়ন করতে গিয়ে কি কি প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছেন সে সম্পর্কে কিছুই বললেন না!

রুগি সেবার মান উন্নয়ন ও নিরাপদ কর্মস্থলের জন্য তাদের কোন ইতিবাচক পরিকল্পনা আছে কিনা সে সম্পর্কেও কিছুই বললেন না!

বলবে কিভাবে ?
এদের মানসিকতাটাই তো সুইপিঙের উপরে উঠতে পারলো না!

এদেরকে কে সম্মান দিবে ?
এরা নিজেরা নিজেদের সম্মান দিতে জানে ?

এদেরকে কে মর্যাদা দিবে ?
এরা নিজেরা নিজেদের পেশার মর্যাদা দিতে জানে ?

হায় নিয়তি!
আমিও এই প্রজাতিরই একজন সদস্য!!
______________________________

ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ।
সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ,স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, চিকিৎসক পরিষদ, বিএসএমএমইউ।
Doctor ,t Bangabandhu Sheikh Mujib Medical University
Former Secretary General বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ শাখা ,দিনাজপুর।
Studied MBBS. at Dinajpur Medical College, Dinajpur

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়