Ameen Qudir

Published:
2019-04-07 04:27:37 BdST

"আমরা সেবা দিতে এসেছি, মার খেতে আসি নি"


 

 

ডাঃ আজাদ হাসান
__________________________

অতি সম্প্রতি পর পর দু'দিনে সরকারী দু'টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পরপর দু'দুটি ঘটনা ঘটে গেলো যা কেবল অত্যন্ত দুঃখজনকই নয় এবং অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। আর এগুলোকে এখন আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। ক্রমাগত চিকিৎসা পেশা সম্পর্কে মিডিয়ার অপপ্রচার এবং চিকিৎসা পেশার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে মানুষের অজ্ঞতা মূলত চিকিৎসক এবং রোগীর মাঝে যে আস্থাহীনতারর সৃষ্টি করেছে, তারই নগ্ন বহিঃ প্রকাশ।

আমি দেশবাসীর কাছে বলতে চাই:

♦ "আমরা সেবা দিতে এসেছি,
মার খেতে আসি নি"।
♦" একজন ডাক্তার হিসেবে
রোগীকে সেবা দেয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব,
সেই দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, পেশাগত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা লব্ধ স্কিল বা দক্ষতা,
কাজে লাগিয়ে আমরা চিকিৎসা করে থাকি"।
♦" আমরা চিকিৎসা দিতে পারি,
কিন্তু আমরা কখনো কারো জীবনের
গ্যারাটি / নিশ্চয়তা দিতে পারি না"।

আমরা উভয় ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত এবং যথাযথ বিচার চাই।

♦♦
আগামী ৭ এপ্রিল
"বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে"
আমাদের দাবী হোক,
"নিরাপদ কর্মস্থল চাই"।
♦♦

 

একের পর এক সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসকদের উপর এ ধরনের ন্যাক্কারজনক হামলা কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার আগে প্রয়োজন যারা চিকিৎসা সেবা দিবেন অর্থাৎ চিকিৎসক, নার্স, প্যারামেডিক্সসহ সর্ব স্তরের চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। একজন ডাক্তার রোগীকে সেবা দেওয়ার ব্রত নিয়েই চিকিৎসা পেশাকে বেছে নেন। কিন্তু তাকে যদি তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে সতত উদ্বিগ্ন থাকতে হয়, তা হলে তখন তার কাছ থেকে ইস্পিত বা কাংখিত সার্ভিস কখনো আশা করা যায় না।
কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

স্থানীয়ভাবে নেতাদের মধ্যস্থতায়
কেবল মাফ চাওয়াটা আর সমঝোতা করা মূল সমস্যার কোনো যুক্তিগ্রাহ্য এবং গ্রহনযোগ্য সমাধান বলে মনে করি না।

আমার মতেঃ
যেই রোগীদ্বয়ের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে হাসপাতাল রেকর্ড হতে সে সম্পর্কে তথ্য নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উচিত ঐ রোগীর পার্টির বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ-এর অংশ হিসেবে মামলা বা কেস করা। কারণঃ
১) সংশিষ্ট হাসপাতালের তত্বাবধায়ক বা পরিচালকের দায়িত্ব প্রশাসনিক প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে সরকারী হাসপাতালে কর্মরত সর্বস্তরের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আপনার দায়িত্ব। এ ক্ষেত্রে সরকারী দায়িত্বে থাকা কর্তব্য কালীন সময়ে কেউ বহিরাগত সন্ত্রাসী দ্বারা আক্রান্ত হলে মামলার মাধ্যমে তাকে আইনের হাতে তুলে দিতে হবে।
২) সরকারী সম্পত্তি নিরাপত্তা ও সুষ্ঠভাবে রক্ষণা বেক্ষণ করাও আপনার দায়িত্ব। সুতরাং যারা সরকারী সম্পত্তি ভাংচুর করেছে তারা নিঃসন্দেহ সন্ত্রাসী, সুতরাং তাদেরকে আইনের হাতে সোপর্দ করার পদক্ষেপ নিতে হবে।
৩) বিষয়টি দ্রুত সমাধান কল্পে প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করতে হবে, প্রয়োজনে মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাওয়া যেতে পারে।

আমরা আর কোনো হতাশার বানী নয়, চাই দিক নির্দেশনা মূলক সুনির্দিষ্টভাবে স্থায়ীভাবে সমস্যার সমাধান।
প্রথমেই বলি, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল তাই আমাদের প্রতি যত অন্যায়মূলক আচরনের হচ্ছে তার আইনানুগ বিচার চাই।

প্রসংগত আমি আরো উল্লেখ করতে চাই। এ মূহুর্তে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ সমূহ বাস্তবায়ননের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের নিমিত্তে সর্ব স্তরের চিকিৎসকদের সম্মিলিত ভাবে উদ্যোগ নিতে হবে এবং বিএমএ-কেও সম্পৃক্ত হতে হবে। "নিরাপদ কর্মস্থলে"র নিশ্চয়তা কল্পে নিম্নে উল্লেখিত পদক্ষেপ সমূহ এখনই নেয়া আবশ্যক।
১) ডাক্তারদের "কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তামূলক আইন প্রণয়ন" ও তার বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া।
২) হাসপাতালের কর্মক্ষেত্র নিরাপদ করতে অবিলম্বে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন এবং "বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী" নিয়োগ প্রদান করা।
৩) ডাক্তারদের আইনী সহায়তা প্রদানের লক্ষ্য প্রয়োজনীয় "আইন সহায়তা দানকারী" পারমানেন্ট "আইনজীবি প্যানেল" গঠন করা।
৪) ইতিমধ্যে যাদের দ্বারা ডাক্তার এবং হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা লাঞ্চিত ও নিগৃহীত হয়েছেন তাদেরকে অবিলম্বে আইনের আওয়াতায় আনতে হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
৫) জরুরী ভিত্তিতে বিএমএ প্রতিনিধি বৃন্দের উচিত সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রী মহোদয়দ্বয়ের গোচুরীভূত করে এতদ সংক্রান্ত একটি বক্তব্য হোক কিংবা সরকারের পক্ষ হতে প্রেস রিলিজ ঘোষনা আদায় করা।

উল্লেখিত দু'দিনে আমাদের পেশার যে নবীন সহকর্মী ভাইটি কিংবা বোনটি অন্যায় ভাবে কিছু পেশীধারী মাস্তান দ্বারা বর্বরোচিত ভাবে প্রহৃত এবং লাঞ্চিত হলো তাদের বহিরাংগের ক্ষত হয়তঃ শুকিয়ে যাবে কিন্তু তাদের অন্তরে এ ঘটনার মধ্য দিয়ে যে ক্ষত আজ সৃষ্টি হয়েছে তা কখনো শুকাবার নয়। এই ক্ষতের রেশ রয়ে যাবে অনন্তকাল।

মানুষের কর্ম প্রেরণার উৎস মানুষের অন্তঃকরণ। কিন্তু কেউ যদি কর্মস্থলে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত থাকেন, কিংবা সেবা প্রদানকারীরা যদি জনগন হতে যথাযথ সম্মান-এর পরিবর্তে নিগ্রহের শিকার হতে হয়, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা যদি কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রদান করতে ব্যর্থ হয়, তখন আর মানুষের ভেতর হতে স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে কর্মস্পৃহা জাগ্রত হয় না। মানুষের তার কাজের প্রতি আগ্রহ ক্রমশ হ্রাস পায়। সেখানে জন্ম নেয় দারুন হতাশা এবং দেশ ও জাতির প্রতি ক্ষোভ মিশ্রিত একধরনের ঘৃণা।
প্রতিটি মানুষের অন্তরে একটি সফ্ট স্পেস থাকে, যা একান্তই নিজস্ব। এই স্থানটি যদি একবার আহত হয় তার এফেক্ট হয় সুদূর প্রসারী। তাই সার্বিক বিবেচনায় বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে নিয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সরকারের উচিত এখনই এগিয়ে আশা এবং যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া।
__________________________

ডাঃ আজাদ হাসান।
সিওমেক।
২১ তম ব্যাচ।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়