Ameen Qudir

Published:
2019-01-24 23:48:59 BdST

বিশেষচিকিৎসকদের হাজিরা দেখতে দুদক কেন! জানতে চাইলেন চিকিৎসক নেতারা


 

 

ডেস্ক
____________________

সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের হাজিরা দেখতে দুদক কেন যাবে? এই কাজ করার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মনিটরিং সেল রয়েছে। ডাক্তারদের হাজিরা দেখা দুদকের কাজ নয়। সেলের কাজ। এ ধরনের অভিযান চালানো দুদকের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে কি না? কীসের ভিত্তিতে তারা অনুপস্থিত নির্ণয় করে প্রকাশ করেছে?

এরকম নান প্রশ্ন কাজ করছে বাংলাদেশের চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যসেবা মহলে।

স্বাস্থ্য সেক্টরের নেতাদের আশঙ্কা: এ ধরনের কাজ মাঠপর্যায়ে কর্মরত চিকিৎসকদের মধ্যে মারাত্মক অসন্তোষ ও অচলাবস্থা সৃষ্টি করতে পারে।
অনুপস্থিতির জন্য চাকুরি বিধি অনুযায়ী শাস্তির নিয়ম রয়েছে। সেটা হয়ও। কিন্তু এই সেক্টরে আতঙ্ক সৃষ্টি কেন!

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) এর মহাসচিব ইহতেশামুল হক চৌধুরী বুধবার দৈনিক জাগরণের প্রতিনিধি রিকু আমিরকে বলেন, দুদক কেন যাবে অভিযান করতে? এই কাজের জন্য কত বড় বড় মাথা দিয়ে মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর মনিটরিং সেল বানিয়েছে, কোথায় সেই মনিটরিং সেল, কী তাদের কাজ? এ ধরনের অভিযান পরিচালনায় দুদকের এখতিয়ার আছে কি-না, এ নিয়ে আমি যথেষ্ট সন্দিহান।

তিনি বলেন, যদি কোনো চিকিৎসক কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন, সেটা ভীষণ অন্যায়। সেক্ষেত্রে দুদকের উচিত ছিল- সেই অঞ্চলের সিভিল সার্জন বা বিভাগীয় পরিচালকের কাছে যাওয়া এবং প্রাপ্ত চিত্র তুলে ধরে জানতে চাওয়া, আপনার এলাকার এই হাসপাতালের এই চিত্র কেন, কী করছেন আপনারা, কী ব্যবস্থা নিয়েছেন ইত্যাদি। বরং যাওয়া উচিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে। এটা না করে তারা তথ্য প্রকাশ করেছে, হাজার কোটি টাকার দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কী করতে পেরেছে দুদক? এখন এসেছে মাঠে দৌড়িয়ে মেডিকেল অফিসার ধরার কাজে।


দুদক প্রকাশিত অনুপস্থিতের হারের সাথে দ্বিমত পোষণ করে সরকার সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক এম ইকবাল আর্সলান বুধবার দুপুরে দৈনিক জাগরণ সাংবাদিক রিকু আমিরকে বলেন, হাসপাতাল চলে রোস্টারের ভিত্তিতে। সব চিকিৎসক যে একইসঙ্গে হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করবেন, এটা মনে করা ভুল। তা ছাড়া একটি সরকারি হাসপাতালের একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক চিকিৎসক সংযুক্তিতে অন্য হাসপাতালে কর্মরত থাকেন, কেউ প্রশিক্ষণে থাকতে পারেন, চিকিৎসা সম্পর্কিত সরকারি অন্য কাজে হাসপাতালের বাইরে অবস্থান করতে পারেন। এসবের মানে তো কর্মস্থলে চিকিৎসক অনুপস্থিত নয়।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, টাঙাইলের দেলদুয়ার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট চিকিৎসক ১৫ জন। এর মধ্যে ৬ জন ডেপুটেশনে অন্য সরকারি হাসপাতালে কর্মরত, ১ জন প্রশিক্ষণে, ১ জন পিএলএতে। দুদক এসবও আমলে নিয়ে দেখিয়ে দিল চিকিৎসক অনুপস্থিত। প্রতিষ্ঠান প্রধানের সাথে কথা বলে এসব ভালোভাবে জেনে তথ্য প্রকাশ করা প্রয়োজন ছিল।

ইকবাল আর্সলানেরও প্রশ্ন- দুদক কেন যাবে অভিযান করতে? এই কাজের জন্য মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর মনিটরিং সেল আছে, কোথায় সেই মনিটরিং সেল?

বিএমএ মহাসচিব ইহতেশামুল হক চৌধুরী রিকু আমিরকে বলেন, দুদক যতটা হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে, ততটা হাসপাতাল থেকে আমরা তথ্য চেয়েছি, সেসময় হাসপাতালে চিকিৎসকদের চিত্র কী ছিল। দুদক তো বললেই হবে না, যে এত শতাংশ চিকিৎসক অনুপস্থিত।

ভবিষ্যতে দুদক যদি এমন অভিযান আবার চালায়, তাতে আপনার সমর্থন থাকবে কি-না, এ প্রশ্নে বিএমএ মহাসচিব বলেন, দুদক কেন এই অভিযান করবে, মন্ত্রণালয়-অধিদপ্তরের মনিটরিং সেল কোথায়? ভবিষ্যতে দুদক এমন করলে আমাদের ব্যবস্থা আমরাই করব। আর আমরা না হয় চুপ থাকলাম। কিন্তু মাঠপর্যায়ের চিকিৎসকরা যদি রুখে দাঁড়ায়, পেশা থেকে বিরত হয়, তখন কে কী করবে? দুদক এসে কি চিকিৎসা দেবে?

ওদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ রিকু আমিরকে বলেন, এত অল্প প্রতিষ্ঠানে এই অনুপস্থিতির হার নির্ণয় করে জোর দিয়ে বলা যাবে না, চিকিৎসকরা কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। তবে একেবারে যে অনুপস্থিত নেই, সেটা সঠিক না। কিছু তো অনুপস্থিত থাকে। সারাদেশে এ নিয়ে কাজ করলে বোঝা যাবে।

দুদকের অভিযান সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, এ ধরনের অভিযান ভালই। মাঝেমধ্যে এরকম একটু আধটু দরকার। না হলে তো অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়বে সব।

এসব বক্তব্য নিয়ে দৈনিক জাগরণে রিকু আমিরের লেখা একটি অনন্য প্রতিবেদনও প্রকাশ হয় সম্প্রতি।

ছবিও দৈনিক জাগরণের সৌজন্যে প্রকাশ হল।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়