Ameen Qudir

Published:
2019-01-24 21:22:24 BdST

সংবাদ চিকিৎসকদের ডিউটি যে ৯টা-৫টা নয়,স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে জানালেন ডাক্তার প্রতিনিধিরা


 

 

ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ
_____________________________

বুধবার ২৩ জানুয়ারি ২০১৯ স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ে মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যপ্রতিমন্ত্রী'র সাথে স্বাচিপ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের চিকিৎসকনেতাদের একটি শুভেচ্ছা বিনিময় সভা ছিলো।
আমারও সৌভাগ্য হয়েছিলো এই সভায় উপস্থিত থাকার।

এই সভায় চিকিৎসক নেতাদের পক্ষ থেকে চিকিৎসকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো যেমন জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে তেমনি দেশের জনমানুষের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন ও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরনে চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।

অতি সম্প্রতি হাসপাতালে চিকিৎসকদের উপস্থিতির ব্যাপারে দুদকের অভিযান নিয়ে সাধারন মানুষের মাঝে যে ভুল বুঝাবুঝি তৈরি হয়েছে তারও একটি বাস্তবসম্মত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।

বলা হয়েছে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকদের ডিউটি অন্যান্য অফিসের মতো ৯টা-৫টা নয়।
চিকিৎসকদের ডিউটি রাউণ্ড দ্যা ক্লক টুয়েন্টি ফোর আওয়ারস।
তাই এখানে চিকিৎসকদের তিন শিফটে ডিউটি থাকে। মর্নিঙ-ইভেনিং-নাইট।

সঙ্গতকারনেই সকালে বা শুধু যেকোন এক শিফটে শতভাগ চিকিৎসক উপস্থিত থাকা সম্ভব নয় সেটা আশা করাও বাস্তবসম্মত নয়।
কারন যে চিকিৎসকের ইভেনিং বা নাইট ডিউটি আছে তার পক্ষে সবসময়ই সকালে উপস্থিত থাকা সম্ভব নয়।

সাধারনতঃ কোন একটি হাসপাতালে সকালে ঐ হাসপাতালের মোট চিকিৎসকের ৬০/৭০ভাগ চিকিৎসক উপস্থিত থাকে বাকি ৩০ভাগ চিকিৎসক ইভেনিং বা নাইটে উপস্থিত থাকে।
বাকি ৫/১০ভাগ শিক্ষাছুটি ও অন্যান্য ছুটিতে থাকতে পারে।
সুতরাং এই রিয়েল পিকচারটা নিয়ে ভুল বুঝাবুঝির কোন অবকাশ নেই।

কোথাও যে এই হিসেবের একেবারেই কোন গড়মিল হয়না আমরা তেমন দাবিও করছি না তবে দুদকের অভিযানে হাসপাতালে চিকিৎসকদের উপস্থিতি নিয়ে যেভাবে ভুল বুঝাবুঝি তৈরি হচ্ছে ব্যাপারটি মোটেও তেমন ঢালাওভাবে দেখার কোন সুযোগ নেই।

এবং সকলকে এটাই মনে রাখা উচিৎ যে চিকিৎসকদের এই শিফটিং ডিউটির কারনে একজন রুগিও চিকিৎসাসেবা থেকে কখনোই বঞ্চিত হন না বরং সারাদিন ২৪ঘন্টাই ই তাদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত হয়!

যাইহোক মন্ত্রী মহোদয় পুরো ব্যাপারটি অবগত হয়েছেন এবং আমরা আশা করছি শীঘ্রই এই সংক্রান্ত ভুল বুঝাবুঝির অবসান হবে।

এখানে প্রসঙ্গক্রমে,
পেরিফেরিতে এবং স্বাস্থ্যসেবার প্রাইমারী লেভেলে চাহিদার অনুপাতে চিকিৎসক স্বল্পতার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রীমহোদয় অতিসত্ত্বর দশহাজার নতুন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টিও পূনর্ব্যাক্ত করেছেন।

মন্ত্রী মহোদয় আগামী পাঁচ বছর চিকিৎসাশিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে তার বেশকিছু বাস্তবভিত্তিক ও হৃদয়াগ্রহী পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেছেন।

তার মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার সবচেয়ে বেশী মন কেঁড়েছে সেগুলো হলো-

তিনি বলেছেন আগামী পাঁচ বছর তার মন্ত্রনালয়ে ট্রান্সপারেন্সি বিশেষ করে ক্রয়কমিটির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ট্রান্সপারেন্সি নিশ্চিত করা হবে।
বক্তব্যের শুরুতেই তার এই আশ্বাসটি আমার মন কেড়েছে।
আমরা চাই না স্বাস্থ্য সেক্টরে নতুন কোন মিঠু কন্টাক্টর বা নতুন কোন আবজালের জন্ম হোক।
আমি আশাবাদি মানুষ।
তাই নতুন মন্ত্রীর নতুন আশ্বাসে শতভাগ ভরসা রাখতে চাই।

মন্ত্রী আরো বলেছেন স্বাস্থ্যশিক্ষার মানোন্নয়নে এবং যোগ্যতর চিকিৎসক তৈরির লক্ষ্যে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা মানহীন বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো(যেগুলো কোন স্ট্যাণ্ডার্ড ক্রাইটেরিয়া ফিলাপ করেনা) আশু বন্ধ করা প্রয়োজন।

(যেসব বেসরকারি মেডিকেল কলেজ মানহীন নয় এবং যারা স্ট্যাণ্ডার্ড ক্রাইটেরিয়া ফিলাপ করেন তাদের বিচলিত হওয়ার কোন কারন নেই)।

গ্রামে-গঞ্জে শহরে-নগরে অলিতে-গলিতে যেখানে সেখানে গড়ে উঠা মানহীন প্রাণঘাতী ডায়াগনোস্টিক সেন্টারগুলোও বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারে মন্ত্রী তার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন।

মন্ত্রীর এই প্রস্তাব দু'টিও আমার ভালো লেগেছে।
মন্ত্রী এব্যাপারে চিকিৎসক নেতাদের সহযোগিতা চেয়েছেন। চিকিৎসক নেতারাও এব্যাপারে তাকে পূর্ণসহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

মন্ত্রীমহোদয় তার বক্তব্যে বারংবার একটি কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন এই বৈঠকই শেষ বৈঠক নয়, এটা কেবল শুরু। তিনি বারবার চিকিৎসক প্রতিনিধি ও চিকিৎসকনেতাদের সাথে এমন বৈঠকে বসতে চান।
চিকিৎসকদের সমস্যা সঙ্কট নিয়ে কথা বলতে চান।

চিকিৎসকদের সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি দেশের স্বাস্থ্যখাতকে আরো এগিয়ে নিয়ে জনস্বাস্থ্যের কল্যাণে ও জনচিকিৎসাসেবা নিশ্চিৎকরনের প্রয়াসে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে তিনি বারবার চিকিৎসকনেতাদের সাথে বসতে চান।

মন্ত্রীমহোদয়ের এই আবেগ, আশ্বাস ও অঙ্গিকার আমাকে দারুনভাবে নাড়া দিয়েছে, ভিতরে ভিতরে বুকভরা আশা জাগিয়েছে।

মন্ত্রীর শেষ কথাটিও আমার ভালো লেগেছে।
শুধু নিজের পক্ষে গেলেই বাহ্বা আর নিজের পক্ষে না গেলেই বিরোধিতা করার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

নিজের পক্ষে আসলো কি-না সেই চিন্তা করার আগে দেশ ও জনগণের পক্ষে গেলো কি-না সেটাই সর্বাগ্রে আমাদের চিন্তা করা উচিৎ এবং সে ব্যাপারে আমাদের সহযোগীতা অব্যহত রাখা উচিৎ বলে আমি মনে করি।

তবে চিকিৎসকদের মৌলিক স্বার্থ(যা সাধারন রুগিদেরও স্বার্থবিরোধি নয়) বিরোধি যেকোন পদক্ষেপে অবশ্যই চিকিৎসকরা গঠনমূলক ও যৌক্তিক উপায়ে প্রতিবাদ প্রতিরোধের অধিকার সংরক্ষণ করে বলে আমি মনে করি।

স্পেশাল থ্যাঙ্কস এ্যাণ্ড গ্রাটিচিউড টু-
আলহাজ্ব জাহিদ মালেক স্বপন, এম.পি মানিকগঞ্জ ৩, ও স্বাস্থ্য মন্ত্রী। স্যার ও
Murad Hassan MP স্যার।
____________________________

ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ।
সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ,স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, চিকিৎসক পরিষদ, বিএসএমএমইউ।
Doctor ,t Bangabandhu Sheikh Mujib Medical University
Former Secretary General বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ শাখা ,দিনাজপুর।
Studied MBBS. at Dinajpur Medical College, Dinajpur

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়