Ameen Qudir

Published:
2018-12-28 03:54:55 BdST

অভিযোগের দুপিঠ আমাদের দেশে ডাক্তাররা সময় দেন না, কেন দেন না? জানাচ্ছেন একজন চিকিৎসক


 



ডাঃ মোঃ শরিফুল ইসলাম
_________________________
আন্তর্জাতিকভাবে একজন রোগী ১৮ মিনিট সময় পাবার অধিকার রাখে ডাক্তারের কাছে। এর মধ্যে রোগী তার রোগ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় সব কথা মন প্রাণ খুলে ডাক্তারকে বলবেন, তিনি ধৈর্য্য ও সহানুভূতির সাথে সব কথা শুনবেন, প্রয়োজনীয় প্রশ্ন করবেন, শরীর স্পর্শ করে পরীক্ষা নীরিক্ষা করবেন, প্রয়োজনীয় টেষ্ট কেন দিলেন, তা বুঝিয়ে বলবেন।

দ্বিতীয় কিস্তিতে রোগী টেষ্ট রিপোর্ট নিয়ে আসলে তার রোগ সম্পর্কে ধারণা দিবেন, কত দিন লাগবে সুস্থ হতে বা ভূত ভবিষ্যত কি হবে সব বুঝিয়ে বলবেন। কোন ঔষধ কেন দিলেন, সেটিও বুঝিয়ে বলবেন।

আমাদের দেশে ডাক্তাররা সময় দেন না, কেন দেন না,

- প্রথমত আন্তরিকতার অভাব
- মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি কম, মাঝে মাঝে কেউ কেউ superiority complex এ ভুগেন
- অত্যধিক রোগীর চাপ, সকাল ৮ টা থেকে দুপুর দুটোর মাঝে সর্বোচ্চ ২০ টি রোগী সুন্দরভাবে দেখা সম্ভব কিন্তু সংখ্যাটা ৩০-৫০ বা ৮০-১০০ হয়ে গেলে ভাগে গড়ে ২/১ মিনিট করে পড়ে।

সেখানেও কথা আছে
- ১০ টার আগে ও ১ টার পরে কেউ রোগী দেখেন না, তাই সাড়ে ৬ ঘন্টার ডিউটি আওয়ার ৩ ঘন্টা হয়ে যায়
- দ্বিতীয়তঃ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৮ জনের ডিউটি থাকলে দু'জন উপস্থিত থাকেন, সবাই আসেন, টানা ৪৮ ঘন্টা ডিউটি করে সপ্তাহের বাকী ৫ দিন অনুপস্থিত থাকেন, কেননা, লজিক্যালি সপ্তাহে ডিউটি ৪৮ ঘন্টার কম। সব সময়ই ডাক্তার থাকেন কিন্তু প্রয়োজনীয় সংখ্যক নন। তাই যিনি থাকেন তার উপর অত্যধিক চাপ থাকে, যেমন আউটডোরে ১০০ টা রোগী থাকলে ৫ জন ডাক্তার ভাগ করলে প্রত্যেকের ২০ জন পরে কিন্তু ২ জন উপস্থিত থাকার কারণে প্রত্যেককে ৫০টা রোগী দেখতে হচ্ছে, নিজেরাও burnout হচ্ছেন, রোগীরাও সন্তুষ্ট হচ্ছেন না

স্বাস্থ্য খাতে অপর্যাপ্ত বাজেট, যেটুকু বাজেট সেখানে অর্থের তুরুচ্ছপ, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বৃদ্ধি না করা, রোগী অনুপাতে ডাক্তারের পোষ্টিং না বাড়া, '৭২এ সাড়ে সাত কোটি লোকের জন্য যে জনবল ছিল, এখন ১৭ কোটির জন্যও প্রয়োজনীয় লোকবল বৃদ্ধি না করা

মন মানসিকতাঃ
আমাদের বর্তমানে সন্তানদের সাথে বাবা মা'র যেরূপ বন্ধুত্বসুলভ আচরণ, আমাদের পিতা মাতার সাথে আমরা এত খোলা মেলা ছিলেন না, তারা অনেক গুরু গম্ভীর রাশভারী লোক ছিলেন, ফলে ভয়ে আতঙ্কে আমাদের মনোবিকাশ হয়ত ততটা উদার হয় নি।

দ্বিতীয়তঃ স্কুলে শিক্ষকরাও আমাদের কড়া শাসনে রাখতেন, মার বকা ছিল নিত্য নৈমিত্তিক ব্যপার, তবে তাদের রুখ্য আচরণ কোন ছাত্রের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পেরেছে কি না কে জানে, শুধু ভাল ছাত্র ছাত্রীরা ভাল ব্যবহার পেতেন আর অন্যদের উপর তাদের পারিবারিক-ব্যক্তিগত-অর্থনৈতিক-সামাজিক পাওয়া না পাওয়ার হিসেব নিকেশ মিটাতেন ।

তাহলে এই সমাজের একজন মানুষ যে পরিবার ও স্কুল থেকে কখনই সহানুভূতি পান নি, তিনি সমাজকে কি আচরণ দেবেন।

স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হোষ্টেলের ডাইনিং এ আমরা যে খাবার খেয়েছি, তাতে বড় হওয়া যায় কিন্তু মানুষ হওয়া কঠিন।

একটা লোকাল বাসে উঠ, জায়গা পাওয়া, বসতে পারা, সহযাত্রী ও বাস স্টাফ থেকে কিরূপ আচরণ পাওয়া যায়,

একজন সবজি বিক্রেতা বা যেকোন অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারী কিরূপ ব্যবহার করেন,
তাহলে এদেশের ডাক্তার তো আর ফেরেস্তা নন যে যখন তাদের সময় ও সুযোগ আসে তখন তিনি অন্যদের সাথে মিষ্টি মোলায়েম ব্যবহার করবেন

আমাদের দেশে সামাজিক নিরাপত্তা নাই, হেল্থ ইন্সুরেন্স নাই, সরকারি ব্যবস্থাও অব্যবস্থাপনায় ভরপুর তথৈবচ, রোগী হয়ে মানুষ হয়ে হাসপাতালের কুকুর বেড়ালের সাথে শুধু মেঝেতে নয়, বারান্দায় শুতে হয়, জায়গা জমি নিজে না কিনলে বৃদ্ধাশ্রমেও ঠাঁই হবে না, ফলে আমরা নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ও স্বস্তিদায়ক করার জন্য লোভী কসাই ডাক্তারের ভুমিকায় অবতীর্ণ হই, এটাই বাস্তবতা ।
______________________________

ডাঃ মোঃ শরিফুল ইসলাম
এম,বি,বি,এস (রাজঃ); এফ,সি,পি,এস (নিউরো-সার্জারি)
কনসালটেন্ট (নিউরো-সার্জারি)

 

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়