Ameen Qudir

Published:
2018-11-06 18:43:59 BdST

জুতার দোকানি ডাক্তারই ভাল : এমবিবিএস ডাক্তার এদেশের মানুষের দরকার নেই


 

 

অনলাইন সংবিধির প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রতিকী ছবি। রিপোর্টটিতে উল্লেখ করা জুতাঅলার ছবি দপ্তরে সংরক্ষিত আছে। বা/স।

 

ডা. শাহানা হাসিন
__________________________

সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় গাজীপুরের এক মস্ত জনপ্রিয় ভুয়া ডাক্তারের কথা জানলাম, যে কিনা বাস্তবে জুতার দোকানি। মেডিকেল কোন ডিগ্রি নাই। জুতার দোকানির অভিজ্ঞতা দিয়েই সে ডাক্তার। চমকপ্রদ ব্যাপার। তবে বাংলাদেশে জুতার দোকানিরাই ডাক্তারি করবে। একদল উগ্র ভুক্তভোগীর অপপ্রচার এবং মিডিয়ার মিথ্যাচার পরিস্থিতি সেদিকেই নিয়ে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ভুয়া জনপ্রিয় ডাক্তারদের সংখ্যা বাড়ছেই। তাদেরে ব্যবসাও রমরমা। এমবিবিএস ডাক্তাররা প্রতিটি রোগীর বাপ দাদা চৌদ্দ গোষ্টির পয়সায় পড়েছে বলে তাদের ওপর লোকজনের রাগের সীমা নেই। মন্ত্রী থেকে মন্ত্রীর পিওন, চাপরাশি, মুরগির ফেরিঅলা, কসাই সবাই এখন ডাক্তারি বোঝে।
জুতার দোকানিও এদেশে ডাক্তার। তাদের ব্যাপারে পাবলিকের কোন অভিযোগ নাই। তাদের হাতে মরেও শান্তি। কিন্তু এমবিবিএস ডাক্তারের ব্যাপারে নজরদারির সীমা নাই। রোগী হাসপাতালে নিরাময় অযোগ্য ডেঙ্গুতেও মরলেও হাসপাতাল ভাংচুর। সংশ্লিষ্ট ডাক্তারকে নিয়ে অপপ্রচারের সীমা নাই। এমবিবিএস ডাক্তার তো ঈশ্বর । কেন তারা রোগীকে বাঁচাতে পারে নাই।
সম্প্রতি আমাদের এক সিনিয়র ম্যাডাম আসগর আলী হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীকে যথাসাধ্য সঠিক ও নির্ভুল চিকিৎসা দিয়ে মহা বেইজ্জতির শিকার। রোগীর লোকজন তার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রপাগান্ডার জেহাদে নেমেছে। মহিলা ডাক্তারকে কত ভাবে অপমান অসম্মান করা যায় , তার জেহাদ করছে বিন লাদেনের মত। এই দেশে ডাক্তারদের কোন ভবিষ্যত নাই।
এখন বেঙ্গালোর , চেন্নাই মুম্বাই , সিঙ্গাপুর , মালয়েশিয়া থেকে রোগী না পাওয়া ডাক্তার এসে এখানে রোগী দেখলেও আগামীতে এই ফেসবুক জেহাদী ও হাসপাতাল ভাংচুর কারীদের ভয়ে তারাও আসবে না। তখন এদেশের স্বাস্থ্য সেক্টর চালাবে সব হাফ ডাক্তার , সেকমো, স্বাস্থ্যকর্মীরা। আর রমরমা ব্যবসা করকে ভুয়া ডাক্তাররা। নাপিত, দারোয়ান, হাজাম, রাস্তার কবিরাজ,
ক্লিনিকের আয়া, বুয়া , ব্রাদার, জুতার দোকানি , জুতা পালিশ কারী ডাক্তারি করবে।
নাপিত, জুতা সেলাইকারী তো সেলাই কাটা ফোঁড়া করতেই পারে। তাদের সেবায় ধন্য হবে বাংলাদেশের মানুষ।
বিশ্বাস হচ্ছে না। তবে নিচের কাহিনি পড়ুন। বেচারা জুতার দোকানি এখন বিরাট ডাক্তার জনগনের চিকিৎসা সেবা করতে গিয়ে অবশ্য মিডিয়ার কাছে ধরা পড়েছে। এদেশের মানুষের কিন্তু মহা সমস্যা হয়ে গেল। এদের এখন ডাক্তারি করবে কে !


গাজীপুরের কালীগঞ্জে সুজম (৩৮) নামে এক ব্যক্তি কোনোরকম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই বনে গেছে ডাক্তার। এক সময়ের এই জুতার দোকানি কালীগঞ্জ পৌরসভা বাজার এলাকায় অবস্থিত ‘সরকার ফার্মেসি’তে রীতিমতো চেম্বার খুলে রমরমা চিকিত্সা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এলাকার সচেতন মহল জানান, সুজমই এখানকার একমাত্র চিকিত্সক, যার কাছে ‘সকল রোগের’ চিকিত্সা সেবা পাওয়া যায়। স্থানীয় প্রশাসনের চোখে ধুলা দিতে তার চেম্বারটি খুব বেশি সুসজ্জিত বা আকর্ষণীয় করেনি। এমনকি সে কোনো প্যাড বা ভিজিটিং কার্ডও ব্যবহার করে না। ফার্মেসির দু’টি সাটারের একটি রাখে বন্ধ করে। ব্যবস্থাপত্র ছাড়া চিকিত্সা দিয়ে নিজের দোকান থেকেই ওষুধ ক্রয়ে বাধ্য করে রোগীদের। অথচ একজন চিকিত্সক হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ডিগ্রি তো দূরের কথা, স্কুলের গন্ডিই পার হতে পারেনি সুজন সরকার। শুধু ডাক্তারের চেম্বার খুলেই ক্ষান্ত হয়নি সে, মাঝে-মধ্যে হাতে তুলে নেয় ছুরি-কাঁচি। করে ছোট-খাটো অপারেশনও। এই ভুয়া ডাক্তারের ভুল চিকিত্সা ও প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সুস্থ হওয়া তো দূরের কথা রোগীদের আরো বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে বলে বিস্তর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বছর দশেক আগে সুজমর বর্তমান ফার্মেসির চেম্বারের পেছনের অংশে তার বাবা ইদ্রিস  ডাক্তারি করতেন। আর সুজন সেই সময় সামনের অংশে করত জুতার ব্যবসা। কিন্তু তার বাবার মৃত্যুর পর রাতারাতি পাল্টে যায় দৃশ্যপট। বাবার ডাক্তারি পেশা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়ে যায় সুজম সরকার। আর এভাবেই একজন জুতার দোকানি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই বনে যায় ডাক্তার। তবে তার এই ডাক্তার হওয়ার পেছনে স্থানীয়ভাবে একটি দালাল চক্র কাজ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সুজন  নিজেই তার চেম্বারে আসা রোগীদের সেবা দিচ্ছে। প্রতিটি রোগীর কাছ থেকে রোগ বুঝে ভিন্ন হারে ফি নিচ্ছে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও চতুর সুজম কোনো চিকিত্সাপত্র না দিয়ে নিজের ফার্মেসি থেকে দেওয়া ওষুধের মোড়কে ওষুধ খাবার নিয়মাবলি লিখে দেয় রোগীদের। সুজনের প্রথম টার্গেট জীর্ণ-শীর্ণ নারী রোগী। তাদের মোটা করার কথা বলে ফাঁদে ফেলে সুজন।

কালীগঞ্জ পৌর এলাকার মুনশুরপুর (টেকপাড়া) গ্রামের মৃত আফাজউদ্দিনের ছেলে মো. জামান মিয়া (৩৯) জানান, বছর ছয়েক আগে তার প্রচণ্ড জ্বর হলে তাকে তার পরিবারের লোকজন সুজমর কাছে নিয়ে যান। সেখানে গেলে সুজম তাকে ১টি ইনজেকশন এবং কিছু ওষুধ দিয়ে ১ হাজার ৩শ টাকা বিল রাখে। ইনজেকশনের একদিন পর জামানের কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। অবস্থা খারাপ হলে পুনরায় সুজনের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে সে আরো কিছু ওষুধ দিয়ে ১ হাজার ৭শ টাকা বিল রাখেন। কিন্তু এরপর জামানের অবস্থা আরো খারাপ হলে পরিবারের লোকজন তাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিত্সা করিয়ে সুস্থ করেন।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সরকার ফার্মেসিতে আসা বেশিরভাগ রোগীই দরিদ্র। এ কারণেই তাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে ওই ভুয়া চিকিত্সক ভুল সেবা দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব অভিযোগ সম্পর্কে সুজম সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তার বাবা এই সরকার ফার্মেসির মালিক ছিলেন। বাবা মারা যাওয়ার পর হাত বদল করে তিনি-ই দীর্ঘদিন ধরে রোগীদের চিকিত্সা চালিয়ে আসছেন। তার অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। তার ফার্মেসির ড্রাগ লাইসেন্স বা চিকিত্সা সেবা দেওয়ার জন্য কোনো প্রকার অনুমোদন আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নেই।’ সুজম নিজেকে একজন পল্লী চিকিত্সক হিসেবে দাবি করলেও তার সপক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ইতোপূর্বে বলেন, সরকার ফার্মেসির বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা শুনেছেন তিনি। এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বেশ আগে জানান, এমন ঘটনার কথা আমার জানা ছিল না। তবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও ডিগ্রি ছাড়া চিকিত্সা দিয়ে থাকলে সুজমর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

___________________________
ডা. শাহানা হাসিন । কলামিস্ট। প্রাক্তন ঢামেক।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়