Ameen Qudir

Published:
2018-09-10 15:26:31 BdST

মান সম্মত মেডিক্যাল শিক্ষাঃ পর্ব-৩উন্নত মেডিক্যাল সিলেবাস পর্যবেক্ষণ করে আমাদের শিক্ষা ও পরীক্ষা পদ্ধতি ঢেলে সাজান


লেখকের ছবি

 


ডা. আজাদ হাসান
_________________________________

মেডিক্যাল এডুকেশন কারিকুলাম বা মেডিক্যাল শিক্ষা কারিকুলামঃ
দুঃখ জনক হলেও সত্য আমাদের দেশে এখনো গ্রহন যোগ্য স্ট্যান্ডার্ড মেডিক্যাল শিক্ষা কারিকুলাম রচিত হয় নি। এ পর্যন্ত যে শিক্ষা কারিকুলাম অনুসৃত হচ্ছে তার সবটাই এডহক ভিত্তিক। আশির দশকের আগে মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ৬ মাস অন্তর অন্তর বছরে দুটো প্রফেশনাল পরীক্ষা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো। আর পুরো কার্সে মোট চারটা প্রফেশনাল পরীক্ষা হতো। অর্থাৎ প্রথম বর্ষ আর দ্বিতীয় বর্ষের সিলবাস মিলিয়ে প্রথম প্রফেশনাল পরীক্ষা হতো আর অন্যান্য প্রফেশনাল পরীক্ষাগুলো প্রতি ইয়ার এন্ডিং-এ হতো।

কিন্তু এতে করে দেখা গেলো যে মেডিক্যাল শিক্ষার ক্ষেত্রে শেসন জট দেখা দিলো। তাই, এই শেসন জট নিরসন কল্পে আশির দশকে এসে প্রতি ৪মাস পর পর প্রফেশনাল পরীক্ষা পদ্ধতির প্রচলন করা হয় আর পুরো কার্সে মোট চারটা প্রফেশনাল পরীক্ষা বহাল রাখা হয়।
কিন্তু এ ক্ষেত্রে যে বিপর্যয় পরিলক্ষিত হয় সেটা হলো, একটা প্রফেশনাল পরীক্ষার পর একমাসের মাঝে রেজাল্ট প্রকাশ করার শর্ত থাকলেও এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষকদের মাঝে সমন্বয়হীনতা এবং পুরো প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আন্তরিকতা ও মানসিকতার অভাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট সময়ে ফলাফল প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়।

অনেক সময় দেখা গিয়েছে যে, ফলাফল প্রকাশের সপ্তাহ-দশ দিন পরেই হয়তো আবার সাপ্লিমেন্টারী পরীক্ষার জন্য ফর্ম ফিল আপ করতে হয়েছে। তাই এই পদ্ধতিতে প্রথম দিকে শেসন জট্ কমলেও পরবর্তিতে দেখা গেলো যে, সময় মতো ফলাফল প্রকাশে ব্যর্থতার কারণে সাপ্লিমেন্টারী পরীক্ষার্থীরা দারুন ভাবে কষ্টের সম্মুখিন হচ্ছে। তা ছাড়া ক্লিনিকেল সাবজেক্ট-এর শিক্ষকদের জন্য চেম্বার মিস দিয়ে অন্য মেডিক্যাল কলেজে যেয়ে এত ঘন ঘন ভাইবা পরীক্ষা কন্ডাক্ট করাটাও ছিলো অনাকাঙ্ক্ষিত। ফলে প্রয়োজন হলো সংস্কারের।


নব্বই-এর দশকে এসে পুরো কোর্সের জন্য প্রফেশনাল পরীক্ষার সংখ্যা ৪টির স্থলে ৩টি করা হলো, অর্থাৎ তৃতীয় এবং চতূর্থ বর্ষ মিলিয়ে একটি প্রফেশনাল পরীক্ষার প্রচলন করা হয়।
কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হলো না, ৩য় এবং ৪র্থ বর্ষের সিলেবাস মিলিয়ে পরীক্ষার ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীরা আশানুরূপ ফলাফল করতে ব্যর্থ হওয়ায় আবার সেটা সংশোধন পূর্বক বছরে দুটো প্রফেশনাল পরীক্ষা এবং পুরো কোর্সে ৪টি পরীক্ষার সিস্টেমে ফিরে আসতে হয়।

এবার মেডিক্যাল এর পরীক্ষা পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক সমস্যা প্রসংগে আশা যাক। আগে সারা বাংলাদেশে ৪টা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৮টা মেডিক্যাল কলেজের প্রফেশনাল পরীক্ষা পরিচালনা করা হতো। কিন্তু সম্প্রতি দেশে সরকারী-বেসরকারী মিলিয়ে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত এবং অনুনমোদিত মিলিয়ে দেশে বর্তমানে কতটি মেডিক্যাল কলেজ আছে তার সঠিক পরিসংখ্যান সরকারও জানেন কিনা সন্দেহ আছে! আর এ সব মেডিক্যাল কলেজের পরীক্ষা কি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হবে নাকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হবে তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। ওদিকে আবার কিছু কিছু প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ তাদের সাথে সংযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হতেও মেডিক্যাল গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী দিচ্ছে। মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আবার পোস্ট গ্রাজুয়েশন কোর্স নিয়ে মহা ব্যস্ত। অন্যদিকে সরকার বপশ কয়েকটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিলেও সেগুলোর কাজ খুব ঢিলে তালে চলছে।

এবার সিলেবাস প্রসংগে আশা যাক। একজন মেডিক্যাল স্টুডেন্ট হিসেবে একজন ছাত্রের কতটুকু জানা প্রয়োজন তা আগে ঠিক করা আবশ্যক, নতুবা পরীক্ষার সময় ছাত্রদেরকে অথই সাগরে পড়তে হয়।

বর্তমান বিশ্বে গ্লোবালাইজেশনের যুগ চলছে। আজ যে মেডিক্যাল স্টুডেন্টটি বাংলাদেশ হতে মেডিক্যাল গ্রাজুয়েশন করলো কাল হয় তো সে আমেরিকা কিংবা কানাডা কিংবা ইংল্যান্ড অথবা অষ্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমাতে পারে। এবং তখন যদি সে ওখানে পোস্ট গ্রাজুয়েশন কোর্স করতে যেয়ে যেনো কোনো রূপ প্রতিকূলতার সম্মূখিন হতে না হয়, সে জন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট দেশ কর্তৃক আমাদের মেডিক্যাল কলেজ গুলোর রিকগনিশন। আর এই লক্ষ্যে প্রয়োজন উল্লেখিত দেশ সমূহের মেডিক্যাল সিলেবাস পর্যবেক্ষণ করতঃ আমাদের সিলেবাস, শিক্ষা পদ্ধতি, পরীক্ষা পদ্ধতি সব ঢেলে সাজানো। যাতে করে আমাদের দেশের মেডিক্যাল শিক্ষাও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হয় এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নবীন চিকিৎসকদের প্রতিকূল পরিস্থিতির শিকার হতে না হয়।
আগামীতে আমাদের দেশের মেডিক্যাল গ্রাজুয়েটরাও বহিঃবিশ্বে নিজ যোগ্যতায় স্ব স্ব অবস্থান তৈরী করতে সচেষ্ট হবেন, এটাই প্রত্যাশা।

______________________________

ডা. আজাদ হাসান।
সিওমেক
২১ তম ব্যাচ।
ই-মেইল:
[email protected]

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়