Ameen Qudir

Published:
2018-09-09 18:50:17 BdST

প্রতি বছর প্রতি বিসিএসে ১৫০০/২০০০ চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া উচিৎ


 

লেখকের ছবি

 


ডা. কামরুল হাসান সোহেল
____________________________

২০১০ সালে এডহক পদ্ধতিতে ৬,৫০০ চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল চিকিৎসক সংকট মেটাতে আর একটা উদ্দেশ্য ছিল তা ছিল রাজনৈতিক। দুটো উদ্দেশ্যই পূরণ হয়নি, এডহকে বাছবিচার না করে চাকরি দেয়া হয়। যারা রিটেনে অংশ নিয়েছিল তাদের সবাইকে ভাইবা দেয়ার জন্য ডাকা হয়েছিল। তার মানে রিটেন ছিল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র, ভাইবা ও প্রায় একই মানের ছিল। সারাদেশ থেকে লিস্ট পাঠানো হয় কেন্দ্রে, লিস্টে যাদের নাম ছিল তাদের সবাই যে একনিষ্ঠ নেতা, কর্মী বা সমর্থক ছিল তা নয়, অনেকের নামই লিস্টে ছিল নিজ স্বার্থের জন্য, নিজের গ্রুপ বড় করার জন্য, অনেকে বাকা পথেও (ম্যানেজ করে) চাকরি ভাগিয়ে নিয়েছিল।

এই লিস্ট লিস্ট খেলায় নিজ দলের অনেক পরীক্ষিত নেতা, কর্মী ও সমর্থক ও চাকরি প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছিল কিন্তু এডহকে সবচেয়ে লাভবান হয়েছিল বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা, বিশেষ করে নারী চিকিৎসকরা। এডহকে যারা নিয়োগ পেয়েছে তাদের অনকেই নিয়মিত বিসিএস দিয়ে যদি চাকরি পেতে হতো তাহলে হয়তো কখনোই সরকারী চাকরি পেতো না। এডহকে চাকরি পেয়ে তারা সরকারী চাকরিজীবী হয়েছে কিন্তু গ্রামে ছিলনা অধিকাংশই, নিয়োগ পাওয়ার ৩ মাস, ৬ মাস পরই অনেকেই প্রেষণে জেলা সদর হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চলে গিয়েছিল, আর যারা ছিল তারা ও ছিল অনিয়মিত। গ্রামে কমপক্ষে ২ বছর তারা কাগজে,কলমে ছিল কিন্তু বাস্তবে ছিলনা। সেই ফাকাই ছিল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো। ২ বছর শেষ করে সরকারি চাকরিজীবী কোটায় অধিকাংশই পোস্ট গ্র‍্যাজুয়েশন কোর্সে চান্স ভাগিয়ে নেয় নানা সাবজেক্টে। পুরো সুবিধা কাজে লাগালো কেউ বদনাম হল ছাত্রলীগ, মোট পোস্টের অর্ধেকও ছাত্রলীগের ছেলেপুলে পায় নাই, অনেকেই চাকরি পায় নাই কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের ছেলেপুলে ঠিকই চাকরি বাগিয়ে নিয়েছিল।

এডহক হিসেবে নিয়োগ পাওয়াদের এনক্যাডারমেন্ট করা সম্ভব হচ্ছিলনা তাই তাদের ক্যাডার করতে এবং আবারো চিকিৎসক সংকট দূর করতে ২০১৪ সালে ৩৩ তম বিসিএসে ৬০০০ চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। তার মাঝে ২০১০ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ২৯, ৩০, ৩১, ৩২ স্পেশাল বিসিএস এর মাধ্যমে ১৩০০/১৪০০ চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। ৩৩ তম বিসিএস এ এডহকের অধিকাংশই ক্যাডার হয়ে গেছে, বাকি রয়ে গেছে যারা সেই বিসিএসে অংশ নেয়নি তারা আর কেউ কেউ অংশ নিয়েও ক্যাডার হতে ব্যর্থ হয়েছে, এখনো ১৫০০/১৬০০ জন বাকি আছে।

৩৩ তম বিসিএসে এত চিকিৎসক নেয়ার পরও কাহিনী একই রকম হল, নিয়োগের ৩ মাস, ৬ মাস পরই অনেকেই প্রেষণে সদর হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চলে যায়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সেই ফাকাই হয়ে যায় আবার।

৩৪, ৩৫, ৩৬ বিসিএসে চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয় ১০০০/১১০০ জনের মতো, ফলাফল স্বরুপ বর্তমানে প্রায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সই চিকিৎসক শুন্য বা এক, দুইজন চিকিৎসক আছেন। গণ বদলী, নিজ জেলার বাইরে, নিজ বিভাগের বাইরে গণ বদলীর কারণেও শুন্যতার তীব্রতা বেড়েছে। সেই চিকিৎসক সংকট মেটাতে ৩৯ স্পেশাল বিসিএস এর মাধ্যমে ৭০০০ চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হবে কিন্তু কাজের কাজ কিছু হবে কি? ঘটনার ধারাবাহিকতা সেই আগের মতোই হবে। এইভাবে ৩/৪ বছর বিসিএসে কম চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে তীব্র সংকট তৈরি করে স্পেশাল বিসিএসে হঠাৎ কোন বিসিএসে এত অধিক সংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে এই শুন্যতা দূর করা যাবে না তার জন্য প্রতিবছর প্রতি বিসিএসে ১৫০০/২০০০ চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া উচিৎ এবং ২ বছরের আগে যেন কোনক্রমেই প্রেষণে সদর হাসপাতাল বা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চলে যেতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো কখনো এইভাবে চিকিৎসক শুন্য হয়ে পড়তো না।

___________________________
ডা. কামরুল হাসান সোহেল


আজীবন সদস্য, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ , কুমিল্লা জেলা।
কার্যকরী সদস্য at স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ
আজীবন সদস্য,বিএমএ কুমিল্লা।
সেন্ট্রাল কাউন্সিলর, বিএমএ কুমিল্লা

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়