Ameen Qudir

Published:
2018-09-06 15:46:57 BdST

চারিদিকে শুধু ডাক্তার আর ডাক্তার:নতুন বের হয়েছে ডাঃ ইউটিউব


ইউটিউব ডাক্তার দিদির ছবি নমুনা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তাঁর সম্মানহানি ছবি প্রদর্শনের উদ্দেশ্য নয়।

 

ডা.মিথিলা ফেরদৌস
___________________________________

জামাইকে বললাম,
:চুল স্ট্রেইট করতে চাই।
:কেন?চুল যেমন আছে তেমনই ভাল।
:হোক!তবুও শখ হইছে করতে চাই।করবো।
:আচ্ছা,ইউটিউবে দেখবো,কেমন করে চুল স্ট্রেইট করে,আমিই করে দিবো!
:তুমি করবা মানে!!আমরা বিশ্বে সবচেয়ে বড় বার্ন ইন্সটিটিউটের মালিক হইতে যাচ্ছি,কিন্তু আমি তার রুগী হইতে চাইনা।

কয়দিন আগেই পড়লাম,ইন্ডিয়ায় এক স্বামী ইউটিউব দেখে বউয়ের ডেলিভারি বাসায় করাতে গিয়ে বউকে মেরে ফেলেছে ।থ্রি ইডিয়টস দেখে রিয়েল ইডিয়টরা শুধু আমাদের দেশেই নাই,ইন্ডিয়াও এমন চিজ আছে তাহলে!

ডাক্তার হইতে চাওয়া শুধু 'এইম ইন লাইফেই' লেখা হয় না,বেশিরভাগ মানুষের ইচ্ছাও হয়তো এমনই থাকে।তাই বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেখা যায়,ঘরে বসে তিন মাসে ডাক্তার হউন,চীনে বিভিন্ন টাইমে ডাক্তার হওয়ার বিভিন্ন অফার,আর নতুন বের হইছে ডাঃ ইউটিউব। চারিদিকে শুধু ডাক্তার আর ডাক্তার!

কিছুদিন আগে,আমার এক পোস্টে ডাক্তারদের প্রতি ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটাইয়া একজন জ্ঞানীব্যক্তি( ডাঃ ইউটিউব) লিংক সহ কমেন্টে কইলো,"আপনারা সাপ্লিমেন্ট কেন দেন?বিশেষ করে ক্যালসিয়াম, এই দেখেন সাপ্লিমেন্ট দেয়ার কোনও দরকার নাই।"আমাদের দেশের ডাক্তারদের প্রাক্টিস নিয়ে খুব একচোট দিলো।

আমার উত্তর ছিলো,'সাপ্লিমেন্ট দেয়ার অবশ্যই কোন দরকার নাই,যদি সে খেতে পারে,যদি সে সম্পুর্নভাবে সুস্থ হয়,তার শরীরের ক্যালসিয়াম প্রসেস করা অঙ্গ গুলি ঠিক মতো কাজ করে।কিন্তু জানেন কি আমি আমার আমার বাবা মাকে ক্যালসিয়াম দিই।কেন?আমার মায়ের বয়স প্রায় ৬০ এর কাছে,তাকে ক্যালসিয়াম না দিলে তার হাড্ডিগুলি ফুটো হয়ে যেকোন সময় ফ্রাকচার হবে,অল্প আঘাতেই।মহিলাদের মিনিস্ট্রেশন বন্ধ হবার পর ইস্ট্রোজেন নামক হরমোনের অভাবে বোন্সের ডিজেনারেটিভ চেঞ্জ হয়, তাই তাদের ক্যালিসিয়াম দেয়া জরুরী।আমার বাবাকে আমি তিনবেলা ক্যালসিয়াম দেই আর একবেলা ক্যালসিট্রিওল নামক হরমোন দিই,যা ক্যালসিয়ামের এবজরপশন বাড়ায়।আমার বাবার ডায়াবেটিস, একবার ক্রিয়েটিনিন বেড়ে গিয়েছিলো।এরপর নরমালে আসার পরেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে জিজ্ঞেস করি,"আর এত বেশি ক্যালদিয়াম দেয়া দরকার আছে কি?"উনি বিরক্ত হয়ে বললেন,"একবার সি কে ডি মানে আজীবন সিকেডি এর চিকিৎসাই পাবে,নরমাল থাকলেও পাবে।"আমি উচ্চবাচ্য করিনি,আমার যুক্তিতেও মনে হয়েছে,যেহেতু ডায়াবেটিক রিস্ক না নেয়াই ভাল।'

ভাই,শুধু ইউটিউব আর গুগল দেখেই যদি ডাক্তার হওয়া যেতো,তাহলে কেন,মেডিকেল কলেজে পাঁচ বছর পেইনফুল পড়াশুনা করার দরকার?কেন প্রতিবছর মেডিকেল স্টুডেন্টরা ৬/৭ জন করে সুইসাইড করতেছে একবার ভেবে দেখেছেন কি?

একটা শরীরের এনাটমি জানলে শরীরে যেকোন জায়গায় হাত দিতেই আপনি ভয় পেতেন,কোয়াকদের মত "এম আর "করতে জরায়ু ফুটা করে নাড়িভুঁড়ি বের করে হাসপাতালে পাঠাতেন না।

একটা ঔষধের ডোজ,সাইড ইফেক্ট,কোন ড্রাগের সাথে কি ইন্টারেক্ট করতেছে,কখন দেয়া যাবে, কখন দেয়া যাবেনা জানতে আমাদের ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি,ফার্মাকোলজি জানতে হয়েছে।
একটা ডিজিস,তার জীবানু সম্পর্কে জানতে প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি পড়তে হয়েছে।
ডিজিস প্রিভেনশনের জন্যে কষ্ট করে,কমিউনিটি মেডিসিন পড়তে বসে কত কেঁদেছি।
তারপর ক্লিনিকাল সাবজেক্ট নাইবা বললাম।পাঁচবছরে কত নাকানিচোবানি খেয়ে তারপরে এম বি বি এস।

নতুন ৫ টি মেডিকেল কলেজ হয়েছে,শুনে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছি আমি।সব জেলায় কেন,সব উপজেলা,সব সাবসেন্টার,পাড়ায় মহল্লায় মেডিকেল কলেজ দরকার। কমপক্ষে প্রতি পরিবারে একজন ডাক্তার থাকা জরুরী।তাহলে বুঝতেন,ডাক্তারি এত সহজ কোন ব্যাপার না।চাইলেই দুই চারটা ঔষধের নাম জানলেই ডাক্তার হওয়া যায় না!মেডিকেল কলেজ হওয়া আরও জরুরী, যাতে পাচ বছর কষ্ট করে পড়েই সবাই ডাক্তারি করে,তাহলে অন্তত ম্যালপ্রাকটিসগুলি বন্ধ হতো।কোয়ালিটি যেমনই হোক,ডাক্তারি পড়া কত কষ্টের তা সবারই জানা জরুরী।

হোক,এমবিবিএস পাশ করে চাকরী না পেয়ে ফুটপাথে ডিমসিদ্ধ বিক্রি করলেও ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কথা বলা বন্ধ হতো,কিছুটা হলেও ইথিকেল হতে পারতেন।পাড়ার ফার্মেসিতে গিয়ে ইনএডুকুয়েট ডোজে এন্টিবায়োটিক খাওয়া বন্ধ হতো।এইটুকু বেসিক তো জানতে হতো।

আমার পাড়ায় সব ঘরেই ডাক্তার আছে,এমনকি আমাদের পাশে কয়েকটা ছোট দোকানের দোকানদারের ছেলে মেয়েরা শুনেছি,বিভিন্ন প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে পড়ে।তাই সেখানে কেউ ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কোন কথা বলেনা।

দেশ আর কিছুতে সমৃদ্ধ না হলেও,এমবিবিএস ডাক্তারে সমৃদ্ধ হোক,ঘরে ঘরে এমবিবিএস ডাক্তার হোক,সকলের মনের আশা পূর্ণ হোক,সবাই পাচ বছর এমবিএস পড়েই(কি যাতনা বিষে)এমবিবিএস ডাক্তার হোক,ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কলম বন্ধ হোক এই কামনায় চাই বেশি বেশি মেডিকেল কলেজ ,সরকারি বেসরকারি সবধরনের মেডিকেলে পুর্নহোক আমার সোনার বাংলা।
___________________________

© ডা.মিথিলা ফেরদৌস । সুলেখক।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়