Ameen Qudir

Published:
2018-07-13 16:15:25 BdST

'বড় ডাক্তার' ফার্মেসিওয়ালায় নিজের বারোটা বাজিয়ে আসেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে


 


ডা. কামরুল হাসান সোহেল
_________________________

আমাদের দেশের জনগণ খুব সচেতন! তাই এরা দেশে চিকিৎসা নিলে পাস করা ডাক্তারের কাছে না গিয়ে প্রথমেই যায় ফার্মেসিওয়ালার কাছে,সেখানে কয়েকবার ইরেগুলার এন্টিবায়োটিক খেয়ে রোগের বারোটা বাজিয়ে চিকিৎসা নিতে আসে এফসিপিএস/এমডি পাস করা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে। তা ও সরাসরি নিজে আসেনা, আসে সেই ফার্মেসিওয়ালাকে নিয়েই। যে কি না তার রোগের বারোটা বাজিয়েছে,আজেবাজে চিকিৎসা দিয়েছে,অযথা টাকা খুইয়েছে।সে এখন সেই একই রোগী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেম্বারে এনে কমিশন পাবে, রোগীর রোগ নির্ণয়ের জন্য যা টেস্ট দেয়া হবে তার ৪০-৫০%কমিশন বগলদাবা করবে। তারপর রোগীর অপারেশন লাগলে যা খরচ রাখবে হসপিটাল তার ৫০% কমিশন বগলদাবা করবে।রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকলে যা বিল রাখবে তার ৫০% কমিশন বগলদাবা করবে সে। যদি রোগী সরাসরি আসতো তাহলে রোগী সব বিলে ৫০% পর্যন্ত ছাড় পেতো। রোগী হাতের কাছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক দেখাবেনা, সেখানে যারা আছেন তাদের তারা চিকিৎসক মনে করেন না তারচেয়ে ফার্মেসিওয়ালাকে বড় ডাক্তার মনে করেন। সেই ফার্মেসিওয়ালাই তাকে কোন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য না নিয়ে গিয়ে নিয়ে যাবে বেসরকারি হাসপাতালে যেখানে খরচ বেশি লাগবে এবং সে কমিশন পাবে। তাদের মতো কমিশনখোরদের ফাদে পরেই রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যায় কয়েকগুণ।

এখন শুরু হয়েছে নতুন ট্রেন্ড, গ্রামের দালালদের পাশাপাশি নতুন দালাল জুটেছে যারা রোগীদের দেশের সীমানা ছাড়িয়ে পাশের দেশে নিয়ে যাওয়ার দালালি করছে। আমাদের দেশের সরকারি, বেসরকারি হাসপাতালেও না কি ভাল চিকিৎসা পাওয়া যায়না এই যুক্তি দেখিয়ে তারা আমাদের দেশের বেশি বুঝা (ব্রেইন ওয়াশড) রোগীদের পাশের দেশে চিকিৎসা নেয়ার জন্য পাঠায়,নিজেরাই হাসপাতাল,কেবিন বুকিং দেয়, ডাক্তারের সিরিয়াল নিয়ে দেয়,ঐদেশে চিকিৎসা বাবদ যা খরচ হয় তার একটা মোটা অংকের কমিশন পায় তারা। আমাদের দেশের রোগীরাও সেই দেশে গিয়ে সেই দেশের ডাক্তারের দেখা পেয়ে,কথা বলতে পেরেই খুশি।তাদের কথা শুনেই না কি অনেকে সুস্থ হয়ে যায়? যেই দেশে প্রায় সব মেডিসিনই কম্বিনেশন এ তৈরি, প্যারাসিটামলের সাথে ডাইক্লোফেনাক কম্বিনেশন করে তারা ব্যথানাশক ট্যাবলেট তৈরি করে যা আমাদের দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে ব্যথা কমানোর জন্য মুড়ির মতো খায় লোকজন।

রোগীরা যতোদিন নিজেদের ভালো মন্দ না বুঝবে,নিজে থেকেই সচেতন না হবে ততোদিন এই দুষ্টচক্র তাদের শোষণ করেই যাবে আর সাধারণ রোগীরা তার জন্য দায়ী করে যাবে চিকিৎসকদের আর চিকিৎসাব্যবস্থাকেই।

________________________

লেখক :ডা. কামরুল হাসান সোহেল

আজীবন সদস্য, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ , কুমিল্লা জেলা।
কার্যকরী সদস্য, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ
আজীবন সদস্য,বিএমএ কুমিল্লা।
সেন্ট্রাল কাউন্সিলর, বিএমএ কুমিল্লা

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়