Ameen Qudir

Published:
2018-07-11 16:45:22 BdST

চট্টগ্রামের ক্লিনিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান: এক চিকিৎসকের পোস্ট মর্টেম


 

 


ডা. আজাদ হাসান
______________________

সম্প্রতি চট্টগ্রামে বিভিন্ন বেসরকারী ক্লিনিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি কর্তৃক এবং ম্যাজিস্ট্রেট-এর নেতৃত্বে RAB ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের প্রতিনিধি সমন্বয়ে যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ভ্রাম্যমান আদালত কর্তৃক প্রাপ্ত অনিয়ম সমূহ পর্যালোচনা করতঃ ভবিষ্যতের জন্য এটি একটি সতর্ক বার্তা হিসেবে নিলে এটা স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের জন্য উল্লেখ যোগ্য অবদান রাখতে সমর্থ হবে বলে আমার ধারণা।

প্রাপ্ত অনিয়ম গুলো এক একটি করে বিশ্লেষণ পূর্বক এর দায় ভার কার সেটাও উল্লেখ করার প্রয়াস রইলো। প্রসংগত উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য সেবা একটি টীম ওয়ার্ক, এখানে সবার দায়িত্ব চার্টার্ড করা আছে। তাই একজনের দায়িত্ব যেমন অন্যকে দেয়া যায় না তাই একজনের দায়িত্বে অবহেলার কারণে আর একজনকে অভিযুক্ত করার যুক্তিযুক্ত নয়। এবারে অনিয়ম প্রসংগে আসা যাক।

১) অপারেশন থিয়েটারে মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ এবং সার্জিক্যাল সামগ্রী যেমনঃ সুচার মেটেরিয়াল, এন্ডোট্রাকিয়াল টিউব প্রাপ্তি।

প্রশ্ন হলো এগুলো দেখার দায়ভার কার?
নিয়ম হলো, প্রতিটি ওটির জন্য একজন উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সিনিয়র স্টাফ নার্স "ওটি ইন্-চার্জ" হিসেবে থাকবেন। তিনি ওটি অপারেশনের জন্য প্রস্তুত করার জন্য বিভিন্ন বিভাগের মাঝে সমন্বয় করে ওটির জন্য সব সরঞ্জামাদি প্রস্তুত করবেন। যেমনঃ অপারেশনের জন্য প্রয়োজনীয় ইন্সট্রুমেন্ট সংগ্রহ করে স্টেরালাইজ করা, গজ, কটন, প্রয়োজনীয় ঔষধ পত্র, সুচার মেটেরিয়াল, গাউন, মাক্স, গ্লাফস ইত্যাদি রেডি করা। এক কথায় ওটি'র যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা। ওটি ইন্-চার্জের গ্রীন সিগল্যাল ছাড়া যত বড় সার্জনই হোন না কেনো কোনো ওটি করতে পারবেন না। আর করলে যদি কোনো অঘটন ঘটে বা পোস্ট অপারেটিভ কমপ্লিকেশন দেখা দেয় তা হলে সব দায় সংশ্লিষ্ট সার্জনের। প্রসংগ ক্রমে বলে রাখি ঔষধ কিংবা সুচার মেটেরিয়াল-এর এক্সপায়ারি ডেট দেখা প্রথমত ওটি ইন্-চার্জ বা দায়িত্ব প্রাপ্ত স্টাফ নার্সের দায়িত্ব। এরপর এক্সপায়ারি ডেট ক্রস চেক করার দায়িত্ব ওটিতে এসিস্ট্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের।

২) প্যাথলজি ল্যাব-এ মেয়াদ উত্তীর্ণ রিএজেন্ট, এটা দেখার দায়িত্ব মূলতঃ ল্যাব টেকনিশিয়ানের এবং এগুলো মনিটরিং এর দায়িত্ব ক্লিনিক ম্যানেজমেন্ট-এর।

৩) ফার্মেসীতে বিক্রয় নিষিদ্ধ ও মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ প্রাপ্তির জন্যও সংশ্লিষ্ট ফার্মাসিস্ট দায়ী।
এবং এগুলো মনিটরিং এর দায়িত্ব ক্লিনিক ম্যানেজমেন্ট-এর।

৪) আইসিইউ-তে ঔষধ প্রশাসনের অনুমোদন হীন ঔষধ বা ইনজেকশন প্রাপ্তি সংশ্লিষ্ট আইসিইউ ইন্-চার্জের চরম দায়িত্বে অবহেলা।
এবং এগুলো মনিটরিং এর দায়িত্ব ক্লিনিক ম্যানেজমেন্ট-এর।

৫) মাইক্রোবায়লজি ল্যাব-এ মেয়াদ উত্তীর্ণ কালচার মিডিয়া থাকাও রীতি মতে অপরাধ। ল্যাব ইন্-চার্জ এ জন্য তার দায় এড়াতে পারেন না।এক্ষেত্রেও এগুলো মনিটরিং এর দায়িত্ব ক্লিনিক ম্যানেজমেন্ট-এর।

৬) অন্য ল্যাব-এ পরীক্ষা করে নিজেদের প্যাডে রিপোর্ট দেয়া অনৈতিক এবং প্রতারণার সামিল। এটা ঠিক বিশেষ বিশেষ টেস্ট হয়তঃ সব সময় সব ক্লিনিকে হয় না, সেক্ষেত্রে যেই ল্যাব হতে টেস্ট করা হয়েছে সেটা উল্লেখ করাই বাঞ্ছনীয়। তাতে করে কাজের স্বচ্ছতা বাড়ে।

৭) ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়া এবং প্যাথেডিন ব্যবহারের আলাদা অনুমোদন ছাড়া ফার্মেসী পরিচালনা করা কিংবা প্যাথেডিন বিক্রী করা আইনত অপরাধ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই দায় এড়াতে পারেন না।

৮) অদক্ষ এবং আন্-কোয়ালিফাইড ব্যক্তি দ্বারা ল্যাবের কাজ পরিচালনা করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ এবং পেসেন্ট সেইফটির কথা চিন্তা করলে সেটাও সঠিক নয়।

৯) উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত দক্ষ টেকনিশিয়ান, স্টাফ নার্স এবং প্যারামেডিক স্টাফ স্বল্পতা গ্রহন যোগ্য নয়। অচিরেই ক্লিনিক মালিকদের উচিত দক্ষ জনবল নিয়োগ দেয়া।

১০) উপযুক্ত মাইক্রোবায়লজিস্ট এবং বায়োকেমিস্ট বিশেষজ্ঞ না থাকা। এ ক্ষেত্রে হয়তো দ্রুত সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে না তবে সে ক্ষেত্রে পার্ট টাইম কন্সাল্টেন্ট নিয়োগে কোনো আইনী বাধা না থাকলে ভেবে দেখার অনুরোধ থাকলো।

১১) সঠিক ভাবে মেডিক্যাল ওয়েস্ট প্রোডাক্ট এর সেফ ডিসপোজাল সিস্টেমের অনুপস্থিতি।
জনস্বাস্থ্যের ঝুকির কথা বিবেচনায় নিয়ে জেলা পর্যায়ের সমস্ত প্রাইভেট ক্লিনিকের মালিকেরা মিলে "মেডিক্যাল ওয়েস্টেজ সেফ ডিসপোজালের" জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নিতে পারেন।

১২) ওটি'র পরিবেশ মান সম্মত ভাবে যথেষ্ট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন নয়। নিরাপদ অপারেশনের জন্য স্বাস্থ্যকর ওটি'র কোনো বিকল্প নেই, তাই এ ক্ষেত্রে কম্প্রোমাইজ করার কোনো সুযোগ নেই। ওটির পরিবেশ স্ট্যান্ডার্ড হওয়ার জন্য যা যা করা প্রয়োজন সে উদ্যোগ সংশ্লিষ্ট ক্লিনিক মালিককে নিতে হবে।

১৩) তা ছাড়া আর একটি গুরুত্ব পূর্ণ অভিযোগ ১১ টি রেফ্রিজারেটর এর মধ্য কেবল মাত্র ১ টি ছাড়া অন্যান্য রেফ্রিজারেটর সঠিক ভাবে তাপমাত্রা মেইনটেইন করে না, এমতাবস্থায় যে সব ঔষধ রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করা হয় তাও সঠিক তাপমাত্রা মেইনটেইন করে না। ফলে ঐ সব ঔষধের গুণাগুণ প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যাচ্ছে।
উল্লেখিত প্রতিটি অভিযোগ নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ। আশা করবো, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উল্লেখিত অনিয়ম সমূহ নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নিবেন এবং যে সমস্ত ক্লিনিকে এখনো এ ধরনের সমস্যা রয়ে গিয়েছে তারাও তাদের সমূহ নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নিবেন।

ক্লিনিক বা ডায়গনসিস সেন্টার সমূহের সেবার মান নিয়মিত মনিটরিং এর জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিটি জেলায় সিভিল সার্জন অফিসে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এবং "মেজেস্ট্রেসি" ক্ষমতা সম্পন্ন "এসিস্ট্যান্ট ডাইরেক্ট" পদ মর্যাদার কিংবা তার উর্ধ্বের পদবীর অন্ততঃ ২ জন কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণাধীন স্বতন্ত্র "কোয়ালিটি কন্ট্রোল সেল বা উইং" খোলা প্রয়োজন। কেননা, মেজেস্ট্রেসি ক্ষমতা ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষে এসব অনিয়ম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। বর্তমান ব্যবস্থায় স্বাস্থ্য বিভাগকে এসব মনিটরিং করতে প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটদের সহযোগিতার উপর নির্ভর করতে হয়। ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবরা জেলার অন্যান্য কাজ করে সময় পেলে তখন স্বাস্থ্য প্রশাসনকে সময় দেন। এতে করে বর্তমানে প্রচলিত ব্যবস্থায় স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম গুলো নিয়মিত মনিটরিং এর আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না।

প্রসংগত উল্লেখ্য, হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিক এর স্বাস্থ্য ঝুকি কমানোর জন্য নির্দিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং ড্রেস কোড ব্যবহার করার নিয়ম সর্বজন বিদিত। কিন্তু আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করলাম, ম্যাজিস্ট্রেট পরিচালিত ইনভেস্টিগেশন টীম এবং আমাদের প্রশিক্ষিত RAB বাহিনী কর্তৃক অবলীলাক্রমে সে সব নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে অপারেশন থিয়েটর, আইসিইউ, নিওনেটাল আইসিইউ-তে ঢুকে পড়লো। আমরা যখন টিভি স্ক্রিনে এদৃশ্য দেখি তখন সত্যি বিস্মিত হয়েছি। কারণ, আমরা চিকিৎসকরাও কখনো নিজস্ব ব্যক্তিগত পোষাক পড়ে রোগীর স্বাস্থ্য ঝুকি কমানোর স্বার্থে ঐ সব "ক্রিটিক্যাল কেয়ার রুমে" প্রবেশ করি না। ওসব রুমে ঢোকার আগে আমরা নির্দিষ্ট পোষাক এবং নির্দিষ্ট স্যান্ডেল পায়ে প্রবেশ করি। আর এটা করি রোগীর নিরাপত্তার স্বার্থে। ওনারা ইনভেস্টিগেশন করবেন সে ব্যাপারে আপত্তি করছি না, তবে ওনাদের উচিত ছিলো ওটি, আইসিইউ-র মতো ক্রিটিক্যাল কেয়ার প্লেস গুলোতে প্রবেশ করার আগে ওটি, আইসিইউ-র জন্য নির্ধারিত ড্রেস পরিধান করা। উল্লেখ্য, আমাদের দেশের মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়গণ যখন সিএমএইচ-এ কিংবা যে কোনো কর্পোরেট হাসপাতালের আইসিইউ-তে কোনো রোগী দেখতে যান, তখন ওনারাও কিন্তু নির্দিষ্ট ড্রেস পরিধান করেন।

যে কোনো অনিয়মকে আমরা নৈতিকভাবে সমর্থন করি না। সব জায়গায় নিয়ম শৃংখলা ফিরে আসুক এটা আমাদেরও প্রত্যাশা। তবে এখানে একটা বিষয় উল্লেখ করতে চাই, সেটা হলো সব অনিয়মের জন্য ঢালাও ভাবে ডাক্তারদেরকে দোষারোপ করা হয়, কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে ডাক্তাররা এ জন্য কতটা দায়ী তা আমি জাগ্রত বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখছি। আশা করি আমার লেখাটা মনোযোগ দিয়ে পড়লে জবাব পেয়ে যাবেন।

আমি মনে করি প্রতিটি প্রাইভেট ক্লিনিক এক একটি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান, তারা পয়সার বিনিময়ে জনগনের স্বাস্থ্য সেবা দিতে একদিকে যেমন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তেমনে পেসেন্ট কেয়ারের ব্যাপারেও স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখার ব্যাপারে অংগীকার বদ্ধ। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে আমাদের দেশের প্রাইভেট ক্লিনিক গুলো কতটা স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখতে সমর্থ হয়েছে তা প্রশ্নবিদ্ধ। তাই আমি মনে করি যদি কোনো ক্লিনিক স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়, সেক্ষত্রে আর্থিক দন্ড প্রদান ও সতর্কীকরণ এটা আইনী প্রক্রিয়ার অংশ। আর যে কোনো আইনী পদক্ষেপকে আমাদের সমর্থ জানানো আমাদের নৈতিকতার পরিচায়ক বলে আমি মনে করি।

আমি আগেই উল্লেখ করেছি, প্রাইভেট ক্লিনিক সমূহ এক একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। এটার উদ্দেশ্য হলো ব্যবসা করা আর জনসেবা বা স্বাস্থ্য সেবা যে নামেই অভিহিত করুন না কেনো, সেটা হলো বাই-প্রোডাক্ট। তাই এখানে ক্লিনিক মালিকেরা সর্বদা তাদের স্বার্থ দেখবেন এটাই স্বাভাবিক। হয়তো অনেকে বলতে পারেন, ক্লিনিক ব্যবসার সাথে তো অনেক ডাক্তারও জড়িত আছেন, আমি সেটা অস্বীকার করছি না, তবে এ প্রসংগে আমার বক্তব্য যখন কোনো চিকিৎসক কোনে ক্লিনিক ব্যবসার সাথে জড়িত হয়ে পড়েন তখন তিনি আর চিকিৎসক থাকেন না তখন তার স্বত্বা জুড়ে বিরাজ করে ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি। তাই কোনো ক্লিনিকে ডাক্তার অংশীদার হলেই যে তিনি ব্যবসায়ী হবেন না তা ভাববার কোন যুক্তিসংগত কারণ নেই।

সাংবাদিকতা একটি মহান ও সম্মানজনক পেশা। তাই সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, কোনো কিছু সঠিক ভাবে না জেনে কেবল ধারণা করে সংবাদ প্রচার করবেন না। কেননা "ডায়রিয়ার রোগীকে কেনো কলেরা স্যালাইন দেয়া হলো"(?) কিংবা "স্টেম সেল" দিয়ে চিকিৎসার সংবাদ প্রসংগে "গাছের কান্ড দিয়ে চিকিৎসা "-এ জাতীয় সংবাদ ইতিমধ্যে আপনাদের পেশাগত দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
আমার মতে যে কোনো কথা বা সংবাদ প্রচার করার আগে ভেবে দেখতে হবে সংবাদটি কতটা বস্তুনিষ্ঠ। তাছাড়া আপনাদের কলমের হাত যেমন লম্বা, লেখনীর শক্তিও তেমন অপরিসীম। এমন কিছু পত্রিকায় লেখা বা প্রচার করা সম্মত নয় যা রোগী এবং চিকিৎসকের মাঝের আস্থার জায়গাটি নষ্ট করে দেয়। দেখুন আজ থেকে ৩০ বছর আগে আমাদের দেশের শিশু মৃত্যুর হার, মাতৃ মৃত্যুর হার, ভ্যাক্সিনেশন-এর কাভারেজের হারের সাথে বর্তমান সময়ের পরিসংখ্যান মিলিয়ে দেখুন তা হলে পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন। গর্ভবতী মায়ের পেটে গুলিবিদ্ধ শিশু কিংবা জন্মগত ভাবে জোড়া শিশু বা কনজয়েন্ট শিশুর সার্জিক্যাল সেপারেশন করা এগুলো কিন্তু আমাদের দেশের ডাক্তারদের অর্জন।
সাম্প্রতিক আর একটি খবর দিয়ে অনুরোধ করবো সাংবাদিক ভাইরা ডাক্তারদের বিরুদ্ধে আর বিদ্বেষ ছড়াবেন না।
কয়েক লাইনের একটা "গল্প" বলি, না গল্প নয় "ঘটনা" বলি। দুনিয়ার সবচেয়ে জটিলতর চিকিৎসা পদ্ধতির একটি হচ্ছে 'বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট'। খরচ তাই কোটি টাকার উপরে। (এমন কি ইন্ডিয়াতেও চিকিৎসা ব্যয় প্রায় কয়েক কোটি)।

"মাল্টিপল মায়োলোমা"র রোগী মানে সরাসরি ক্যানসারের রোগী, পুস্তকের ভাষায় এসব রোগীর ক্ষেত্রে শতভাগ মৃত্যুর ঝুঁকি!

আর সম্প্রতি এই রোগে আক্রান্ত একজন রোগীর সফল ভাবে "বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট" করে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বিএসএমএমইউ হতে ঘরে ফিরে গেছেন। ক্যানসার জয়ী একজন রোগী।
এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন বংগবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগ। এটা তাদের প্রথম সফল ট্রান্সপ্ল্যান্ট।
খরচ ৩ লাখেরও কম। উক্ত রোগী জীবনের এই দ্বিতীয় অধ্যায় সুস্থতা পাক, দীর্ঘ জীবী হোক, সেই দোয়া করি। Congratulations to the all team members.

আশা করি ডাক্তারদের অর্জন গুলোকে ভীত্তিহীন সমালোচনার মাঝে ম্লান করে দিবেন না। আপনারা (সাংবাদিকরা) যেনো কোন কায়েমী স্বার্থের কাছে নিজেকে বিকিয়ে না দেন, এটাই প্রত্যাশা।

স্বাস্থ্য সেবার সর্বত্র স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হোক, ডাক্তারদের কর্মক্ষেত্র নিরাপদ হোক, রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত হোক এটাই আজকের প্রত্যাশা।

__________________________

ডা. আজাদ হাসান
২১ তম ব্যাচ,
সিওমেক।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়