Ameen Qudir

Published:
2018-07-03 16:16:53 BdST

চিকিৎসককে অপরাধী করার ক্ষেত্রে আমরা যেন অসহিষ্ণু ও অমানবিক হয়ে না উঠি


 



ডা. বাহারুল আলম
____________________________

চট্টগ্রাম বিএমএ ও তার সাধারণ সম্পাদক ডা ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী–কে অভিবাদন। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পূর্বে তার নেতৃত্বে গ্রেপ্তারকৃত চিকিৎসককে থানা থেকে মুক্ত করে আনার জন্য
............................................................
কোন মৃত্যু কারো কাম্য নয়। মৃত্যুর জন্য চিকিৎসককে অপরাধী করার ক্ষেত্রে আমরা যেন অসহিষ্ণু ও অমানবিক হয়ে না উঠি। শিশু সহ বয়স্ক মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে চিকিৎসককে সাহসী রাখার দায়িত্ব যেমন রাষ্ট্রের , তেমনি ‘ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে’- এই অজুহাতে তাৎক্ষনিক দায়মুক্তি থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসককে দায়গ্রস্ত করে অপরাধী হিসাবে হাতকড়া লাগিয়ে অপমান না করার দায়িত্বও রাষ্ট্রের।

চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসা সহ মেডিকেল এথিকস বিরুদ্ধ সকল অপরাধের শাস্তি যেমন আমরা চাই। তেমনি দায়মুক্ত থাকা বিনা অপরাধে একজন চিকিৎসককেও যেন পুলিশ ও জনগণ হেনস্তা না করে –সেটাও আমরা চাই। সেক্ষেত্রে পুলিশকে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে যথার্থ, নিরপেক্ষ হতে হবে। অন্যথায় এক মৃত্যুর অপরাধের বিচার চাইতে গিয়ে শত মৃত্যুর ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

চিকিৎসাকালীন রোগীর মৃত্যুতে চিকিৎসকের দায়মুক্তি সংবিধিবদ্ধ । তবে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হল কিনা তদন্ত করে নিশ্চিত হওয়ার পূর্বে চিকিৎসককে অপরাধী মনে করা কেবল অনুচিত নয়, অন্যায়ও বটে। নির্ভুল চিকিৎসার পরেও রোগীর মৃত্যু হতে পারে ।

কোন মৃত রোগীর অভিভাবকের মামলার প্রেক্ষিতে আদালত তদন্ত কমিটি করে দিলে সেই তদন্তে ভুল চিকিৎসার অপরাধ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই দেশের প্রচলিত আইনে বিচার হলে কারো কোন আপত্তি থাকার কথা নয়। তদন্তকারী কমিটিতে ভুল চিকিৎসা নির্ণয় করতে পারে এরূপ জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তির অন্তর্ভুক্তি অবশ্যই প্রয়োজন।

‘ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে’ – পুলিশের এরূপ ধারণা করা বাংলাদেশ পেনাল কোডের কেবলমাত্র ৩০৪ ধারায়ই সম্ভব, আর কোন আইন নাই। পুলিশ সঠিক পথে চলবে – সকলে তাই চায়। যেহেতু সুনির্দিষ্টভাবে পেনাল কোডের ৮৮/৮৯ ধারায় চিকিৎসককে দায়মুক্তি দেওয়া আছে – সেহেতু সেই ধারাকে উপেক্ষা করে ৩০৪ ধারাকে আমলে নিয়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যাওয়ার কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।

পুলিশ প্রশাসনের ৮৮/৮৯ ও ৩০৪ ধারা অবশ্যই জানা । তারপরেও তদন্তে সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত হওয়ার পূর্বে চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করার বাহাদুরি দেখানোর প্রবণতা বন্ধ না হলে আরও অনেক রোগীর মৃত্যুর কারণ ঘটতে পারে।
পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে পুলিশ সামাজিক মাধ্যমে তাদের দেশের জনগণকে প্রতিনিয়ত উদ্বুদ্ধ করছে – তারা যেন চিকিৎসককে তার কর্মস্থলে কোন পরিস্থিতিতেই লাঞ্ছিত না করে , করলে ১০ বছরের কারাদণ্ড । সেখানে আমাদের পুলিশ চট্টগ্রামে শিশু মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যা করল তাতে চিকিৎসককে লাঞ্ছিত ও হাসপাতাল ভাংচুর করায় তারা উৎসাহ বোধ করবে (লিঙ্ক সংযোজিত)। চিকিৎসা দুর্ঘটনায় আমাদের চিকিৎসকদের অবস্থান কোথায় ?

জনগণ ও পুলিশকে বুঝতে বিশ্বাস করতে হবে-- অসুস্থ মানুষের জীবন রক্ষায় চিকিৎসকের বিকল্প নাই। তদন্তে প্রমাণিত না হওয়ার আগে চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করার অপচেষ্টা যেন পুলিশ না করে। এর ফলে হিতে বিপরীত হবে। চট্টগ্রাম বিএমএ–র সাধারণ সম্পাদক ডা ফয়সাল চৌধুরী–কে অভিবাদন। তার নেতৃত্বে অপরাধ প্রমাণ হওয়ার পূর্বে গ্রেপ্তারকৃত চিকিৎসককে থানা থেকে মুক্ত করে আনার জন্য।
পুলিশ প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে তারা যেন নিরপেক্ষ থাকে । মহল বিশেষের প্রভাবে প্রভাবিত না হয়।
___________________________

ডা. বাহারুল আলম। প্রখ্যাত পেশাজীবি নেতা। লোকসেবী চিকিৎসক। সুলেখক।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়