Ameen Qudir

Published:
2018-06-28 16:45:45 BdST

সপ্তাহের শীর্ষ প্রতিবেদনডাক্তাররা কেন অন্য ক্যাডারে চলে যাচ্ছেন? পোস্টমর্টেম করে দেখাচ্ছি


___________________________
ডা. আজাদ হাসান
___________________________

ডাক্তাররা কেন অন্য ক্যাডারে চলে যাচ্ছেন?
কারণঃ
সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়,
মাননীয় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা অধিক "দক্ষ" তাই তারা চাকুরী ক্ষেত্রে অধিক সুবিধা প্রাপ্য। পত্রিকার খবরে প্রকাশিত এ তথ্যটি বস্তুতঃ আমলা নির্ভর শাসন ব্যবস্থায় অন্যান্য পেশার প্রতি সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নীতি নির্ধারনী মহলের মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ বলে অনেকের ধারণা।

আমরা আগে জানতাম, যারা মেধাবী তারাই সাইন্স নিয়ে পড়ে এবং এরাই পরবর্তিতে ডাক্তার, ইঞ্জিনীয়ার, বৈমানিক এসব চ্যালেঞ্জিং পেশায় আসেন। কিন্তু "যাহারা সাইন্সে চান্স না পাইয়া বাংলা-ইংলিশ সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, ভূগোল কিংবা নৃতত্ত্ববিদ্যার মতো অপেক্ষাককৃত সহজ বিষয়ে অধ্যয়ন করিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হাসিয়া খেলিয়া চার বছরের অনার্স সাত বছরে সম্পন্ন করিয়া বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া, যাহারা তাহাদের জ্ঞানকে কেবল "ফাইল নোট" আর "অগ্রবর্তী করা হইল" বা "অনুমোদন দেয়া হইলো" কর্মকান্ডের মধ্য দিয়া এক একটি ফাইলের পেছনে কোনো নির্দিষ্ট সময় সীমার মধ্যে কার্য সম্পাদনের বাধ্য বাধকতা ছাড়া এসি রুমে বসিয়া মেধা জাহির করিয়া থাকেন, যাহারা অবস্থা ভেদে কখনো "Not approved " -কে আবার কখনো "Note approve" লিখিয়া তাহাদের অসীম বিদ্যা প্রকাশ করিয়া থাকেন", তাহাদের প্রশংসায় মাননীয় অর্থ মন্ত্রী কর্তৃক সাম্প্রতিক মন্তব্যে দেশের মানুষ যেমন অবাক হয়েছে তেমনি পেশাজীবিরাও হতাশ ও হতবাক হয়েছে। আর সরকারের এহেন মনোভাবের কারনে মূলতঃ ডাক্তার এবং ইঞ্জিনীয়ারিং এর মতো টেকনিক্যাল পেশার লোকেরাও আজ প্রশাসন তথা আমলা হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।

আর যে সব কারন এখানে অনু-ঘটক হিসেবে কাজ করছে তা হলোঃ

১)সামাজিক ভাবে মেধাবীদের মূল্যায়নের অনুপস্থিতি অর্থাৎ ডাক্তারদের যথাযথ সম্মান প্রদান না করা।
২) কর্মক্ষেত্রে নিদারুন নিরাপত্তার অভাব।
৩) সরকারী চাকুরীতে ক্যারিয়ার প্লানিং-এর অনুপস্থিতি।
৪) সরকারী চাকুরীতে অন্যান্য ক্যাডারের সাথে বেতন স্কেলের বৈষম্য।
৫) চাকুরীর ক্ষেত্রে প্রমোশনের সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অনুপস্থিতি এবং ক্ষেত্র বিশেষে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকার পরও দলীয় আনুগত্যের অগ্রাধিকার।
৬) কর্ম ক্ষেত্রে রোগীর তুলনায় ডাক্তার স্বল্পতা ফলে ডাক্তারদের উপর অতিরিক্ত কাজে চাপ ও অতিরিক্ত মানসিক চাপ।
৭) সম-পর্যায়ের অফিসার হয়েও সরকারী ভাবে অন্যান্য ক্যাডারের অফিসারদের তুলনায় বিভিন্ন সরকারী সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দৃশ্যমান বৈষম্য।
৮) পোস্ট গ্রাজুয়েশন ছাড়া প্রমোশনের সুযোগ না থাকা। অথচ ক্লিনিক্যাল সাবজেক্টস ছাড়া হেলথ এডমিনিস্ট্রেশন-এর ক্ষেত্রে পোস্ট গ্রাজুয়েশন ছাড়া কেবল প্রশাসনিক ট্রেনিং দিয়েও দক্ষ হেলথ এডমিনিস্ট্রেটর তৈরী এবং পদ পূরণ সম্ভব।
৯) অর্ডার অফ প্রিসিডেন্স-এ ডাক্তারদের সম্মানজনক অবস্থানের অনুপস্থিতি।
১০) আন্তরিকতার সাথে স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করলেও দিন শেষে সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়া।
১১) অচিকিৎসক ক্লিনিক মালিকের অধিক মুনাফা লোভী মনোবৃত্তির জন্য তাদের ব্যবসায়িক আচরনকে দায়ী না করে, ডাক্তারদেরকে ঢালাও ভাবে দোষারোপ করাও একটি অন্যতম কারন যা ডাক্তারদেরকে এই পেশার প্রতি আকর্ষণ হীন করে ফেলছে। প্রসংগত উল্লেখ্য, যখন কোনো চিকিৎসক চিকিৎসা পেশার বাহিরে যেয়ে ক্লিনিক ব্যবসা করেন তখন আর তিনি চিকিৎসক থাকেন না, তিনিও তখন ক্লিনিক ব্যবসায়ী। ক্লিনিক ব্যবসায়ী আর প্রাকটিসিং চিকিৎসক এই দু'য়ের মাঝে পার্থক্য আমাদেরকে বুঝতে হবে।
১২) আগে সামাজিক ক্ষেত্রে মানুষ মেধাকে মূল্যায়ন করতো, সম্মান করতো, আর আজকাল মানুষ মানুষকে মেধার মান দন্ডে নয় বরং পেশী শক্তি ও অর্থনৈতিক সামর্থ্যের মান দন্ডে মূল্যায়ন করে। এখন সেই অর্থ যে ভাবেই অর্জিত হোক না কেনো। যা আমাদের পচনশীল সমাজের একটি মরন ব্যাধি।

ডাক্তাররা স্বাস্থ্য ক্যাডার ছাড়া অন্য ক্যাডারে গেলে সমস্যা কোথায়?

ডাক্তাররা অন্য পেশায় যাওয়া মানে, আমার মতে "মেধার অপচয়"। যেটা দেশের জন্য অপরিমেয় ক্ষতি।
একজন ডাক্তার হিসেবে প্রেসক্রিপশন লেখার যোগ্যতা অর্জন করতে একজন স্টুডেন্টকে ১৭(+২ প্রিপ্রাইমারী) বছর পড়তে হয়। এখানে থিওরির সাথে হাতে-কলমে কাজ শিখতে হয়। এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে সেই শীতের সকালের আরামের ঘুম বিসর্জন দিয়ে লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমানোকে অবলীলাক্রমে ত্যাগ করতে হয়েছে, বৃষ্টির ভেতর কাক ভেজা হয়ে আইটেম দিতে ডিসেকশন হলে হাজির হতে হয়েছে, ইম্পর্ট্যান্ট লেকচার মিস্ হয়ে যাবে সেই ভয়ে কতদিন যে নাস্তা না করে লেকচার ক্লাসে ঢুকেছি। তারপরও ডেমনস্ট্রেশন ক্লাস, প্রাকটিক্যাল ক্লাসে নিয়মিত হাজিরা দেয়া থেকে শুরু করে, কত ক্লাস টেস্ট, আইটেম, কার্ড ফাইনাল, ওয়ার্ড ফাইনাল, তারপর রয়েছে প্রফেশনাল পরীক্ষা। আর এসব পূরন করতে যেয়ে জীবন থেকে অনেক সাধ আহলাদকে জলাঞ্জলি দিতে হয়েছে। যেদিন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হলাম তার পর থেকে খেলার মাঠের কথা ভুলে যেতে শুরু করলাম, টিভির অনুষ্ঠান দেখা কমিয়ে সাপ্তাহিক নাটক আর ঈদের আনন্দ মেলা কিংবা ইত্যাদির মতো অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ করলাম। ডাক্তার হওয়ার এই দীর্ঘ পথটা কখনো সহজ ছিলো না। আর এ সব কঠিন কঠোর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম মূলত একজন ছাত্রকে টেকনিক্যাল জ্ঞান তথা পেশাগত যোগ্যতা ও উৎকর্ষতা সাধনের নিমিত্তে আবর্তিত। আমরা যখন মেডিক্যাল স্টুডেন্ট সেটা ১৯৮৩-৮৪ সালের কথা তখন ব্রিটিশ মেডিক্যাল কাউন্সিল থেকে একটি টীম এসেছিলো আমাদের তৎকালীন "সিলেট মেডিক্যাল কলেজ" পরিদর্শনের জন্য, উদ্দেশ্য ব্রিটিশ মেডিক্যাল কাউন্সিল কর্তৃক আমাদের মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার মান আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন কিনা সেটা পর্যবেক্ষণ করার জন্য। কেন না ব্রিটিশ মেডিক্যাল কাউন্সিলের রিকগনিশন না থাকলে আমাদের মেডিক্যাল কলেজ হতে উত্তীর্ণ কেউ তা হলে ভবিষ্যৎ -এ এমআরসিপি কিংবা রয়েল কলেজের ফেলোশিপ পরীক্ষা দেয়ার প্রাক-যোগ্যতা হতে বঞ্চিত হবেন। এটা নিয়ে তখন ছাত্র ও সম্মানিত শিক্ষক মন্ডলির মাঝে সে কি উত্তেজনা, ক্যাম্পাসে সে কি সাজ সাজ ভাব। বস্তুতঃ মেডিক্যাল শিক্ষা একটি আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন ( ইন্টারনেশনাল স্ট্যান্ডার্ড) এবং বহু জাতিক স্বীকৃতি অর্জনকারী একটি সমন্বিত শিক্ষা ব্যবস্থা। এখন এই কঠিন-কঠোর নিয়মানুবর্তিতার মধ্যদিয়ে এমবিবিএস ডিগ্রী অর্জন করার পর যদি কেউ এই জ্ঞানকে পেশাগত কাজে না লাগিয়ে অন্য পেশায় যান (সেটা তিনি যেতা পারেন, সেটা উক্ত ব্যক্তির ব্যক্তি স্বাধীনতা।), সে ক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তির পেছনে সরকারের ইনভেষ্টমেন্ট পুরোপুরি লস্ বা ক্ষতি, উপরন্তু ওনার জায়গায় যদি অন্য আর একজন ছাত্র এই সুযোগটা পেতো, তা হলে জাতি তার কাছ থেকে কিছু হলেও সার্ভিস বা সেবা পেতো। বস্ততঃ প্রশাসনিক ক্যাডারে চাকুরী করার জন্য এত কঠিন কঠোর প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন এবং জীবন অনুসরনের প্রয়োজন পড়ে না। তাই টেকনিক্যাল ক্যাডারের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদেরকে তাদের স্পেশাল সার্ভেসের জন্য বিশেষ প্রণোদনা দিয়ে, যথাযথ সম্মান ও কর্ম ক্ষেত্রে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ার রাষ্ট্রের জন্য চরম দূূর্ভাগ্যের বিষয়। তাই যখন জাতি টেকনিক্যাল ক্যাডারের মেধাবীদের অবমূল্যায়ন করে বিশেষ ক্যাডারকে বিশেষ সুবিধা দেয়। তখন আমাদের দুঃখ পাওয়া ছাড়া, হতাশার হীম সাগরে আকন্ঠ নিমজ্জিত হওয়া ছাড়া, আর কি বা করার থাকে(?)

এবার কর্মক্ষেত্রে ডাক্তারদের আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমূহ আলোচনা করা যাকঃ

১) প্রথমে কর্মক্ষেত্রের কাজের পরিবেশ প্রসংগে আসা যাকঃ
ক) মেডিক্যাল অফিসারদের জন্য মান সম্পন্ন পর্যাপ্ত বসার জায়গাও নাই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মান সম্মত আসবাব-পত্রও নাই। তা ছাড়া আউট ডোরে রোগী দেখার সময় রোগীদের সিরিয়াল করার জন্য কিংবা রোগীদের ভাইটাল সাইন রেকর্ড করার জন্য কোনো স্টাফ নেই। কিছুদিন আগে ডাক্তাররা রোগীদের পর্যাপ্ত সময় দেন না প্রসংগে রিপোর্ট ছাপা হয়, কিন্তু কেনো ডাক্তাররা পর্যাপ্ত সময় দিতে পারে না কিংবা কিভাবে এই অবস্থার অবসান ঘটানো সম্ভব সে সম্পর্কে আমাদের চিন্তা করতে হবে।
খ) একজন অফিসার হিসেবে সবাই আশা করে যে তার কাজের পরিবেশটা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন এবং পরিপাটি হবে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় উপজেলা পর্যায়ে অন্যান্য অফিসের তুলনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে অত্যন্ত নোংরা। সুতরাং কাজের পরিবেশ ডাক্তারদেরকে আকর্ষণ করে না।
গ) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গড়ে উঠে ১৯৮৪-৮৬ সনের দিকে। তখনকার ৩১ শয্যার হাসপাতাল এখন ৫০ শয্যায় উন্নত করা হয়েছে। কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী দুইজন মেডিক্যাল অফিসারের পদ। তদুপরি জরুরী রোগীর চিকিৎসার জন্য "ইমার্জেন্সী মেডিক্যাল অফিসারে"র পদ আবশ্যক, কিন্তু এখনো ইএমও পদ তৈরী করে জনবল নিয়োগ দেয়া হয় নি। বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়োজিত মেডিক্যাল অফিসাররাই আউট ডোরে রোগী দেখার পর "রাউন্ড দ্যা ক্লক" বাই রোটেশন এক একজন ডাক্তার "এডিশনাল ডিউটি" হিসেবে "ইমার্জেন্সি ডিউটি"র জন্য "অন কল" থাকেন। কিন্তু এজন্য তাদেরকে কোনো রকম প্রণোদনা বা বাড়তি সুবিধা দেয়া হয় না।

২) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসন ব্যবস্থা নিজেই নানা কমপ্লেক্সে আক্রান্ত। যেমনঃ

ক) ডাক্তারদের জন্য পর্যাপ্ত আবাসিক (ভবনের) সুবন্দোবস্ত নেই।
খ) যাও বা আবাসিক কোয়ার্টার আছে তাও রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে জীর্ণ দশা।
গ) আবাসিক কোয়ার্টারের রক্ষনা বেক্ষনের দায়িত্বে আছে পিডাব্লিউডি, "স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়" মেরামত খাতে বরাদ্দকৃত টাকা "অর্থ মন্ত্রনালয়" হতে টাকা ছাড় করলে পি.ডাব্লিউ.ডি টেন্ডার কল করে কাজ করায়, এ ধরনের মাল্টি ডিপার্টমেন্টাল ইনভল্বমেন্টের কারনে দেখা যায় অর্থ ছাড় করিয়ে কাজ শুরু করতে করতে "অর্থ বছর" শেষ হয়ে যায়। এ ধরনের জটিলতার সমাধান হওয়া প্রয়োজন।
৩) উচ্চতর প্রশিক্ষণ এবং প্রমোশনঃ
প্রতিটি চাকুরীর একটি আকর্ষন হলো নিয়মিত প্রমোশন লাভ করা এবং ক্রমান্বয়ে উচ্চতর বেতন অর্জন করা এবং দায়িত্বশীল পদে অধিষ্ঠিত হওয়া। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতে পোস্ট গ্রাজুয়েশন ছাড়া প্রমোশন না হওয়ায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় ডাক্তাররা মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে জয়েন করেন এবং ২৫-৩০ বৎসর একই পদে চাকুরী করে পেনশনে যেতে হয়। এটাও ডাক্তারদের জন্য হতাশার বিষয়। ক্লিনিক্যাল সাবজেক্ট-এ প্রমোশনের জন্য পোস্ট গ্রাজুয়েশনের প্রয়োজন থাকলেও নন-ক্লিনিক্যাল বা হাসপাতাল এডমিনিস্ট্রেশন-এ পোস্ট-গ্রাজুয়েশনের বাধ্যবাধকতা শিথিল করা যেতে পারে বলে আমার ধারনা।
তা ছাড়া ডাক্তারদের জন্যও টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড এর প্রভিশন থাকা।
৪) তা ছাড়া এখন পোস্ট গ্রাজুয়েশন কোর্স এর জন্য ট্রেনিং একটি অত্যাবশ্যকীয় অংশ। এই ট্রেনিং নিয়ে ডাক্তাররা খুব স্নায়ুবিক চাপে থাকেন, তাই এ সমস্যা থেকে উত্তরণ আবশ্যক। নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরে যাতে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক প্রয়োজনীয় ট্রেনিং -এর সুযোগ পান সেজন্য সবার ডাটা এন্ট্রি এবং সম্ভাব্য সহজ পদ্ধতিতে ট্রেনিং -এর জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
৫) প্রশাসনিক ট্রেনিং এর জন্য ডাক্তারদেরকে মুষ্টিমেয় কয়েকটি ট্রেনিং সেন্টারের উপর নির্ভর করতে হয়। এখানেও নানা জটিলতা রয়েছে।
যেহেতু স্বাস্থ্য খাতে বিপুল সংখ্যক অফিসার এবং অন্যান্য স্টাফ। তাই সীমিত সংখ্যক প্রশিক্ষণ ইনিস্টিটিউট এর মাধ্যমে সবাইকে ট্রেইনড্ আপ করা সম্ভব নয়, তাই চাই আলাদা ট্রেনিং একাডেমী বা ইনিস্টিটিউট।


সমস্যার সমাধানে করণীয় কি?

কিন্তু এ অবস্থার অবসান হওয়া উচিত।
আমাদের কথাগুলো, আমাদের সমস্যা গুলো সমাধানের জন্য আমাদেরকেই উদ্যাোগী হতে হবে।
অতীতের ভুল গুলো থাকে শিক্ষা নিয়ে সমস্যার নিরসনে কর্ম প্রকল্প নির্ধারন করতে হবে।
যদিও অতীতের মতো বর্তমানেও অনেক ডাক্তার সংসদে সংসদ সদস্য হিসেবে আছেন কিন্তু ওনারাও আজ আআচরনগত দিক দিয়ে আর দশজন সংসদ সদস্যের মতোই। কাউকে আজ পর্যন্ত ডাক্তারদের স্বার্থে আদৌ কোনো কথা বলতে দেখিনি।

আমাদের দুর্ভাগ্যঃ

১) স্বাস্থ্য খাত একটি ব্যয় বহুল খাত। এই খাতের উন্নয়ন মানে খরচ বৃদ্ধি। তাই এই খাতের উন্নয়নে সবাই নিশ্চুপ।
২) এই খাতটি খুব স্পর্শ কাতর হওয়ায়, এটা নিয়ে পলিটিক্স করলে মানুষের সস্তা পপুলারিটি পাওয়া যায় কিন্তু সেটা করতে যেয়ে ডাক্তারদেরকে যে জনগনের কাছে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাড় করানো হচ্ছে, সেটা কেউ উপলব্ধি করে না।
৩) স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগের বেনিফিটটা সরাসরি পাওয়া যায় না, এটার সুফলটা পাওয়া সময় সাপেক্ষ। আমরা ভোটের মার্কেটে ইলেকশন ইঞ্জিনীয়ারিং-এ সরাসরি ভূমিকা রাখতে পারি না। যারা এ কাজে সিদ্ধহস্ত আজ সরকারের কাছে তাদের কদরই বেশী।

প্রত্যাশাঃ

আমরা অপেক্ষায় থাকবো সেই পর্যন্ত যতক্ষণ না ডাক্তারদের ভাগ্যাকাশে সেই সোনালী সূর্য দেখা দিবে।।
_________________________________

ডা. আজাদ হাসান।
২১ তম ব্যাচ,
সিওমেক।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়