Ameen Qudir

Published:
2018-06-25 17:55:15 BdST

চিকিৎসকদের গনশত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে




ডা. রেজাউল করীম, কলকাতা
___________________________

মেডিকেল কাউন্সিল নির্বাচন প্রসঙ্গঃ

সারা রাজ্য জুড়ে একের পর এক চিকিৎসক নিগ্রহ ও সরকারী কর্তাদের সুবর্ণ নীরবতা কোন আকস্মিক ব্যাপার নয়, বরং তা জনসাধারণের স্বাস্থ্য নিয়ে শাসকের মানসিকতার রূঢ় বহিঃপ্রকাশ। পৃথিবীর যেসব দেশগুলিতে স্বাস্থ্য জনগনের মৌলিক অধিকার নয়, সেখানেই এমন ঘটনা অবশ্যম্ভাবী। এদেশে শুধু চিকিৎসার খরচ মেটাতে গিয়ে প্রতি বছর শতকরা সাতভাগ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হচ্ছেন। মুমূর্ষু, সব-হারানো মানুষ স্বাস্থ্যকর্মীদেরই তাদের দুর্ভাগ্যের কারণ ভেবে তাদের উপর চড়াও হচ্ছে, অবাধে ভাঙচুর চলছে, কর্মীরা নিগৃহীত হচ্ছে।
এই যে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা হাসপাতালগুলিতে আছড়ে পড়ছে, তার কী কোন সমাধান আছে? সাধারণ মানুষকে চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীদের দিকে লেলিয়ে দিয়ে শাসক তার দায় মেটাচ্ছে। তাই সমস্যাটি নিছক আইন-শৃঙ্খলার নয়, বরং তা সামাজিক। আমরা অনেকবার বলার চেষ্টা করেছি যে, মানুষের ক্ষোভের ন্যায়সঙ্গত কারন আছে কারন চিকিৎসার খরচ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, মানুষকে শয্যা দেওয়া যাচ্ছে না, অপারেশন ও পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য অপেক্ষমান মানুষের দীর্ঘ তালিকা।
চিকিৎসকদের একদিকে যেমন গনশত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে তেমনি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গুলির অবনমন করা হচ্ছে ও তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে আপামর মানুষকে সন্দিহান করে তোলা হচ্ছে। এসবের যোগফল হল-দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে দুর্বল করে তোলা।মেডিকেল কাউন্সিলের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত তার বিশ্বাসযোগ্যতা কমিয়েছে, বিশেষতঃ একাধিক কমিটি বানিয়ে মনঃপূত রিপোর্ট বানানোর একটি উদ্যোগ যে এই অবনমনে ঘৃতাহুতি দিয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। মেডিকেল কাউন্সিলকে অকুতোভয় হতে হবে ও কোন চাপের কাছে মাথা নোয়ানো চলবে না। সাধারন বিচারপ্রার্থী মানুষ যেন মনে না করেন যে ন্যায়বিচার হল না,তা নিশ্চিত করা খুবই প্রয়োজন।
মেডিকেল কাউন্সিল সরকারী নিয়ন্ত্রণ মুক্ত নয়। নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করার কোন উদ্যোগ ও কখনো নেওয়া হয় নি। গত ৬২ বছর ধরে এই কাউন্সিল কোন না কোন দলের নিয়ন্ত্রণেই কাজ করেছে। সেখানে তাই দলের ভিত্তিতে নির্বাচন হয়, দলীয় প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। অনেকে ভোট দেন না, অনেকে ব্যালট পেপার অন্যের হাতে দিয়ে দেন। ভোট নিয়ে কারোর তেমন আগ্রহ নেই। অবশ্য কেউ ব্যক্তিগত ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তখন দৌড়ঝাঁপ করে সামাল দেবার চেষ্টা করেন, কিন্তু একটা শক্তিশালী মেডিকেল কাউন্সিল নিয়ে কারো কোন মাথাব্যথা নেই।
এই অবস্থায় আমরা যারা স্বাস্থ্য-বিতর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছি তারা চাই মেডিকেল কাউন্সিলে এমন লোকেরা নির্বাচিত হন যারা কোন দলের লেজুড় নন, সারাজীবন যারা চিকিৎসা বিদ্যা নিয়ে মাথা ঘামিয়েছেন, তার সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত থেকেছেন, দুর্নীতির সাথে আপস করেন নি। আমরা আরো চাই স্বাস্থ্যের অধিকার নিয়ে যারা কাজ করছেন তারা নির্বাচিত হন। এই হিসেবে আমরা যারা সাম্প্রতিক আন্দোলনে সামিল হয়েছি, তাদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাও উচিত না।
মেডিকেল কাউন্সিল নির্বাচনে তাই আমরা অরাজনৈতিক ও সত্যিকারের পেশাদারদের নির্বাচনের আবেদন জানাচ্ছি।

__________________________

ডা. রেজাউল করীম। কলকাতার প্রখ্যাত লোকসেবী চিকিৎসক। পেশাজীবি নেতা। কলামিস্ট।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়