Ameen Qudir

Published:
2016-12-08 15:10:24 BdST

বিএম এ নির্বাচন ভবনের বাইরে ভোট ও ম্যাজিস্ট্রেট: বিএমএর মর্যাদা ভূলুন্ঠিত



     
_____________________


বহিরাগত আধিপত্যের প্রভাব বলয়ে ক্রমেই চিকিৎসকরা মত ও পথ থেকে কক্ষচ্যুত হয়ে গোলক ধাঁধায় আবর্তিত হচ্ছে — বিএমএ নির্বাচন চট্টগ্রাম প্রসঙ্গে ডা. বাহারুল আলমের লেখা।
______________________________________

আমার বধুয়া আন বাড়ি যায়... আমারই আঙ্গিনা দিয়া ।
বিএমএ ভবনের বাইরে চট্টগ্রাম বিএমএ নির্বাচন ।

চট্টগ্রাম বিএমএ নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি যারা অনিবার্য করে তুলেছে তারা বিএমএ-র ঐতিহ্য ও মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। নির্বাচন কমিশন-এর এই সিদ্ধান্ত পরিহার করা প্রয়োজন। নইলে, এ কলঙ্কিত উদাহরণ বিএমএ তথা চিকিৎসক সমাজকে বয়ে বেড়াতে হবে বহুকাল ।

চিকিৎসকদের ম্যাজিস্ট্রেসি দাবী-কে পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করে রক্তাক্ত করার দায়ভার চট্টগ্রাম বিএমএ ও তার নির্বাচন কমিশনকে বহন করতে হবে।

পেশাগত উৎকর্ষতা, চিকিৎসকদের অধিকার, মর্যাদা ও রোগীদের জন্য আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার দাবীতে চট্টগ্রাম বিএমএ নির্বাচনে পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেল হলে, সেটা হত ঐতিহ্যমণ্ডিত। কেবল আধিপত্য বিস্তারের মানসে শক্তি প্রদর্শনের প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিএমএ বা চিকিৎসকদের কোন উৎকর্ষ সাধন হবে না।

ক্রমেই আমরা আমাদের মত ও পথ থেকে কক্ষচ্যুত হয়ে গোলক ধাঁধায় আবর্তিত হচ্ছি। আদর্শিক প্যানেলের চেয়ে বহিরাগত সমর্থিত শক্তির প্রকাশ চট্টগ্রাম বিএমএ -র মর্যাদা ও ঐতিহ্য ক্ষুণ্ণ করেছে বহুলাংশে।

সোনার ছেলেরা সব আজ ‘অশ্বমেধের বলি’। এ হুতাশনে আত্মাহুতি দেওয়া নিরর্থক ও লজ্জাকর। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অনুসৃতব্য কিছুই কি আমরা রেখে যেতে পারবো না ? এ পরাজয়ের গ্লানি বিএমএ আর কত কাল বইবে ? প্রজন্মের কাছে আমাদের ক্ষমা নেই।

______________________

 

লেখক ডা. বাহারুল আলম প্রখ্যাত পেশাজীবি নেতা। লোকসেবী চিকিৎসক। সুলেখক ও সুবক্তা।

 

দৈনিক আজাদীর যে খবরকে নিয়ে ডা. বাহারুল আলমের এই মন্তব্য প্রতিবেদন
________________ ৩৮ বছর পর ঘরের বাইরে বিএমএ নির্বাচন! ।। প্রথমবারের মতো ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ সিসি ক্যামেরা বসছে ভোট কেন্দ্রে
রতন বড়ুয়া ।।

৩৮ বছর পর প্রথমবারের মতো এবার ঘরের বাইরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিএমএ (বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন) চট্টগ্রাম শাখার নির্বাচন। নিজেদের ঘর হিসেবে পরিচিত বিএমএ ভবন বাদ দিয়ে নতুন ভেন্যুতেই এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবার। ২০১৬-২০১৭ সালের বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার নির্বাচন কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও নতুন ভেন্যু কোথায় হচ্ছে সেটি চূড়ান্ত হবে আজ সোমবার। প্রসঙ্গত, ১৯৭৮ সাল থেকে নগরীর জিইসি মোড়ের বর্তমান বিএমএ ভবনেই পেশাজীবী চিকিৎসকদের এ সংগঠনটির নিয়মিত নির্বাচন হয়ে আসছে। কিন্তু এবারই প্রথম ঘরের বাইরে নতুন কোন ভেন্যুতে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তবে শুধু ভেন্যুই নয়; বিএমএ’র নির্বাচনের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ ও সিসি ক্যামেরাও বসছে এবার ভোট কেন্দ্রে। গত শনিবার (৩ ডিসেম্বর) এসব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে বিএমএ নির্বাচন কমিটি।

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্যানেলের প্রস্তাবনা যাচাই করে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন নির্বাচন কমিটির (নির্বাচন কমিশন) আহবায়ক ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতরের পরিচালক ডা. আলাউদ্দিন মজুমদার। গতকাল আজাদীকে তিনি বলেন, এক পক্ষ চায়না নির্বাচন বিএমএ ভবনে হোক। তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভোট কেন্দ্র করার পক্ষে। কিন্তু অপর পক্ষ তাতে নারাজ। তারা কোন ভাবেই মেডিকেল কলেজকে কেন্দ্র হিসেবে মানবেনা। আমরাও চাইনা নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হোক। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে এবং নির্বাচন যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সেদিক বিবেচনায় নিয়েই এসব সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। আমরা দুটি কেন্দ্রই (বিএমএ ভবন এবং চমেক) বাদ দিয়ে তৃতীয় কোন ভেন্যুতে এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। আর ভোট কেন্দ্র হিসেবে দুই প্যানেলকেই তিনটি করে ভেন্যুর নাম (বিএমএ ভবন এবং চমেক ছাড়া) লিখিত আকারে আমাদের কাছে প্রস্তাব দিতে বলেছি। ৫ ডিসেম্বর (আজ) বেলা এগারটার মধ্যে লিখিত এ প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে। আর একই দিন (আজ) ১২টায় দুই প্যানেলের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ভেন্যুর নাম চূড়ান্ত করা হবে বলেও জানান ডা. আলাউদ্দিন মজুমদার। আর ভোট কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ ও সিসি ক্যামেরা স্থাপনের বিষয়ে নির্বাচন কমিটির এ আহবায়ক বলেন- ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ ও সিসি ক্যামেরা স্থাপনে এক পক্ষের দাবি ছিল। সেটি বিবেচনায় আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মোট কথা, আমরা চাইনা- পেশাজীবী চিকিৎসকদের এ নির্বাচন কোন ভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ হোক।

প্রসঙ্গত, ১৯৭৮ সাল থেকে বিএমএ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে চট্টগ্রামে। প্রথম দিকে টিন সেডের ঘরেই ছিল এর কার্যক্রম। তবে ১৯৯০/৯১ সালে নির্মিত হয় বিএমএ ভবন। এরপর থেকে এই ভবনটি-ই বিএমএ’র নির্বাচনী কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ দুই বছর নির্ধারিত থাকায় প্রতি দুই বছর অন্তর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু মাঝে কয়েকবার এর ব্যতিক্রম ঘটেছে। ফলে দুই বছরের স্থলে তিন বা চার বছর পরও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে করে ৩৮ বছরে

(১৯৭৮ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত) ১৯ বার নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও তা ১৫/১৬ বারের বেশি হয়নি। যদিও এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত কোন নির্বাচনেই ভোট কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ ও সিসি ক্যামেরা স্থাপনের প্রয়োজন পড়েনি। কোন প্রতিদ্বন্দ্বি প্যানেলও এর জন্য অতীতে দাবি জানায়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ম্যাজিস্ট্রেট ও সিসি ক্যামেরা স্থাপনের প্রস্তাব করা প্যানেলের সভাপতি প্রাথী ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ আজাদীকে বলেন- অতীতে হয়নি। কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতিতেই এবার এসবের (ম্যাজিস্ট্রেট ও সিসি ক্যামেরা) দাবি জানাতে হয়েছে আমাদের। এবারের নির্বাচনে যেভাবে নোংরামি হচ্ছে অতীতে কোন নির্বাচনেই তা হয়নি। হুমকি-ধমকিও দেয়া হচ্ছে। একজন চিকিৎসক হিসেবে এটি আমাদের জন্য লজ্জাকর। তাই ভোট কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেট ও সিসি ক্যামেরা স্থাপনের জন্য এবার আমরা প্রস্তাব করতে বাধ্য হয়েছি।

তবে অতীতে এতবার নির্বাচন হয়েছে কিন্তু এসবের প্রয়োজন হয়নি উল্লেখ করে অপর প্যানেলের সভাপতি প্রাথী ডা. মুজিবুল হক খান বলেন- এখন কেন প্রয়োজন হচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। এটা তো চিকিৎসক সমাজের নির্বাচন। তবে নির্বাচন যেভাবেই হোক, আমার বিশ্বাস- ডাক্তররা সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করবেন না। আর সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সব ধরণের সহায়তা করবেন বলেও মন্তব্য করেন ডা. মুজিবুল হক খান।

এদিকে, ভোট কেন্দ্র হিসেবে লিখিত আকারে তিনটি ভেন্যুর প্রস্তাব চেয়ে নির্বাচন কমিটির চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে দুটি প্যানেলই। সোমবার এ সংক্রান্ত লিখিত প্রস্তাব নির্বাচন কমিটি বরাবর জমা দিবেন বলেও জানিয়েছেন দুই প্যানেলের নেতারা। এ প্রসঙ্গে ডা. মুুজিব-ফয়সাল প্যানেল থেকে সভাপতি প্রার্থী ডা. মুজিবুল হক খান আজাদীকে বলেন- নির্বাচন নিয়ে বেশ কিছু প্রস্তাবনা আমরা শনিবার জমা দিয়েছি। তবে ভোট কেন্দ্র হিসেবে আমাদের কাছে তিনটি ভেন্যুর নাম লিখিত আকারে চাওয়া হয়েছে। আগামীকাল (আজ) আমরা আমাদের এ সংক্রান্ত প্রস্তাব জমা দিবো। একই কথা জানালেন ডা. নাসির-মিনহাজ পরিষদের সভাপতি প্রার্থী ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে- দুটি প্যানেল থেকে পাওয়া প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে নির্বাচনী কেন্দ্র হিসেবে ভেন্যু চূড়ান্ত করা হবে আজ। এ নিয়ে আজ দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতরের পরিচালকের কার্যালয়ে সভা আহবান করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সদস্য ছাড়াও দুটি প্যানেল থেকে সর্বোচ্চ চারজন করে প্রতিনিধি এই সভায় উপস্থিত থাকতে পারবেন। এই সভাতেই ভেন্যুর বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।

তবে প্রস্তাবনায় থাকা ভেন্যু চূড়ান্তের বিষয়ে দুটি প্যানেল একমত হতে না পারলে বা সর্ব সম্মত ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব না হলে সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনই তাদের ক্ষমতাবলে ভেন্যু নির্ধারণ করবে। আর এতে কোন পক্ষেরই কোন ধরণের আপত্তি মানবে না নির্বাচন কমিশন। ভেন্যুর প্রস্তাব চেয়ে দুই প্যানেলের নিকট পাঠানো চিঠিতে এ কথা উল্লেখ করেছে নির্বাচন কমিশন। এদিকে, নতুন ভেন্যু, ভোট কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেট, সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত করার পাশাপাশি এবার আরো বেশ কয়টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী- ভোট কেন্দ্রে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এবং প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়কারী ছাড়া অন্য কেউ উপস্থিত থাকতে পারবেনা। কোন প্রার্থী ভোট দেয়ার পর বুথের সামনে/নির্দিষ্ট বেষ্টনীর মধ্যে অযথা ঘোরাঘুরি কিংবা দাঁড়াতে পারবেন না।

উল্লেখ্য, আগামী ২২ ডিসেম্বর বিএমএ’র এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে চট্টগ্রামে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ হাজার ৪৯২ জন। বিএনপি-জামায়ত পন্থী সংগঠনের চিকিৎসকরা এ নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয়ায় মূলত এ নির্বাচনে এখন সরকার দলীয় চিকিৎসকরাই (স্বাচিপ) কেবল নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী।

কেন্দ্রীয় কমিটির ন্যায় চট্টগ্রামেও নির্বাচনী মাঠে নেমেছে স্বাচিপ’র (স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ) দুটি প্যানেল। এর ফলে এবার নির্বাচনী উত্তাপটাও তুলনামূলক একটু বেশি।
________________________

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়