Ameen Qudir
Published:2018-05-08 00:19:56 BdST
আশ্চর্য ! কেউ মরে গেলেই সবার অভিযোগ ডাক্তার মেরে ফেলেছে!
ডা. রেজাউল করীম
______________________________
সপ্তাহান্তে ৪টি ঘটনা। সরকারী, বেসরকারী কোন বাছ বিচার নেই। কেউ একজন মরে গেলেই সবার অভিযোগ ডাক্তার মেরে ফেলেছে। তারপর, ভাঙচুর ও প্রহারেন ধনঞ্জয়! ডাক্তার সবাইকে মেরে ফেলছে তাহলে রোগী মৃত্যুহার সারা দেশের মধ্যে পশ্চিমবাংলায় সবচেয়ে কম কেন?
তাহলে কি রোগীর পরিজনের ক্ষোভের কোন নায্য কারন নেই? একজন দরিদ্র বা নিম্নবিত্ত মানুষ বাড়ী থেকে যাত্রা করে হাসপাতালে চিকিৎসা পাওয়া অব্দি যে সময় ব্যয় করেন তার প্রায় কোন পর্যায়েই তিনি তাঁর প্রাপ্য সম্মান পাননা। অন্তহীন লাইনে দাঁড়িয়ে প্রতীক্ষার শেষে ডাক্তারের কাছে তিনি যখন পৌঁছালেন তখন ৭০০ রোগী বেষ্টিত ঘর্মাক্ত মানুষটির নাভিশ্বাস, দিশেহারা। তারপর মিনিট খানিকের মধ্যে গুটিকয়েক বড়ি নিয়ে বাড়ি ফেরা। ওষুধে রোগ সারলেও সারতে পারে কিন্তু যে ক্ষোভের তুষের আগুন নিয়ে ফেরা তা থেকে মুক্তি কিসে?
কিন্তু, এর জন্য চিকিৎসকের দায় কোথায়? স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অভাবের জন্য কে দায়ী? একজন চিকিৎসককে যে কয়েক ঘন্টায় কয়েকশ রোগী দেখতে হয় তার দায় কার? কেন মরনাপন্ন রোগীকে একটা শয্যা দেওয়া যায় না? সরকারী আমলারা কাগজ পেন্সিল নিয়ে বসেন হিসেব করতে। যিনি বেশি "পরিষেবা" দিয়েছেন তিনি সিকান্দার! গুনগত মান যাচাই হয় না, যারা যাচাই করবেন তাদের কোন দায়বদ্ধতাও নেই।
তাহলে চিকিৎসকরা কি সব ধোয়া তুলসিপাতা, অপাপবিদ্ধ গাব্রিয়েল! তা নয়। আর পাঁচটা পেশার মত এই পেশায় ও খারাপ লোক আছে-অনেকে বেআইনী নানা কাজে জড়িয়ে আছেন, কর্তব্যে অবহেলা করেন, কর্মস্থল থেকে ছুটি নিয়ে পালিয়ে আসেন। কিন্তু, তা সত্বেও বেশিরভাগই ভালো। তাই কোটি খানেক মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসেন। মৃত্যুহার ও বেশ কম। তারপর ও অনেকে মারা যান কিন্তু মনে রাখতে হবে সব মৃত্যু ঠেকানো যায় না।
চিকিৎসক মার খেলেই সবাই রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে চান, অনেকে কাজ বন্ধ করে দিতে চান, অনেকে বিকল্প পেশার কথা ভাবেন। কিন্তু এই ব্যবস্থা না পাল্টাতে পারলে কোন মুক্তি নেই। এ দেশের রাজনীতি এমন যে ক্ষমতার চূড়ায় বসেও নিজেদের সব ব্যর্থতার জন্য কোন না কোন অজুহাত খাড়া করেন, একটি বলির পাঁঠা ও জোগাড় হয়ে যায় । চিকিৎসা ব্যবস্থাকে বামন করে রেখে তাই তাদের সব ব্যর্থতার কলুষ ডাক্তারের মুখে মাখাতে কসুর করেন না। কেউ তাদের জিজ্ঞাসা করতে পারেন সরকারী কমিটির সুপারিশ মেনে স্বাস্থ্য বাজেট কেন বাড়ে না? "ভাত দেবার মুরোদ নেই, কিল মারবার গোঁসাই"।
মার খাওয়ার পেছনের রাজনীতি না বুঝলে বিপদ আরো বাড়বে। স্বাস্থ্য রাজনীতিকে মোকাবিলা করতে হবে অসীম ধৈর্যের সাথে, চিকিৎসকের দায় শুধু রোগীর চিকিৎসা নয়, সমাজের শিক্ষকের দায়িত্ব ও তাকে নিতে হবে।
মতামত ব্যক্তিগত, সংগঠনের মত নয়।
___________________________

আপনার মতামত দিন: