Ameen Qudir
Published:2018-05-04 01:12:53 BdST
পরীক্ষা আর প্রেমে পরার মিল হলো,দুটোতেই মানুষ হুঁশ ও আক্কেল হারিয়ে ফেলে
ডা. মিথিলা ফেরদৌস
_____________________________
পরীক্ষা আর প্রেমে পরার মধ্যে একটা মিল হলো,দুইটাতেই মানুষ হুশ আক্কেল হারিয়ে ফেলে।যাইহোক প্রেমের ব্যাপার বাদ,পরীক্ষা নিয়াই চারখান কথা বলবার চাই।
পেইনফুল এই পরীক্ষা,যে কারো জীবন দুর্বিষহ করার জন্যে যথেষ্ট। সামাজিকভাবে পরীক্ষা একটা বিভীষিকার নাম।পরীক্ষার আগের সময়গুলা একমাত্র পরীক্ষার্থী ছাড়া কেউ বর্ণনা করতে পারবেনা কি কঠিন সময় পাড় করতে হয়।
এই সময়টা এমন একটা মুডে মানুষ থাকে,যখন পড়াশুনা বাদে সবকিছুই ভাল লাগে,যেমন টিভিতে বাংলা সিনেমায়,জসিম আর অঞ্জুঘোষকে দেখলেও মনে হয়,সিনেমাটা না শেষ করে উঠাটা অন্যায় হয়ে যাবে,উচ্চাঙ্গ সংগীত দেখলে মনে হয়,এইসব বোঝাটা খুব জরুরী,এমন কি আলোচনা অনুষ্ঠান মানে বিরক্তিকর টক শো গুলাকে চরম শিক্ষনীয় অনুষ্ঠান মনে হয়।
পেপার পত্রিকায় সাধারণত আন্তর্জাতিক বিষয়,কলাম আর খেলাধুলা পড়তাম,কিন্তু পরিক্ষার সময় কোথায় কোন খুনখারাবি হইলো,কে কার বউ কে নিয়ে পালাইলো,আজেবাজে খবর তাছাড়া বিজ্ঞাপন গুলাও পড়া খুব দরকার হয়ে পরে।
পরীক্ষার উপর আবহাওয়ার প্রভাব অপরিসীম, যেমন খুব গরমের মধ্যে পরীক্ষা হলে মনে হয়,এই গরমে কি পড়াশুনা সম্ভব?খুব শীতে লেপের নীচ থেকে হাত বাড়ায় বই ই তো ধরতে ইচ্ছা করেনা,পড়বো আর কি?বৃষ্টিতে ঠান্ডায় ঘুমায় থাকতে মন চায়,ঝড় আমার ভীষণ পছন্দ,ঝড়ের আকাশের রঙের পরিবর্তন দেখতে দেখতে মনে হয়,কি হবে পড়াশুনা করে,একটা জীবন যদি ঝড় দেখেই কাটানো যেতো,কম্ফোর্টেবল আবহাওয়ায় মনে হয়,বছরের কয়দিন এমন থাকে,এই সময়টুকুই উপভোগ করা উচিৎ।
এমন আরও ম্যালা ম্যালা প্রভাবের জন্যে পরিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত।এখানে তাদের কোন দোষ দেয়া উচিৎ না।
তবে পরীক্ষার আগের সময়টা যতটা পেইনফুল,পরীক্ষার শেষটা ততটাই আনন্দের।রেজাল্টের আগে আবার আরেক যন্ত্রনা।যাইহোক একটা সময় ছিলো পরীক্ষার শেষ ছিলো,কিন্তু ইন্টারের পর থেকে পরীক্ষার আর শেষ নাই।মেডিকেলে,আইটেম, কার্ড ফাইনাল ইয়ার ফাইনাল এমনকি এম বি বি এস শেষে যখন জিব্বা বাইর কইরা হাপাইতে হাপাইতে ভাবছিলাম,আর জীবনে দেয়ালের সাইনবোর্ডএর লেখাও পড়ুম না।তখন শুরু হইলো জীবনের আসল পরীক্ষা।কোয়াকের দাম আছে কিন্তু এম বি বি এসদের নাকি দাম নাই।বি সি এস হইতে হইবে ডিগ্রি হইতে হইবে।
বিসিএস হইলেও তার আরেক হ্যাপা,চাকরী স্থায়ী হইতে হইবো,সিনিয়র হইতে হইবো।
আর ডিগ্রি কম্পলিটের ধাপের শেষ নাই।শেষধাপে গিয়ে ফসকাইলেই ধপাস একেবারেই নীচে পইরা হা কইরা চায়া থাকা ছাড়া উপায় নাই।ডিগ্রি কম্পলিট হইলেও প্রতিনিয়ত রুগীর কাছে পরীক্ষা।পরীক্ষার আর শেষ হবেনা।ডাক্তারদের আবার খায়েশ বেশি এক ডিগ্রী শেষ হইলে মনে হয়, আরও একটা না নিলে কেমন দেখায়?
পরীক্ষার কিছু ভাল দিক আছে,এইসময় আপনার মুড এমন এক জায়গায় স্ট্যাটিক থাকে,কোন দুখ,কষ্ট আপনাকে স্পর্শ করতে পারেনা।আপনার পোলাপান পড়াশুনায় গোল্লায় যাইতেছে,আপনার জামাই যদি অন্য কারো হাত ধইরা ঘুইরাও বেড়ায় মনে হবে থাক বেড়াক না কেন,বিয়ে তো করতেছেনা(কেউ আবার আমাকে নিয়া পইরেন না),বাসার বুয়া চোক্ষুর সামনে চুরি করে গেলেও মনে হয় থাক নিয়ে যাক সংসার তো নিয়া যাইতেছেনা?ড্রাইভার প্রতিদিন গ্যাস ভরার নামে ৫০০ টাকা নিলেও আপনি ভুলে যাবেন কবে টাকা দিছেন,ড্রাইভার বলবে তিনদিন হইছে,সেইটাই ঠিক মনে হবে,ঘরদোর ময়লা হয়ে যাচ্ছে,মনে হবে থাক,পরীক্ষার সময় এত পরিচ্ছন্নতার দরকার কি?বাবা মা কোন সমস্যার কথা কইলেই খেঁকিয়ে উঠি(আমার এমন হয়),কেউ কোন দাওয়াত দিলে পরীক্ষার দোহাই দিয়ে এভোয়েড করা যায়।চেহারা কবে শেষ আয়নায় দেখেছেন মনেই করতে পারবেন না।মোটকথা কোন কিছুতেই কিছু যায় আসেনা।
খারাপ দিক হলো,এ এমন এক ডিপ্রেশন থাকে যেখান থেকে কোন আনন্দের অনুভূতি কোনওভাবেই স্পর্শ করতে পারেনা।মুড কখনওই এলিভেট করেনা,মানসিক ট্রমা হয়,অনুভূতি গুলো ভোতা হয়ে যায়।দিনের পর দিন পরীক্ষার কারণে মানবীয় গুণাবলী গুলো অনেকটা লোপ পায়।ডাক্তারদের মধ্যে একটা জিনিস লক্ষ্য করবেন,এরা নিজের আর নিজের পরিবারের ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। রিপিটেড পরীক্ষার ফল।
এত এত গবেষনা এত কিছু,পরীক্ষার বিকল্প কি কখনই কিছু আবিষ্কার হবেনা?
_______________________________

আপনার মতামত দিন: