Ameen Qudir

Published:
2016-12-06 15:58:51 BdST

ডাক্তারী না, দাসত্ব :বছরের সাড়ে দশ মাস স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বন্দি


 

 

ডা. আবু হেনা , সৌদী আরব থেকে ____________________

 

ডাক্তারী ,জী না । এটা কোনো পেশা নয় । এটা সম্পূর্ন নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো একটা দাসত্ব বৃত্তি । এসএসসি পাশ করি আজ থেকে ৩৮ বছর আগে ঢাকা শহরের নামকরা স্কুল থেকেই এবং খুব ভাল রেজাল্ট নিয়েই । তারপর ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি । রেজাল্ট ছিলো সেই ১৯৮০ সনে ব্রিলিয়ান্ট ।

 

 

ইচ্ছা ছিল পাইলট হবো । কিন্তু সেই আমলে পাইলট স্কুলে ট্রেনিং নেবার সামান্য খরচও আমার বাবা দেয় নি । কারন উনি ছেলেকে ডাক্তার বানাবেন । ( না , জনসেবা নয় , এমবিবিএস পাশ করানোর পর বিয়ের বাজারে ছেলেকে চড়া দামে বিক্রি করার প্ল্যান ) ।

 

আমরা ভর্তি হলাম মেডিকেল কলেজে । আমার নাম এলো ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে । ঢাকা থেকে ষাট মাইল দূরে । ১৯৮১ সালে ট্রেনে যেতে তিন ঘন্টা আর টাংগাইল হয়ে বাসে করে যেতে লাগতো ৭ থেকে ৮ ঘন্টা । হোষ্টেল বলতে নতুন ভর্তি হওয়া ছেলেমেয়েদের স্থান হলো কমনরুম ।খাবারের কথা বাদই দিলাম । কিন্তু প্রথম দিন থেকেই আইটেম , কার্ড ফাইনাল ইত্যাদি শুরু হয়ে গেলো । ফাঁকি দেবার কোনো উপায় নাই । মেডিকেল কলেজের সব চাইতে ফাঁকিবাজ ছেলে বা মেয়েকেও সারাদিনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৮ ঘন্টাই পড়া/ ওয়ার্ড ইত্যাদি নিয়ে ব্যাস্ত থাকতে হবেই ।

 

 

আর আমার সাথে যারা স্কুল/ কলেজ লাইফে এভারেজ রেজাল্ট করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সাবজেক্টে ভর্তি হলো , ঢাকায় গেলে দেখতাম দিনে দুঘন্টাও বইপত্র নিয়ে পড়তে বসে না । বান্ধবীদের নিয়ে আড্ডা / নাটক/ মুভি , লাইফটাকে তারা তখন থেকেই এনজয় করতো ।

 

মডেল ছবি।

 

 

পাঁচ বছর গাধার খাটুনী আর এক বছর ইন্টার্নী শেষ করে ডাক্তার হয়ে ১৯৮৮ সালে ২৫০০ টাকায় প্রাইভেট ক্লিনিকে জবে ঢুকলাম । আর সেই সংগে বিসিএস পরীক্ষা দেওয়া শুরু করলাম । ডিসেম্বর ১৯৮৯ এ ১৮৫০ টাকা বেতনে সরকারী চাকুরীতে যোগদান । সেটাও পার্বত্য অঞ্চলের এক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে । তারপর সমতল ভূমির আরেক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ।

 

১৮৫০ টাকা স্যালারীতে কি সংসার চলে ? ২৪ ঘন্টাই অন কলে থাকতে হয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় । আট বছর চাকুরীর পর সৌভাগ্য হলো বিদেশে চাকুরীতে যোগদানের । এখানে আর্থিক সুবিধা বাড়লেও কাজের পরিবেশ তথাস্তু ।

মডেল ছবি।

 

 

প্রথম চার বছর মরুভূমিতে , যেখানে বালির উপর দিয়ে ২০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে যেতে হতো শহর থেকে । বছরের সাড়ে দশ মাস ওখানেই বন্দী । বাচ্চাদের কোনো স্কুলও নাই । তারপর শহরে এলাম । এখানেও আরবী ভাষার স্কুল । তাই পরিবারকে ঢাকায় স্থানান্তর করে নিজে একাকী প্রবাস জীবন । বছরে সাড়ে দশ মাস একাকী কাটানো । তাই বলে দেশে অবস্থানরত পরিবারের কোনো অসুবিধা নেই । তাদের নিজের চেনা সমাজ /আবহাওয়া/ আত্মীয় স্বজন / উৎসব / পালা পর্বন / বেড়ানো সবই আছে । ঈদের দিনেও প্রবাসীর কথা মনে থাকে না । সে হলো এটিএম মেশিন । মাসের এক তারিখে কড়কড়ে পেট্রো ডলার বেরিয়ে আসে । যা দিয়ে পরিবার আর দেশের অর্থনীতি স্ফীত হয় । “ এই দূর পরবাসে তারা গুনি আকাশে ”

 

 

 

________________________________

 

ডা. আবু হেনা স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় , সৌদি আরবিয়া

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়