Ameen Qudir

Published:
2018-02-10 14:42:39 BdST

বাংলাদেশে ডাক্তার হওয়া এবং ডাক্তারি করাই ডাক্তারদের আজন্ম পাপ


এ ছবি নির্যাতনের হুমকির শিকার চিকিৎসকদের অসহায় অবস্থার প্রতীক। তারা বাধ্য হয়ে হেলমেট পরে চিকিৎসা দিচ্ছেন উপমহাদেশের এক হাসপাতালে।

 

ডা. কামরুল হাসান সোহেল

___________________________________


যারা ডাক্তার তাদের অধিকাংশই তাদের স্কুল, কলেজ লাইফে ছিল তার স্কুল, কলেজের সবচেয়ে ভাল ছাত্র-ছাত্রী। মেডিক্যালে ও ছিল তাদের এই ধারাবাহিকতা। যেখানে ৩৩ পেলেই পাস, সেইখানে মেডিক্যালে পাস নম্বর ৬০। প্রতিটি সাবজেক্টের প্রতিটি পার্টে আলাদা আলাদাভাবে ৬০ নম্বর পেয়েই পাস করতে হয়। অন্য সাবজেক্টে অনার্স শেষ হয়ে যায় ৪ বছর পড়াশুনা করলেই, সেইখানে এমবিবিএস পড়তে হয় ৫ বছর তারপর ইন্টার্ন করতে হয় আরো ১ বছর, সব মিলিয়ে ৬ বছর। ইন্টার্ন ডাক্তারদের তো আপনাদের ডাক্তার মনে হয় না তাই না?


আপনাদের ফ্যামিলিতে যদি একজন ডাক্তার ও থাকত তাহলে আপনারা হয়তো সম্মান দিতে জানতেন একজন ইন্টার্ন ডাক্তারকে। কতটা মেধা, শ্রম আর ত্যাগের পরে ৫ বছরের এমবিবিএস কমপ্লিট করে তারা ইন্টার্ন ডাক্তার হয় তা জানতে পারতেন, তারাই হল সরকারী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোর প্রাণ। দিন রাত প্রাণান্তকর পরিশ্রম করে তারা শুধুমাত্র আপনাদের সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য। রোগীর প্রয়োজনে নিজেই রক্ত দেয় রোগীর জীবন বাঁচাতে, দরিদ্র রোগীর জন্য নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে ঔষধ কিনে দেয় যদি তা সাপ্লাই না থাকে। রাতের পর রাত জেগে থাকে আপনাদের সুস্থ রাখতে, নিজের আরাম-আয়েস, সুখ বিসর্জন দেয় আপনাদের সুস্থ করে তোলে আপনাদের হাসি মাখা মুখ দেখতেই। আপনারা সেই ডাক্তারকে মারার জন্য কাচের টুকরো দিয়ে স্ট্যাব করলেন? তাকে রক্তাক্ত করলেন?

 

আপনারা ডাক্তারদের মানুষ মনে করেন না, মনে করেন তারা হল রোবট। তাদের কোন অসুখ হতে পারবেনা, তাদের সংসার থাকতে পারবেনা,তাদের আরাম-আয়েসের প্রয়োজন নেই। আপনারা তাদের শুধু টাকা রোজগারের একটি মেশিন ভাবেন।তাদের আলিশান বাড়ী-গাড়ী দেখেন।তার জন্য তাদের কত পরিশ্রম করতে হয়েছে, কত রাত না ঘুমিয়ে কাটাতে হয়েছে, কত কিছু ত্যাগ করতে হয়েছে তা কি জানেন? আপনারা ডাক্তারদের কসাই বলেন, লোভী বলেন। একজন ডাক্তার প্রতিদিন যতজন রোগীকে ফ্রি সেবা দেন আপনাদের অনেকেই হয়তো তার পুরো জীবনেও এতগুলো মানুষকে ফ্রি কোন সেবা দেন না। ডাক্তারদের কাছে আপনাদের চাওয়ার কোন শেষ নাই। আপনার সাথে ভালভাবে কথা বলতে হবে, হেসে কথা বলতে হবে, সময় নিয়ে রোগী দেখতে হবে, কোন টেস্ট দেয়া যাবেনা, ফ্রি চিকিৎসা দিতে হবে, রোগীকে সুস্থ করে তুলতে হবে, রোগী ভাল হলে আল্লাহ ভাল করেছে। মরণাপন্ন রোগী যদি মারা যায় তাহলে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় মারা গেছে বলেন আর এলাকার সব গুন্ডা-মাস্তান নিয়ে এসে ডাক্তারকে মেরে রক্তাক্ত করেন।


আমরা আপনাদের সেবা দেই, আপনারা আমাদের পিটান। আমরা আপনাদের সেবার বিনিময়ে ভিজিট চাইলে বলেন কসাই ডাক্তার, লোভী ডাক্তার। আপনাদের রোগ নির্ণয়ের জন্য টেস্ট দিলে বলেন কমিশন খাওয়ার জন্য টেস্ট দিচ্ছি। রোগী ভাল হলে বলেন আল্লাহ ভাল করেছেন। খারাপ রোগী মারা গেলেন ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা গেছে।

আপনারা এতটাই অকৃতজ্ঞ , যখন অসুস্থ থাকেন তখন ডাক্তারকে অনেক অনুনয় করেন ভাল চিকিৎসা দেয়ার জন্য। কিন্তু সুস্থ হওয়ার পর একটা ধন্যবাদ দেয়া তো দূরের কথা ডাক্তার তার প্রাপ্য ভিজিট চাইলে তাকে কসাই বলেন!

আমাদের দুর্ভাগ্য আমাদের অভিভাবক আমাদের বিপদে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান না কখনো। উনি আমাদের সুখ-দু:খের কথা শুনেন না। উনি শুনেন সাংবাদিকদের কথা, নার্সদের কথা, স্যাকমোদের কথা, কোয়াকদের কথা, ফার্মেসীওয়ালাদের কথা। সবার দু:খে উনি তাদের পাশে দাঁড়ান, শুধু ডাক্তাররা বারবার মার খেলেও উনি তাদের পাশে এসে দাঁড়ান না। উনি ডাক্তারদের পক্ষে কথা বলেন না তবে বিপক্ষে অনেক কথা বলেন।

বাংলাদেশে ডাক্তার হওয়া এবং ডাক্তারি করাই ডাক্তারদের আজন্ম পাপ।
____________________________

 


ডা. কামরুল হাসান সোহেল

 

আজীবন সদস্য, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ , কুমিল্লা জেলা।
কার্যকরী সদস্য স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ
আজীবন সদস্য,বিএমএ কুমিল্লা।
সেন্ট্রাল কাউন্সিলর, বিএমএ কুমিল্লা

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়