Ameen Qudir
Published:2017-07-30 01:45:23 BdST
বিষ খেয়েছিলাম:বেশ হাসিখুশি ভাবেই উত্তর দিলো
ডা. মিথিলা ফেরদৌস
_________________________________________
প্রথম কেস:
মেয়েটা কম বয়সি,বেশ সাজুগুজু করেই আসছে।সঙ্গে কেউ ছিল না।টিকিট হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
---সমস্যা কি?
----বিষ খেয়েছিলাম।(বেশ হাসিখুশি ভাবেই উত্তর দিলো)
না চাইলেও চমকে তাকাতেই হলো,বিষপানে যে এত আনন্দ আমার জানা ছিলোনা।বললাম,
---এখন সমস্যা কি?
মাথা নিচু করে আছে মেয়েটা।
মানব মনের স্বাভাবিক কৌতহল বললাম,
----বিবাহিত
-----হু
----জামাইয়ের সাথে ঝামেলা?
----হু
---তারে বিষ খাওয়ানোর কোন ব্যাবস্থা ছিলোনা?
মেয়ে হেসে ফেলছে।বুঝলাম কোন সমস্যা নাই।হয় দুখের কাহিনী বলতে আসছে আর না হয় সার্টিফিকেট নিতে আসছে।কোন কিছু শোনার মত উপায় ছিলো না।কয়দিন বৃষ্টি তে রুগীরা আসতে পারে নাই।আজ উপচে পরা ভীড়।টিকেট কাউন্টারে কেনো যে ব্যাপার গুলা বুঝতে চায় না?একটা সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের জন্যে সত্যিকারের অসুস্থ মানুষ গুলোর চিকৎসা কতটা ব্যাঘাত ঘটে।
টিকেট ফেরত দিয়ে বললাম।
----বিষ খেয়ে কষ্ট টা নিজেই পাইছেন কারো কিন্তু কোন ক্ষতি হয় নি।যান আর এমন বোকামো করবেন না।
দ্বিতীয় কেস:
মেয়ের বয়স ২৮--২৯।গড়ন মাঝারি। স্বাভাবিক ওয়েট।
জিজ্ঞেস করলাম
--- সমস্যা কি?
---ওজন কমাতে চাই।
আমি রীতিমতো অবাক।কি বলবো বুঝতেছিনা।বললাম,
----আমাকে দেখে কি মনে হচ্ছে পাতলা?আমার ওয়েট তো আপনার দ্বিগুন হবার কথা।আমার যদি এই চিকিৎসা জানা থাকতো তাহলে তো নিজের চিকিৎসা আগে করতাম তাইনা?
টিকেট ফেরত দিয়ে বললাম,
--আপনার ওজন ঠিক আছে ভাই,এটা নিয়ে টেন্সান করা ভাল,তাতে কিছু ওয়েট কমতে পারে।টেন্সান ছাড়া আর কিছু করার নাই।
তৃতীয় কেস:
মধ্য বয়সি আহ্লাদী টাইপ মহিলা।জিজ্ঞেস করলাম
---সমস্যা কি?
---বিছা কামড়াইছে।(এটাও আমার কেস না)
----কবে?
-----কাল রাইতে।
-----এখন সমস্যা কি?
-----কুনু সমস্যা নাই।
----তাহলে হাসপাতালে কেন আসছেন?
-----বিছাতে নাকি বিষ থাকে,তাতে পরে সমস্যা হয়।
----সমস্যা হলে কাল রাত থেকে আজ পর্যন্ত এত সুস্থ থাকতে পারতেন?
জীবনে কত বিছা মিছা কামড়াইছে তার হিসাব নাই।তা নিয়ে জীবনে হাসপাতাল যাবো ভাবিনি কখনও।
এমন উদাহরণ বলে শেষ করা যাবেনা।টিকেট ১০টাকা।১০টাকা মানুষের কাছে এখন কোন টাকাই না।হাসপাতালে সামান্য ব্যাপার নিয়ে আসা একটা স্বাভাবিক ঘটনা।সচেতন হওয়া ভাল কিন্তু অতি সচেতনতা কিন্তু একটা মানসিক সমস্যা।
এতে সত্যিকারের রুগীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।ঘন্টার পর ঘন্টা অতি কষ্ট নিয়ে লাইনে দাঁড়ায় থাকতে হয়।অনেক সময় এত রুগীর ভীড়ে সত্যিকারের রুগীরা ঠিকমতো এটেন্সান পায় না।
দেশে বর্তমান জনসংখ্যা যদি ১৬ কোটি হয়।ডাক্তার আছে ৭৫ হাজার।তাহলে চিন্তা করে দেখেন ডাক্তারদের উপর কেমন লোড যেতে পারে?সেটা সরকারী হাসপাতালেই হোক আর বেসরকারি হাসপাতাল বা প্রাইভেট প্রাকটিসেই হোক।
সরকারী হাসপাতালের টিকেট কাউন্টার গুলোকে গড়পত্তায় সবাইকে টিকেট না দিয়ে প্রায়োরিটি বেসিসে টিকেট দিলে সত্যিকারের রুগিরা যত্নসহকারে চিকিৎসা পেতো।
আমরা শুধু ডাক্তাদের দোষগুলো হাইলাইট করি,একবারো ভেবে দেখিনা কেন এমন হচ্ছে?কোথায় সমস্যা?আসুন একবার ডাক্তাদের জায়গায় থেকে তাদের কষ্টগুলোকে অনুভব করার চেষ্টা করি।
আপনার মতামত দিন: