Ameen Qudir

Published:
2017-06-17 22:52:37 BdST

দু’মন্ত্রীর কেউই লাঞ্ছিত, আহত চিকিৎসকের পাশে দাঁড়ান নি



ডা. বাহারুল আলম
___________________________________

 

কেবল বিএমএ-র ইফতার অনুষ্ঠানে নয়, সকল অনুষ্ঠানে ‘আসনে বসে ভাষণ শুনতে আমরা বড়ই ভালবাসি’-প্রতিমন্ত্রী সেই সুযোগটা কাজে লাগালেন
............................................................
স্বাস্থ্য বিষয়ক বড়মন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রতিমন্ত্রীর চিকিৎসকদের আন্দোলনে ‘বক্তব্য নির্ভর’ সমর্থন দেওয়ার জন্য শুভেচ্ছা।

চিকিৎসকদের দাবী আদায় ও তা বাস্তবায়নে রাষ্ট্রে অবস্থানগত সীমাবদ্ধতার কারণে প্রতিমন্ত্রীর সমর্থন কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখবে-সে সন্দেহ থেকে যায়।

কেবল ইফতার পার্টি নয়, নিকট অতীতে আন্দোলনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময় ছিল প্রতিমন্ত্রীর একাত্ম হওয়ার, মুখ খুলে কথা বলার। সেই মুহূর্তে তিনি যদি একাত্মতা ঘোষণা করতেন তাহলেও দেশের নাগরিকদের সংবাদ মাধ্যমে বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ থাকত না। এখনও সময় আছে, রাষ্ট্রের কর্ণধারদের(নীতি-নির্ধারক) সাথে ‘রোগী-চিকিৎসক’ এর দাবীর প্রতি একাত্ম হয়ে কথা বলার।

খুলনার চিকিৎসক সমাবেশে মাননীয় প্রতিমন্ত্রী বিএমএ-র বক্তব্যের সাথে সম্পূর্ণ একমত পোষণ করেছিলেন। তার কোন সুফল আজও মেলেনি। এমনকি হাসপাতালে বিদ্যমান কাঠামোতে যে সকল ভয়ংকর অসঙ্গতি, ঘাটতি দূর করার প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন- তা আজও পূরণ হয় নি। সেগুলো অনায়াসে করতে পারেন – কিন্তু করেন নি।

ইচ্ছাহীন, ক্ষমতাহীন অবস্থানে থেকে কেবল ব্যক্তি প্রচারের প্রয়োজনে কথা বলা আর হৃদয় দিয়ে অনুভব করে আন্দোলন ধারণ করা এক নয়। চলমান আন্দোলনের বহু-মুহূর্ত গেছে – প্রতিমন্ত্রী একাত্মতা ঘোষণা এবং আন্দোলনের পক্ষে রাষ্ট্রের কর্ণধারদের সাথে লড়াপেটা করতে পারতেন। তাহলে নাগরিক ও প্রচার মাধ্যমের বর্তমান বিভ্রান্তি দূর হত। একটু সহানুভূতি প্রকাশ করলেও চিকিৎসকরা উৎসাহ পেত। বাস্তবে এরকম দৃশ্য দেখা যায় নি।

বাংলাদেশে অব্যাহত চিকিৎসক লাঞ্ছনার ঘটনায় কখনো স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীকে পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে বা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রতিকার ও সহানুভূতি জানাতে দেখা যায় নি। কখনও আক্রান্ত চিকিৎসকের পাশে দাঁড়ান নি। খোদ রাজধানীতে সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায়ও দু’মন্ত্রীর কেউই লাঞ্ছিত, আহত চিকিৎসকের পাশে দাঁড়ান নি। জাতি হিসাবে আমাদের আত্মবিস্মৃতির সুনাম আছে। সে কারণে অতীতের সকল রাষ্ট্রীয় অবহেলা-অপমান সহ্য করেও , ঘটনা বিস্মৃত হয়ে সহজে আশাবাদী হতে পারি- কিছুই মনে রাখি না।

অপরদিকে একজন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সহিংসতায় আহত হলে, তার শয্যাপাশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জাতীয় প্রচার মাধ্যমে দেখা যায় । একই রাষ্ট্রে একই ধরণের সহিংসতায় চিকিৎসকদের প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্নতর হওয়ার কারণে রাষ্ট্রীয় আচারের বৈষম্য প্রকাশ পায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের লাঞ্ছিত চিকিৎসকদের প্রতি এ ধরণের আচরণের সাথে প্রতিমন্ত্রীও জড়িত। সে কারণে তাঁর বক্তব্যের বাস্তবতা প্রশ্নবিদ্ধ !

চিকিৎসকদের চলমান আন্দোলন – এটি কোন ভাসুরের নাম নয় যে, বড় মন্ত্রী বিষয়টি উচ্চারণও করলেন না , সমর্থনও দিলেন না। অনুষ্ঠানেই প্রতিমন্ত্রী একঘরে হয়ে গেলেন, মন্ত্রণালয়ে কি করবেন ?

চিকিৎসক ও তাদের নেতৃবৃন্দের অতীত ঐতিহ্যের ধারক হিসাবে মনে রাখা উচিত , আন্দোলন যেন কারো দয়া-দাক্ষিণ্য বা অনুকম্পায় রূপান্তরিত না হয়। তাহলে আন্দোলন অর্ধসমাপ্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা । অর্ধ-সমাপ্ত আন্দোলন পরবর্তীতে খারাপ ফলাফল বয়ে আনে।

“রোগী- চিকিৎসকদের” অধিকারহীনতার মূল কেন্দ্রবিন্দু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তথা সচিবালয় । সেখানে অধিকারহীনতার বক্তব্যের বিষয়গুলোর প্রতি সদয় দৃষ্টি দিলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। বাস্তবে তা হয় নি। আসনে বসে ভাষণ শুনতে আমরা সবসময় ভালবাসি। সেসব ভাষণ কখনো বাস্তবতার মুখ দেখে না।

সদ্য ঘোষিত স্বাস্থ্য-বাজেট স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্য অপ্রতুল। এর ফলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় চলমান উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন স্তিমিত হয়ে যাবে। চিকিৎসায় সংকট বাড়বে, নাগরিকরা বঞ্চিত হবে। এ অপ্রতুল বাজেটের বিষয়ে সংসদে অর্থমন্ত্রীর সাথে কোন বাকযুদ্ধ বা কত বাজেট হলে এটি তৃণমূল পর্যন্ত টেকসই ব্যবস্থাপনা হিসাবে রোগী-চিকিৎসকের অনুকূলে থাকত – সে রকম কোন বক্তব্য থাকলে দায়িত্বের পরিচয় বহন করত। কেবলমাত্র কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী অপ্রতুল স্বাস্থ্য-বাজেটের সমালোচনা করে এ খাতে বাজেট বৃদ্ধির আবেদন রেখেছেন । এ থেকেই প্রমাণিত হয়, স্বাস্থ্যমন্ত্রী- প্রতিমন্ত্রী রোগী-চিকিৎসকের অধিকারের প্রতি কতটা সংবেদন ও দায়িত্বশীল !

________________________________

ডা. বাহারুল আলম । প্রখ্যাত পেশাজীবী নেতা ।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়