Ameen Qudir

Published:
2017-03-15 17:23:01 BdST

টাকা হলে ফিল্ম বানাব: মূল চরিত্র মেডিকেলের ব্যাকবেঞ্চার বা সেই মেয়েটি



ডা. নাসিমুন নাহার
____________________________


আমার যদি কখনো অনেক টাকা পয়সা হয়, নিজের রোজগার করা টাকা, পৈতৃক সূত্রে পাওয়াটা না-- তাহলে আমি একটা ফিল্ম বানাব।


সেখানে আমি দলছুট মানুষদের গল্প বলব।"আমি তুমি, তুমি আমি, ওগো হ্যাগো" সর্বস্ব ব্যবসা সফল হবার মসলাদার প্রেমের গল্প না।জীবন থেকে ছিটকে যেয়ে আবার ভীষণভাবে জীবনে ফিরে আসা মানুষদের জীবনের সত্য গল্পগুলো শোনাব।

 

ফিল্ম একটা ভীষন শক্তিশালী মাধ্যম যেকোন ধরনের মেসেজ ডেলিভারির জন্য।ফিল্মের মাধ্যমে অনেক কঠিন বাস্তব গল্প খুব সহজে বলে ফেলা সম্ভব।আমি গল্প বলতে এবং শুনতে ভালোবাসি।আমি যখন প্রথম ফেবুতে লেখা শুরু করি 2016 তে তখন একটা টার্মে সব লেখা লিখতাম -'জীবন থেকে নেয়া'।তখন দেখেছি এই অস্হির সময়ে, এখনো এত ব্যস্ততার যুগেও মানুষ গল্প শুনতে ভালোবাসে।

আমার ফিল্মের নায়ক হয়তো হবে মেডিকেল কলেজের কোন ব্যাক বেঞ্চার।যে লেখাপড়া থেকেও বেশি ব্যস্ত সন্ধানী করতে, রাত জেগে রক্ত জোগাড় করতে করতে সকালের লেকচার ক্লাস মিস করা যারা রোজকার অভ্যেস, পুওর ফান্ড, ফ্রি হেলথ ক্যাম্প করতে যেয়ে যার এটেনডেন্সের সংখ্যা কমতে থাকবে।সাপ্লি খেতে খেতে নিজের ব্যাচমেটদের সাথে হয়তো সময় মতো প্রফে বসার ক্লিয়ারেন্সই সে পাবে না।তার রুমমেটরা যখন ফাস্ট প্রফের প্রিপারেশন নিবে তখন একই রুমে বসে সে পড়তে থাকবে এনাটমী এবডোমেন কার্ড- আইটেম ক্লিয়ার করার জন্য।অথবা হতে পারে এক এনাটমীতেই সে সাপ্লি খাবে দু'বার ! চরম হতাশায় ধীরে ধীরে ডুবে যাওয়া এই ছেলেটিই একদিন হয়ে উঠবে দেশ সেরা এনাটমীর লিজেন্ড প্রফেসর ।

 

অথবা গল্প শোনাব সেই মেয়েটির, তুখোড় ছাত্রী সুন্দরী মেয়েটি যে কলেজে পড়াকালীন সময়ে প্রেম করে ভিন্ন ধর্মের এক ছেলেকে বিয়ে করে ফেলে।অতঃপর সমাজ সংসার থেকে যার ছিটকে পরা।বছরখানেকের মধ্যে স্বামী নামক লোকটির পশুত্ব দেখতে দেখতে নিজের শরীরে মাতৃত্বের আভাস টের পাওয়া।কিন্তু গোপনে গোপনে সে ঠিকই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স কোর্সে ভর্তি হয়ে যায়।তারপর সন্তান, সংসারের যাঁতাকলে পরে পাঁচ/ছয় বছর দমবন্ধ জীবন কাটিয়ে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে এডমিন ক্যাডারে চান্স পেয়ে জীবনযুদ্ধ জয়ের সেই সংগ্রামী গল্পটি।

কিংবা আমি শোনাব সেই ছেলেটির গল্প যে ক্লাস থ্রিতে পড়ার সময় থেকে নিজের মামা কতৃক abuse এর শিকার হতে থাকে টানা তিন বছর।প্রচন্ড ব্যস্ত ডাক্তার বাবা মা'কে যে কখনও সুযোগই পায়নি তার কষ্টের কথাগুলো বলার।সেই ছোট বাচ্চাটার বাথরুমের দরজা বন্ধ করে নিজেকে সেইফ করার ব্যর্থ চেষ্টার গল্প বলতে চাই আমি।পরবর্তীতে ছেলেটির জীবনে যখন প্রেম নিয়ে একজন নারী আসে তখন সে নিজেকে সমকামী হিসেবে আবিষ্কার করে এবং এতে সে মোটেও অসুখী হয় না।কারন তাকে biological father হতে হবে না, তার সন্তানের অন্তত তার মত ভয়ংকর কোন শৈশবকাল তৈরি হবে না।

সেই গল্প বলব।

এরকম অফ ট্রাকের কিন্তু ভীষন সত্য গল্পগুলো আমি সবাইকে শোনাতে এবং দেখাতে চাই।
আর আমার নিজের জীবনের গল্পটা তো থাকছেই।যা দলছুট কোন ছেলে/মেয়ে কে আর কিছু হোক বা না হোক অন্তত নিজেকে, নিজের জীবনটাকে ভালোবাসতে শেখাবে,আত্মহত্যা করার ভাবনা থেকে দূরে রাখবে,সাহসী হতে শেখাবে, কঠোর পরিশ্রম, আত্মসম্মানবোধ আর সততার সাথে জীবনটাকে এই পোড়ার দেশেও সাজানো সম্ভব স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়েও সে গল্প জানাবে
এবং একটা মেসেজ তো অবশ্যই দিবে--
"মরে না গেলে জীবনে শেষ বলে কিছু নেই এবং জীবন কখনোই কারো জন্য থেমে থাকে না, রাস্তাটা বদলে যায় শুধু।
life is full of opportunities. Plzzzzzz give thyself one more chance. Definitely you can do it . you can come back to your Life."

____________________________

ডা. নাসিমুন নাহার। মানুষের জন্য লেখেন।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়