Ameen Qudir

Published:
2017-03-14 18:14:59 BdST

চবি মেডিকেল সেন্টারে যৌন নিপীড়নের প্রোপাগান্ডা: এক গভীর ডাক্তারবিরোধী ষড়যন্ত্র


আহির ফা হিয়ান বুবকা
____________________________

দেশের ডাক্তারদের বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যম্পাসে হাস্যকর প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে, সেখানে রাতে চিকিৎসার জন্য আগত গুরুতর রোগী এক ছাত্রীকে মেডিকেল সেন্টারের দায়িত্বরত পুরুষ ডাক্তার নাকি যৌন নিপীড়ন করেছেন।


এ নিয়ে মধ্যযুগীয় তোলপাড় হয়েছে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে। পুরুষ ডাক্তারকে রীতিমত মারধোর করা হয়েছে। অথচ রোগীনী যখন চিকিৎসা নেন, তখন কোন অভিযোগ করেন নি। পরে তার সঙ্গীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে বানোয়াট প্রোপাগান্ডা চালান।

দাবি উঠেছে , পুরুষ ডাক্তাররা নারী শিক্ষার্থীদের দেখতে পারবেন না। ছাত্রীদের জন্য নারী ডাক্তার রাখতে হবে।
এজন্য মিছিল মিটিং হয়েছে। অভিযুক্ত ডাক্তারকে মারধোরই নয়; হয়রানী,পূন: পূন: হামলার চেষ্টা পর্যন্ত হয়েছে।

পুরো জিনিসটি সাজানো ও বানোয়াট , তা সহজে বোঝা যায়। রাতে গুরুতর অসুস্থ ছাত্রীকে মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার পর নাকি তাকে যৌন হয়রানির চেষ্টা করেন ডাক্তার।

ওয়াকিবহাল ব্যাক্তি মাত্রেই বোঝা সম্ভব, এক্ষেত্রে তিলকে তাল করা হয়েছে। গুরুতর অসুস্থ রোগীনীর প্রতি কোন পুরুষেরই আপত্তিকর আচরণের কথা নয়।
এক্ষেত্রে যে কোন সাধারণ মানুষেরই মাথায় আসবে তার সুস্থতা। তাকে সুস্থ করে তোলা। চবি মেডিকেল সেন্টারের ডাক্তারও সেই মানবিক চেষ্টা করেছেন। তিনি নির্ঘুম সেবা দেন ছাত্রীকে। তাকে সুস্থ করে তোলেন।
অথচ ছাত্রীকে সুস্থ করে তোলার মানবিক বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে সাজানো হয়েছে সম্পূর্ন আপত্তিকর গল্প।
এটাই হল ইয়োলো জার্নালিজম।

অনেকেরই মুন্না ভাই এম বিবিএস ছবি র মেডিকেল কলেজ প্রিন্সিপালের কথা মনে পড়বে।

তিনি বলেছিলেন, ডাক্তারের কাছে রোগীর জেন্ডার কোন বিষয় নয়। সে নারী না পুরুষ; কার আত্মীয় স্বজন সেটা ধর্তব্যের নয়। ডাক্তারের কাছে রোগী অসুস্থ একটি দেহ মাত্র। সেই দেহটিকে সারিয়ে তোলাই ডাক্তারের কাজ।

রোগীর দেহের প্রতি ডাক্তারের কামুক নজরের সুযোগ নেই। তার নজর সবসময় অসুস্থ দেহটির প্রতি। সেটির রোগ ব্যাধির প্রতি।

কিন্তু পশ্চাদপদ অন্ধকার সমাজে ঘৃন্য নানা প্রপাগান্ডা চালিয়ে সমাজকে, দেশকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত অনেকে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তাই ঘটেছে।

 

অাসুন এবার পাঠ করি হলুদ মিডিয়ার হলুদ সাংবাদিকতা। তারা লিখেছে:
____________________
_______________________

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের দায়িত্বরত এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছে এক শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থী শনিবার দুপুর ১২ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বরাবর একটি লিখিত জমা দিয়েছে। উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাছে অভিযোগ পত্রটি জমা দেওয়া হয়।

অভিযুক্ত মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোস্তফা কামাল হোসনের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ তোলা হয়।

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে গুরুতর শারীরিক অসুস্থতা বোধ করায় ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ্যাম্বুলেন্সে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে যায়। এ সময় দায়িত্বরত মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ মোস্তফা কামাল চিকিৎসার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে ওই শিক্ষার্থীর উপর যৌন নিপীড়ন চালায়। রোগ নির্ণয়ের ছলে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে শরীরে ওপর লাঞ্চনার চালায়। তাৎক্ষনিকভাবে ওই শিক্ষার্থী প্রতিবাদ জানাই এবং বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে অভিহিত করে।
অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে যৌন নিপীড়নের সাথে জড়িত চিকিৎস মোস্তফা কামাল হোসনের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য দাবি জানান ওই শিক্ষার্থী। এই ঘটনার প্রতিবাদে ফুসে উঠেছে চবি। মিছিল মিটিং হয়েছে দিনভর। সেখানে শ্লোগান হয়েছে, ছাত্রী রোগী দেখতে পুরুষ ডাক্তার চাই না। নারী ডাক্তার নিয়োগ দাও , দিতে হবে।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর লিটন মিত্র জানান, ‘গতকালের ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার হবে।’"""

_____________________
_____________________


এই জঘন্য ভাষার রিপোর্টই একযোগে দেশের বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ হয়েছে। "" রোগ নির্ণয়ের ছলে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে শরীরে ওপর লাঞ্চনার"' অভিযোগ ডাক্তারের বিরুদ্ধে।

এ ব্যাপারে বিষদ ব্যখ্যা করে মোহাম্মদ এমরান, ডা. রাকিবউদ্দিন , বাবর চৌধুরী সহ একদল ডাক্তার একটি সমুচিত একাধিক বিবৃতি দিয়েছেন মিডিয়ায়।

মজার বিষয় , তথাকথিত যৌন লাঞ্ছনার রসালো খবর মিডিয়ায় এলেও এই ডাক্তারী অতি দরকারি ব্যখ্যা মিডিয়ায় আসে নি।

 

মোহাম্মদ এমরান বিস্তারিত ব্যখ্যা করে বলেন,
_____________
এই ছবিটা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্লিনিক্যাল examination এর একটি রেফারেন্স বইয়ের যেখানে পেট ব্যাথা পরীক্ষা নিরীক্ষা নিয়ে এবং কতটুকু exposed করতে হবে তা আলোচনা করা হয়েছে ।

হঠাৎ করে পেট ব্যাথার অনেক কারণ থাকতে পারে, যার কিছু সাধারণ আর কিছু ভয়াবহ যেমন burst appendix, ectopic pregnancy, pancreatitis, inf MI etc.. একজন চিকিৎসক শুধু মাত্র পেটে হাত দিয়ে অনুভব করে,পেট দেখে এবং কিছু প্রশ্ন (কিছুটা অবশ্যই তথাকথিত গোপন প্রশ্ন ) করে রোগের একটা ডায়াগনোসিস এ পৌছে চিকিৎসা দিতে পারেন ।

 

 


এসব না করে চিকিৎসা দেওয়া ডাক্তার আর ফার্মসি ওয়ালার হাতুড়ে চিকিৎসা মধ্যে কোন পার্থক্য নেই । এবার আসি মূল কথায় ।। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারের

ডা মোস্তফা কামাল হোসেন এই কাজ টি করার চেষ্টা করেছেন এবং অবশ্যই রোগীর অনুমতি নিয়ে, তার সাথের কয়েকজন বান্ধবীর উপস্থিতিতে, রোগীর যথেষ্ট শালীনতা বজায় রেখে । ঐ সময়ে এই ব্যাপারে রোগীর কোন অভিযোগ নেই কিন্তু আধ ঘণ্টা পরে ঐ রোগীর বন্ধুরা এসে উক্ত ডাক্তার কে চিকিৎসা উদ্দেশ্য পেটে হাত দেওয়ার অপরাধে মারধর করেন, যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন ।


ঐ রাতে প্রশাসনের সহায়তায় উনাকে রোগীর বন্ধুদের নির্যাতন থেকে উদ্ধার করা হয় ।এখন ঐ ডাক্তারকে সামাজিক ভাবে হেয় করা হচ্ছে, চাকরি থেকে অপসারণের দাবি করা হচ্ছে ।যথারীতি পত্রিকা গুলো তে ডাক্তারের বিরুদ্ধে রিপোর্ট আসছে, জনগণ কে ভূল তথ্য দেওয়া হচ্ছে ।। উপজেলা পর্যায়ে সন্ধ্যার পর স্বাভাবিক ভাবেই কোন মহিলা ডাক্তারকে জরুরী বিভাগে ডিউটি দেওয়া যায় না ..মহিলা-পুরুষ- শিশু, জরুরি-অজরুরী সব রোগী পুরুষ ডাক্তার কেই দেখতে হয় । এখন কি পুরুষ ডাক্তার গন এইসব হেনস্থার ভয়ে মহিলা রোগী না দেখে ফেরত দিবেন ?? আর সিরিয়াস কোন কারণে মারা গেলে তার দায়িত্ব কে নিবে?? তখন কি চিকিৎসা অবহেলার কারণে ডাক্তার কে নির্যাতন করবে না??দেশে ডাক্তারদের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে এই দেশে ডাক্তার হওয়াটাই একটি আজন্ম পাপ....


এক বিবৃতিতে ডাক্তার প্রতিনিধিরা বলেন, ________________
হয়রানি কার??

সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা প্রদান কালে পুরূষ চিকিৎসকের বিরূদ্ধে একজন ছাত্রী যে অভিযোগ এনেছেন তা আমাদের দৃষ্টিগোছর হয়েছে।

ঘটনার বিবরনে আমরা জানতে পারি, গত ১০ মার্চ রাত আনুমানিক ৭.৪৫মি উক্ত ছাত্রী কয়েকজন ছাত্রীসঙ্গী নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা নিতে আসেন। তখন কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ মোস্তফা কামাল হোসেন প্রচলিত রীতি মোতাবেক পূর্বানূমতি নিয়ে উক্ত রোগিনীকে Examine করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাপত্র প্রদান করেন। তারপর উক্ত রোগিণী সঙ্গীদের নিয়ে মেডিকেল সেন্টার ত্যাগ করেন। ।

উল্লেখ্য Examine কালে বহি:বিভাগের কর্মচারী, রোগিণীর সাথে আগত সঙ্গীরা ও বহি:বিভাগে আগত রোগীগন উপস্থিত ছিলেন এবং room এর দরজা খোলা ছিল। আমরা আরো জানতে পারি রোগিণী মেডিকেল সেন্টার ত্যাগের আনুমানিক একঘন্টা পর কিছু ছাত্র এসে ডাঃ মোস্তফার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনে এবং তাকে মারধর করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টোরিয়াল বডি এসে তাকে উদ্ধার করেন।


ঘটনার পর পর ঐরাতে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও প্রক্টোরিয়াল বডির সদস্য তিনজন সহকারী প্রোক্টরের উপস্থিতিতে পুর্বানুমতি নিয়েই তাকে examine করা হয়েছে বলে ঐ ছাত্রী জানান।

উক্ত ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ উপ-উপাচার্য ড.শিরীন আখতারকে প্রধান করে ৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। বিষয়টি এখন তদন্তাধীন। চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অত্যন্ত স্পর্শকাতর এই ঘটনার অভিযোগ ও মারধরের ঘটনায় আমি ব্যক্তিগতভাবে মর্মাহত ও উদ্বিগ্ন। । তদন্ত কমিটির প্রতি বিশ্বাস ও পুর্ণ আস্থা রেখেই বলতে চাই এ ঘটনাটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত আমাদের সকলের জন্য সুস্থ সমাজের জন্য অতীব প্রয়োজন; প্রকৃত সত্য প্রকাশিত হলে অচিরেই সকল প্রকার ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে।


ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষক চিকিৎসকদের মধ্যের পারস্পরিক পেশাগত ও সামাজিক শ্রদ্ধাবোধ রক্ষা পাবে। তা না হলে আমরা সবাই জাতি হিসাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও কলংকিত হব।সামাজিক অবক্ষয় তখন অবধারিত হবে। তাই অপরাধী (চিকিৎসক /অভিযোগকারী/হামলাকারী) যেই হোক সে যেন চিহ্নিত হয় এবং সর্বোচ্চ সাজা পায়। যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘৃণিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে ।

কিন্তু তদন্ত রিপোর্ট প্রদানের পুর্বে শুধু মাত্র অভিযোগের ভিত্তিতে কাঊকে দোষারোপ করা বা শাস্তি প্রদান করা থেকে বিরত থাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু সংবাদপত্র তাদের চিকিৎসক বিরোধী অবস্থান নিয়ে, অপর্যাপ্ত তথ্য নিয়ে, কাল্পনিক সংবাদ পরিবেশন করে চিকিৎসকদের হেয় করার হীন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই ধরনের হলুদ সাংবাদিকতাকে নিন্দা ও ঘৃনা জানানোর মত পর্যাপ্ত ভাষা জ্ঞান আমার নাই।

এখন শুধু তদন্ত কমিটির অপেক্ষায়। """


দেশকে মধ্যযুগে নেওয়ার নানা হীন ষড়যন্ত্র চলছে।
কোএডুকেশন বন্ধ, নারী জগত , নারী মেডিকেল, নারী বিশ্ববিদ্যালয় দাবি করে নারীকে বন্দী নানা ষড়যন্ত্রের আলামত এখনই পরিস্কার।

____________________________

 

আহির ফা হিয়ান বুবকা। নির্বাহী সম্পাদক , ডাক্তার প্রতিদিন।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়