Ameen Qudir

Published:
2017-04-05 16:20:54 BdST

'ব্রোকেন ফ্যামিলির সন্তান বলছি '


 

ডা. নাসিমুন নাহার
___________________________________

 

ফেইসবুকে টুকটাক হাবিজাবি লেখালেখির বদৌলতে প্রচুর ব্রোকেন ফ্যামিলির সন্তানদের সাথে আমার কথা হয়। আমি সাইকোলজিষ্ট/সাইক্রিয়াটিষ্ট নই।তবে আমি খুব ভালো একজন দেয়াল টাইপ Listner-- যে জীবনের গল্প শুনতে ভালোবাসে।

তাই কোন বাচ্চা মেয়ে যখন রাত তিনটা ষোলতে আমাকে ইনবক্সে নিজের জীবনের গল্প লিখে সেন্ড করে আর সকালে অফিসে এসে পিসি অন করে সেই গল্প পড়ার সুযোগটা আমি পাই; নিজেকে তখন অদ্ভুত রকম ভালোবাসতে ইচ্ছে করে আমার.............
মনে হয় বেঁচে থাকাটা খুব মন্দ কিছু নয়।বেঁচে থাকতে হবে আরো বহুদিন জীবনের গল্প শোনার জন্য, আরো অনেককে সেই গল্প শোনাবার জন্য।

আজ একটা গল্প শেয়ার করছি সবার সাথে।

ইনবক্স-------"আপু আমি ব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়ে......
দীর্ঘ ১৮ বছরের অসুখী দাম্পত্য জীবন পাড়ি করার পরে যখন জানা যায় বাবা পরকীয়ায় লিপ্ত তখন মা বাবাকে ডিভোর্স দেয়।
এখন সবাই মাকে আমায় নিয়ে ভয় দেখায়।
মেয়ের কি হবে? মেয়ের বিয়ে দিবা কি করে? মেয়ের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিলা।আরো অনেক কিছু।

আপু ব্রোকেন ফ্যামিলির একজন মেয়ের কি বাবা মায়ের ডিভোর্সের সাথে সাথে কি তার নিজের জীবনও থেমে গেল? ?তার কি সুখী সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখা অন্যায়? "

#আহ_জীবন_!#কত_রূপে_ধরা_দাও_তুমি !!

আমার রিপ্লাই-----কখনো না।
নানা কারনেই বাবা মায়ের নিজেদের মধ্যে সমস্যা হতে পারে।তার জন্য সন্তান কখনোই responsible না।সব সন্তান ই তার বাবা মায়ের পরম আদরের ভালোবাসার।তা বাবা মা একসাথে থাকুক কিংবা ভিন্ন।

তবে সন্তানের ভবিষ্যতের অজুহাতে দিনের পর দিন অসুস্থ পরিবেশে সন্তান কে লালন পালন করে তাকে দুঃসহ স্মৃতি দেয়াটা বাবা মায়ের জন্য অবশ্যই ভুল সিদ্ধান্ত বলে আমি মনে করি।প্রতিটি মানুষের ই অধিকার আছে সুস্থ সুন্দর স্বাভাবিক শৈশব কৈশোরের।

অবশ্যই বাবা মা দুজনই সন্তানের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ।কিন্তু সব সময় সবার জীবন ছকে সাজানো নাও হতে পারে।আর এজন্যই সৃষ্টিকর্তা ধর্মীয় বিধান পর্যন্ত দিয়েছেন।ধর্মীয় এবং সামাজিকভাবে পারিবারিক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

নিত্য অশান্তির মাঝে বেড়ে ওঠা সন্তান পরবর্তী জীবনে অনেক মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে।যার প্রভাব পরবর্তী তে তার নিজের বৈবাহিক এবং সামাজিক জীবনে পড়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি।তার মাঝে অপরাধ প্রবণতাসহ নানা জটিল অবক্ষয় ভর করতে পারে।

তাই কোন কারনে যদি বাবা মাকে আলাদা হয়ে যেতে হয় সব থেকে জরুরি সন্তানের সাথে আলোচনা।সন্তানকে জানানো কোথায় সমস্যা হচ্ছিল।সন্তান ছোট, বুঝবে না, লুকিয়ে ফেলা ইত্যাদি এগুলো খুবই ভুল সিদ্ধান্ত।বয়সের সাথে যায় এমন শব্দ ব্যবহার করে সন্তানকে বলতে হবে বাবা মায়ের কি কি সমস্যা হচ্ছে, কেন তারা এক বাসাতে আর বসবাস করতে পারছেন না।প্রচুর পরিমানে শেয়ারিং হতে হবে সন্তানের সাথে।

সবথেকে ভাল হতো যদি আমাদের সমাজটাও মানবিক হতো! কিন্তু আফসোস আমাদের সমাজ যে বড়ই অদ্ভুত !
But don't worry.
Ignore করতে শিখতে হবে সন্তানের প্রয়োজনে।

একটা সময় পরে সন্তান use to হয়ে যাবে তার জীবনে।সমাজও ক্লান্ত হয়ে পড়বে কথা শোনাতে শোনাতে !

আর শোন,অবশ্যই তুমি তোমার জীবন নিয়ে স্বপ্ন দেখবে।কে কি বলল একদম care করবা না। মনে রাখবা--- এই সমাজ কথা শোনাতে ওস্তাদ !!!
কিন্তু যখন জীবনে successful হবা, ভালো থাকবা; তখন এই বুলশিট সমাজ ই তোমার পিছনে পিছনে ঘুরবে। বাস্তব প্রমান--- আমি নিজে।জীবনের খারাপ সময়টা মোটামুটি একাই পারি দিয়েছি।অথচ ভালো সময়ে মানুষের অভাব নেই আশেপাশে !

চোখ কান বুজে কষে লেখাপড়া করতে থাক।
আমাদের মতো সাধারন মেয়েদের মাথা উঁচু করে টিকে থাকার জন্য একমাত্র শক্তিশালী অস্ত্র হচ্ছে --- একাডেমিক সার্টিফিকেট।
Honestly speaking যখন তুমি অর্থনৈতিকভাবে ভালো অবস্থানে থাকবা সততার সাথে, তখন automatically তোমার সামাজিক অবস্থান এই কিম্ভূত সমাজে বদলে যাবে চোখের পলকে।

অদ্ভুত লাগছে শুনতে ??
কিন্তু এটা ই সত্য।

আর মনে রেখ সৃষ্টিকর্তা বলে একজন আছেন।তাঁর হিসেবে কখনো ভুল হয় না।অবশ্যই তোমার জীবনেও খারাপ সময় কেটে যেয়ে ভালো সময়ের কমতি হবে না।

নামাজ পড় সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি লাভের জন্য এবং নিজের মনের প্রশান্তির জন্য।

একদম মন খারাপ করবা না।মা'কে দেখে রেখ।নিজের যত্ন নিও।

অনেক অনেক ভালোবাসা রইলো আপু তোমার জন্য।

Be bold
Be honest
Be loyal to thyself.

___________________________


ডা. নাসিমুন নাহার । লোকসেবী চিকিৎসক ও মানবতাবাদী পরামর্শক।

আপনার মতামত দিন:


প্রেসক্রিপশন এর জনপ্রিয়