Ameen Qudir

Published:
2018-03-04 16:52:01 BdST

যেন তেন মেডিকেল কলেজ : চিকিৎসা শিক্ষার ভয়াবহ ভরাডুবির কথা বলছে আইন কমিশন


 

যত্র তত্র মেডিকেল কলেজের প্রতিকী ছবি।


ডেস্ক রিপোর্ট
__________________
যত্র তত্র নামকা ওয়াস্তে মেডিকেল কলেজ চালু করায় মেডিকেল শিক্ষার ভয়াবহ মান অবনতি ঘটেছে। আইন কমিশন প্রতিবেদনে ধরা পড়েছে এই চিত্র। আইন কমিশন প্রনীত রিপোর্ট নিয়ে
মিডিয়ায় নানা প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। আইন কমিশন বলছে,
মেধার ভিত্তিতে নয়, কেবলমাত্র অর্থের মাধ্যমে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে অযোগ্য শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। এটাই দেশের চিকিৎসা খাতের দুরবস্থার অন্যতম কারণ । কমিশনের এ সংক্রান্ত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে ভর্তি নীতিমালার তোয়াক্কা করা হচ্ছে না।

অনুমিত সংখ্যার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। আর এসব শিক্ষার্থীর ভর্তির যোগ্যতার মাপকাঠিই হচ্ছে কেবল অর্থ প্রদান। ফলে বেশিরভাগ মেডিক্যাল কলেজ প্রকারান্তরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশে মেডিক্যাল শিক্ষার মানের ভয়াবহ অবনতি হয়েছে।

গত এক বছর ধরে মাঠ পর্যায়ে পরিচালিত গবেষণা কার্যক্রমের আলোকে আইন কমিশন এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে। প্রতিবেদনে দেশের চিকিত্সা খাতের দুরবস্থার পেছনে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও চিকিৎসকদের অর্থ উপার্জনকেও দায়ী করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, মানব সেবার প্রতি নিবেদিতপ্রাণ নয়, শুধুমাত্র অভিভাবকের চাপে অথবা অর্থ উপার্জনের উপায় বিবেচনায় চিকিৎসক হওয়ার জন্যই মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়ার প্রথা প্রচলিত রয়েছে।

কমিশনের গবেষণায় দেশের মেডিক্যাল শিক্ষা ব্যবস্থা, সরকারি হাসপাতালের চিকিত্সার অবস্থা, চিকিত্সকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস, নার্সিং সার্ভিস, ব্লাড ব্যাংক, জরুরি বিভাগ, ওষুধ ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসকদের নিরাপত্তা, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার সমস্যাগুলো উল্লেখ করে স্বাস্থ্য সেবার করুণ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

আইন কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক, সদস্য বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর ও ড. এম শাহ আলম স্বাক্ষরিত প্রতিবেদন গত রবিবার সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে মেডিক্যাল শিক্ষা সম্পর্কে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রবণতা ভর্তি প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তবে গত বছর এই অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। পূর্ববর্তী বছরগুলোতে বিশেষ করে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে পরীক্ষার পাস নম্বর কমিয়ে কিংবা ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন সহজ করে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী প্রাপ্তি নিশ্চিত করাও দুরবস্থার কারণ।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, মেডিক্যাল কলেজে রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট ছাত্রদের অনেকেই ঠিকমত ক্লাস করেন না। তারা নামকাওয়াস্তে পরীক্ষা দিয়ে পাস করেন বা পাস করিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তুকি থাকায় শিক্ষা ব্যয় নাগালের মধ্যে থাকায় মেধাবী শিক্ষার্থীরা সেখানে ভর্তির সুযোগ পান।

কিন্তু বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষা ব্যয় অযৌক্তিভাবে বেশি। ফলে দরিদ্র মেধাবীরা এই শিক্ষা গ্রহণে বঞ্চিত হচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে টাকার বিনিময়ে অনেক অযোগ্য প্রার্থীও ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। এছাড়া পর্যাপ্ত ও উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক, নার্স, শয্যা ও রোগীর অভাবে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার মান খুবই করুণ।

যত্র তত্র মেডিকেল কলেজের প্রতিকী ছবি।

 

নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক শিক্ষার্থীর বিপরীতে রোগীসহ অন্তত ৫টি শয্যা থাকা আবশ্যক। কিন্তু অধিকাংশ বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে পর্যাপ্ত শয্যা নেই। কিংবা শয্যা থাকলেও নেই রোগী। ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের যথাযথভাবে হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়ার সুযোগ নেই।

কোনো কোনো বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে এক্সটার্নাল পরীক্ষক মৌখিক পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীকে ৩/৪ নম্বর দিতে চাইলেও চাপের মুখে ও নিজের পরীক্ষকের অবস্থান ধরে রাখার জন্য অযোগ্য পরীক্ষার্থীকে পাস করিয়ে দিতে বাধ্য হন। ফলে মেডিক্যাল শিক্ষার মানের ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে।ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে অধিকাংশ বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ। গবেষণায় বলা হয়েছে, সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যালে শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজি। কিন্তু বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর ইংরেজি ভাষা জ্ঞান মারাত্মক দুর্বল। ফলে সার্বিকভাবে তাদের শিক্ষা গ্রহণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে।

উল্লেখিত সমস্যা সমাধানে অর্ধশত সুপারিশ করেছে কমিশন। এর মধ্যে বিদেশি ছাত্র কোটায় দেশি ছাত্র ভর্তি করার প্রচলিত প্রথা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ, প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রকৃত মেধা যাচাইয়ের জন্য উন্নত দেশসমূহের ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি নিরীক্ষা করে আরো কার্যকর কৌশল অবলম্বন ও পরীক্ষার পাস নম্বরকে অতি সহজলভ্য করার প্রবণতা পরিহার করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি কলেজগুলোর মধ্যে শিক্ষা ব্যয়ের বিরাজমান অস্বাভাবিক ব্যবধান কমিয়ে অযোগ্য শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ সংকুচিত করতে হবে।

আইন কমিশন মনে করে, সামগ্রিক বিচারে দেশের স্বাস্থ্য সেবার সার্বিক মানোন্নয়নের পথে একাধিক অন্তরায় রয়েছে। স্বাস্থ্য সেবা যাতে কাঙ্ক্ষিত মান অর্জন করতে পারে সে লক্ষ্যে কমিশন ‘স্বাস্থ্য সেবা’ আইন নামে একটি আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গবেষণাটি পরিচালনা করেছে।

ওই গবেষণা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে মতবিনিময়সহ প্রথিতযশা অধ্যাপক-চিকিৎসকদের সাথে একাধিক কর্মশালা পরিচালনা করা হয়েছে। এই গবেষণা কার্যক্রমের আলোকে স্বাস্থ্য খাতের সমস্যাবলী তুলে ধরা হয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে স্বাস্থ্য সেবার মান কাঙ্ক্ষিত মাত্রা অর্জন করতে পারবে।
তথ্য:দৈনিক ইত্তেফাক এর সৌজন্যে।

আপনার মতামত দিন:


নির্বাচন এর জনপ্রিয়