Ameen Qudir

Published:
2017-09-05 18:47:22 BdST

স্বাস্থ্য ক্যাডারের সহযোগী অধ্যাপক পদোন্নতিতে জ্যেষ্ঠতা লংঘনের অভিযোগ


 



 

 


সংক্ষুব্ধ ভুক্তভোগী কয়েকজন চিকিৎসক

 


_______________________________________

 

বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তাদের সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতিতে জ্যেষ্ঠতা লংঘনসহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

এতে সব শর্ত পূরণ করেও অনেক যোগ্য প্রার্থী পদোন্নতির তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। আবার পদোন্নতি প্রাপ্তদের বেশিরভাগই নির্দিষ্ট ধাপ অনৃুসরণ না করে সরাসরি ষষ্ঠ স্কেল থেকে চতুর্থ স্কেলে উন্নীত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।


গত ২৯ আগস্ট স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটির (ডিপিসি) সুপারিশের ভিত্তিতে ৫৯টি বিভাগের ৪৭৭ জনকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির ঘোষণা দেয়া হয়।


জানা যায়, সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে বর্তমানে ৪টি শর্ত অনুসরণ করা হয়। এগুলো হচ্ছেঃ স্থায়ী চাকরি, সিনিয়র স্কেল প্রাপ্তি, তিনটি প্রকাশনা, সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত থাকা, সিনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে তিন বছরের চাকরির মেয়াদ। আর পদ কাঠামো অনুযায়ী, জুুনিয়র কনসালটেন্ট ও সহকারী অধ্যাপক ৬ষ্ঠ স্কেল, সিনিয়র কনসালটেন্ট ৫ স্কেল এবং সহযোগী অধ্যাপক ৪র্থ স্কেল। কিন্তু বর্তমান পদোন্নতির ক্ষেত্রে এসব নিয়ম লংঘণ করেই পদোন্নতি দেয়া হয়েছে বলে কর্মরত অনেক জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক অভিযোগ করেন। তাঁদের মতে, পদোন্নতিপ্রাপ্তদের বেশিরভাগই বিশেষ বিবেচনায় পদোন্নতি পেয়েছেন বলে ধারণা করা হয়। কারণ এরা সবাই পরিপূর্ণভাবে ৪টি শর্ত পূরণের মতো যোগ্যতা অর্জন করেন নি। প্রকাশনা এবং চাকরির মেয়াদের ঘাটতি রয়েছে এদের। আবার কেউ কেউ ৬ষ্ঠ স্কেল থেকে সরাসরি এক লাফে ৪র্থ স্কেলে পদোন্নতি পেয়েছেন। বিশেষ করে সিনিয়র কনসালটেন্টরাই এক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।

নিয়মানুযায়ী, প্রতি তিন বছর পর পদোন্নতির বিধান থাকলেও জুনিয়র কনসালটেন্ট পদেই একজন সরকারি চিকিৎসক ১০ বছর চাকরির পর সিনিয়র কনসালটেন্ট পদে পদোন্নতির নজির রয়েছে। কিন্তু জুনিয়র কনসালটেন্টের সমকক্ষ সহকারী অধ্যাপককে সরাসরি সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে।
পদোন্নতি বঞ্চিত চিকিৎসকেরা মনে করেন, এক্ষেত্রে সরকার ১৯৯৪ সালে বিএমএ এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করলেও এই বৈষম্য সৃষ্টি হতো না। ঐ চুক্তিতে বলা হয়েছিল, জুনিয়র ও সিনিয়র কনসালটেন্টদের বেতন ও পদ মর্যাদা সরকারী ও সহযোগী অধ্যাপকদের ন্যায় করার ব্যাপারে এবং সিভিল সার্জন ও সহকারী পরিচালকদের বেতন ও পদমর্যাদা সহযোগী অধ্যাপকদের ন্যায় করার ব্যাপারে সরকার একমত পোষন করেন।


অভিযোগ রয়েছে, স্বাস্থ্য ক্যাডারে পদোন্নতির সুনির্দিষ্ট কোনো বিধিমালা নেই। একেক সময়ে একেক নীতি অনুৃসরণ করা হয় এক্ষেত্রে। একটি সূত্র জানিয়েছে, সাবেক স্বাস্থ্য সচিব পদোন্নতির যোগ্য প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন গ্রহণ করেন এবং সেই হিসেবে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে তাদের তালিকাও তুলে ধরা হয়। কিন্তু বর্তমান স্বাস্থ্য সচিব পদোন্নতির সেই তালিকা অনুসরণ না করে বর্তমান তালিকা প্রকাশ করেছেন। আর এতে যোগ্য প্রার্থীদের অনেকেই বাদ পড়েন।


এ বিষয়ে মেডিসিনের এক সিনিয়র কনসালটেন্ট বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রকাশিত তালিকায় ৬৫ জনের নাম ছিল। কিন্তু বর্তমানে পদোন্নতির তালিকায় ৪৪ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ পদোন্নতি থেকে বাদ পড়েছেন ২১ জন। বর্তমান তালিকায় জ্যেষ্ঠতার নীতি লংঘণ করায় আমার চেয়ে জুনিয়র অনেকেই সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেলেও আমার পদোন্নতি হয়নি।’

 

জানা যায়, ২১তম বিসিএসের এই প্রার্থী পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। কিন্তু বর্তমান তালিকায় মেডিসিন বিভাগে পদোন্নতি লাভ করেছেন ২৪তম বিসিএসের অনেকেই।
একই ধরনের অভিযোগ করেছেন ইএনটি, কার্ডিওলোজি, স্কিন এন্ড ভিডি (ডার্মোটোলজি) বিভাগের অনেক জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক।

 

অপরদিকে, বর্তমানে চাকরির একেবারে শেষ প্রান্তে থাকা ৭ম ও ৮ম বিসিএস ক্যাডারের অনেকেই ইতিমধ্যে সহযোগী অধ্যাপকের সমপর্যায়ের ৪র্থ স্কেলে উন্নীত হলেও তাঁরাও বঞ্চিত হয়েছেন পদোন্নতি থেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব চিকিৎসক অভিযোগ করেন, আমরা যাদেরকে এমবিবিএসে ভর্তি হতে দেখেছি তারা এখন সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। আর আমরা চাকরির শেষ সীমানায় এসেও পদমর্যাদা পেলাম না। আমাদেরকে পদোন্নতি দেয়া হলে সরকার ক্ষতিগ্রস্থ হতো না। কারণ আমরা তো ইতিমধ্যেই বর্তমান পদোন্নতির আর্থিক সুবিধা পেয়ে আসছি। কিন্তু অযোগ্য প্রার্থীদের পদোন্নতির মাধ্যমে সরকারকে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে।

আপনার মতামত দিন:


নির্বাচন এর জনপ্রিয়