Ameen Qudir

Published:
2017-08-12 23:38:21 BdST

মুক্তামণির সফল অস্ত্রোপচার ঢাকা মেডিকেলে:সিঙ্গাপুর বলেছিল অসম্ভব


 



ডা. সোনালী সাহা

_________________


চিকিৎসা অসম্ভব বলে মুক্তামণির ব্যাপারে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল বিদেশী ডাক্তাররা। যে সিঙ্গাপুরে অামাদের সব রাজনীতিবিদ, শিল্পপতিরা প্রায়ই যান; সেই সিঙ্গাপুরের হাসপাতালও আশার কথা শোনাতে পারে নি; সেই বিষন্ন শিশুটির মুখে হাসি ফিরিয়ে এনেছে বাংলাদেশের ডাক্তাররা।


অক্ষত রেখেই মুক্তামণির ডান হাত থেকে প্রায় তিন কেজি ওজনের টিউমার অপসারণ করা হয়েছে। শনিবার সকাল পৌনে নয়টা থেকে অস্ত্রোপচার শুরু হয়।

এ বিষয়ে দেশের জীবন্ত কিংবদন্তি ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, ‘মুক্তামনির বায়োপসি রিপোর্টে রক্তনালীতে টিউমার ধরা পড়েছে। এ রোগটিকে ইংরেজিতে বলে ‘হেমানজিওমা’ এবং এটি বিরল রোগ নয়। তার রিপোর্টটি নিয়ে আমরা বেলা ১১টার পর ১৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড আবার বসবো। রিপোর্টটি নিয়ে আমাদের মধ্যে পর্যালোচনা ও এ বিষয়ে করণীয় নিয়ে আলোচনা হবে’।

উল্লেখ্য, মুক্তামনির রোগটি নিয়ে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বোর্ড মিটিং করেন সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা। এবং সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা পরবর্তীতে জানিয়েছিল এ রোগটি ভালো হবার নয় ও সেটি অস্ত্রোপচার করার মতোও নয়। এ পর্যবেক্ষণ জানার পর গত ০২ আগস্ট ১৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের সভায় ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সকল ধরনের সর্তকতা অবলম্বন করে বায়োপসি করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা।


প্রাথমিকভাবে অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। জ্ঞান ফিরে এসেছে মুক্তামণির। তাঁকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে।

 

মুক্তামণির অস্ত্রোপচারে অংশ নেওয়া চিকিৎসকবৃন্দ


অস্ত্রোপচার শেষে দুপুর পৌনে ১২টায় ব্রিফিং করেন সফলকাম চিকিৎসকেরা।

ব্রিফিংয়ে মেডিকেল টিমের ২০ থেকে ২২ জন উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষ করে বার্ন ইউনিটের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আবুল কালাম অস্ত্রোপচারের নেতৃত্বে ছিলেন।

 

তিনি বলেন, ডান হাত অক্ষত রাখা হয়েছে। অস্ত্রোপচার প্রাথমিকভাবে সফল। তবে তাঁকে ঝুঁকিমুক্ত বলা যাবে না। কারণ, তার ফুসফুসের সমস্যাসহ অন্যান্য জটিলতা রয়েছে। টিউমার শরীরের অনেক জায়গায় ছড়িয়েছিল। হাতের অংশটুকু বেশি খারাপ অবস্থায় ছিল। ওটা আজ অপসারণ করা হয়েছে। অপসারিত টিউমারটির ওজন প্রায় তিন কেজি।

 

মুক্তামণির শরীর থেকে সব টিউমার সরাতে আরও পাঁচ থেকে ছয়টি অস্ত্রোপচার লাগবে বলে জানান অধ্যাপক আবুল কালাম। ওর শারীরিক অবস্থা বুঝে পরবর্তী অস্ত্রোপচারের সময় ঠিক করা হবে। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে মুক্তামণিকে। যেদিন ও বাড়িতে ফিরতে পারবে, সেদিন আমরা বলতে পারব ও ঝুঁকিমুক্ত।’

ব্রিফিংয়ে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন বলেন, এই সফলতা সম্মিলিত উদ্যোগ। সবার প্রচেষ্টার ফলে আজকে প্রাথমিকভাবে সফল হওয়া গেছে।

ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক চিকিৎসক জুলফিকার লেনিন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এখন পর্যন্ত যখন যা লেগেছে, সব করা হয়েছে। এই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

 

 

মুক্তামনির বাবা মুদি দোকানি ইব্রাহীম হোসেন জানান, জন্মের দেড় বছর পর একটি ছোট মার্বেলের মতো গোটা দেখা দেয়। এরপর থেকে সেটি বাড়তে থাকে। এ রোগে তার ডান হাত ফুলে যায়। শরীরের অসহ্য ব্যথা ও যন্ত্রণায় মুক্তামনি বসতেও পারে না। এরপর হাতে পচন ধরে। হাতের সঙ্গে বুকের একাংশেও ছড়িয়ে পড়েছে রোগটি। দীর্ঘ নয় বছরেও মুক্তার রোগ ধরতে পারেননি চিকিৎসকরা। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে মুক্তামনির চিকিৎসা বাংলাদেশেই চলছে।




রক্তনালির টিউমারে আক্রান্ত মুক্তামণি এখন সবার কাছে পরিচিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। সব ধরনের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।

সাতক্ষীরায় জন্মের দেড় বছর বয়স থেকে মুক্তামণির ডান হাতের সমস্যার শুরু। প্রথমে হাতে টিউমারের মতো হয়। ছয় বছর বয়স পর্যন্ত টিউমারটি তেমন বড় হয়নি। কিন্তু পরে তার ডান হাতটি ফুলে অনেকটা কোলবালিশের মতো হয়ে যায়। সে বিছানাবন্দী হয়ে পড়ে। মুক্তামণির রোগ নিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। গত ১১ জুলাই মুক্তামণিকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে।

আপনার মতামত দিন:


নির্বাচন এর জনপ্রিয়